somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনার প্রাদুর্ভাবে দিনগুলিতে মাকে নিয়ে জরির ভাবনা

৩০ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জোহরা সবসময় আচার আচরনে একজন চঞ্চল উচ্ছল প্রকৃতির মানুষ।শত দুঃখের মাঝে তার মুখে সর্বদা হাসি লেগে থাকে যেন।কোন দুঃখই তাকে মনে হয় সেভাবে স্পর্শ করতে পারে না।একসময় স্বামী সন্তান নিয়ে ভরা এক সংসার ছিলো তার।হাসি আনন্দ গান স্বপ্ন সোহাগ সবই ছিলো সেখানে।কোন কিছুর কমতি ছিলো না ।

যদিও প্রায় সব পরিবারের মতো ই শ্বাশুড়ীর সাথে ছিলো না তার বনিবনা তবু ও স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক খুব একটা খারাপ ছিলোনা।বউ শ্বাশুড়ীর যুদ্ধে বিভিন্ন কলাকৌশল প্রয়োগ করে সে বেশ দাপটের সাথে টিকে ছিলো সংসারে।কিন্তু দিন সবার সমান যায় না। সুখের পরে দুঃখ আসে। জীবনের পালাবদলের খেলায় আসিফ সাহেব এর হঠাৎ পরিবর্তন আসে , সংসারের প্রতি তার টান কমে আসে একসময়।সময় মতো সে বাড়ি ফেরে না। কারো সাথে সে ঠিকমতো কথা বলে না। যাও বা বাড়িতে আসে যা না তাই করে সে। সবার সাথেই উল্টা পাল্টা আচরন শুরু করে সে।

দু একবার গায়ে পর্যন্ত হাত তোলে জোহরার।এমন বিপরীত আচরণে ঘাবড়ে যায় জোহরা।প্রথম প্রথম সে কারণ ধরতে পারে না তারপর কাছের একজনের বুদ্ধিতে খোঁজ লাগায় সে, খোঁজ খবর করে জোহরা জানতে পারে যে তার স্বামী অন্য একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছে ।মেয়েটি অল্প বয়সী এবং সুন্দরী, এই খবরে জোহরার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। প্রথমে সে খবরটা ভুয়া ভেবে উড়িয়ে দিতে চায় ।বিশ্বাসই করতে চায় না। কিন্তু তাতে করে সত্য বদলায় না।

প্রবল আত্মবিশ্বাসে জোহরার বারবার মনে হতে লাগলো কোথাও হয়তো তার ভুল হচ্ছে। স্ত্রী সন্তান অন্তপ্রাণ আসিফ এমনটা করতেই পারে না।কিন্তু দিনে দিনে যখন সব পরিষ্কার হয়ে আসে সেই ভুয়া খবরই সত্য বলে প্রকাশিত হয়, তখন সংসারের অশান্তি অন্য এক মাত্রা পায় অচিরেই ।আর জোহরা খুব বেশি রকমের ভেঙে পড়ে।

আসলে এই সংসারটাই তার কাছে সব। এদিক ওদিক তার কোথাও আর যাওয়ার জায়গা নেই।কি হবে এখন? বাবা আছে কিন্তু সংসারে মা নেই।বাবা আবার বিয়ে করে সংসারী হয়েছে।সেই সংসারে তার অন্য ছোট ছোট ভাই বোনগুলো অসহায় হয়ে টিকে আছে সে খবর তার কাছে অজানা নয়। এইরকম পরিবেশে তার দুসন্তান সহ তার ফিরে যাবার প্রশ্নই ওঠেনা ।পৃথিবীটা তার কাছে হঠাৎ অন্ধকার হয়ে আসে।

তার এমন দুরবস্থা দেখে শ্বাশুড়ী যে খুব খুশি তা বোঝা যায় স্পষ্ট।তার মুচকি মুচকি হাসি, টিকা টিপ্পনী, বাস্তুচ্যুত হবার ভয়ে জোহরা সব হজম করতে লাগে চুপচাপ। কি বা করার আছে তার।দুটো ছেলে মেয়ে নিয়ে রাস্তায় দাড়াতে তো সে পারবে না।লেখাপড়াও সেভাবে সে শেখেনি।শেখেনি বললে ভুল হবে। জোহরার লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিলো। তার বরাবর শখ ছিলো লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাড়াবে।এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে না কিছুতেই কিন্তু আসিফের মা পিছনে ফেউ হয়ে লেগে বিয়েটা করিয়েই ছাড়লো।আর চাহিদা ফুরাতেই তাকে এখন রাস্তার পথ দেখিয়ে দিতে দ্বিধা করছে না।

আসলে সুন্দর রুপ হচ্ছে অনেক সময় মেয়েদের জন্যে কাল হয়ে দাড়ায়।সেই ব্যাপারটা যে কতখানি সত্য তা এখন জোহরা হাড়েহাড়ে উপলব্ধি করছে।
তারপর অনেক ঝড় বয়ে গেলো তার জীবনে। শেষ আশ্রয় বলতে বাবার বাড়িতে ই তাকে উঠতে হলো একরকম বাধ্য হয়ে। কি বা করার ছিলো তার। এরকম কোন কঠিন পরিস্থিতিতে তাকে পড়তে হবে।সেটা সে কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি।

সেই সংসারে অজস্র অপমান হজম করে দিন অতিবাহিত হলো কিন্তু সুখের মুখ সে আর কোন দিনই দেখলো না। এর মধ্যে আরো বড় আঘাত এলো তার জীবনে।একমাত্র ছেলেটি তার স্কুলের ফিরতি পথে দূর্ঘটনায় মারা গেলো।সেই থেকে জোহরা বেগম আর হাসে না।

কারো সাথে আর তেমন কথাও বলে না। পৃথিবীর সবটুকু তার যেনো দেখা হয়ে গেছে।সে তো কবেই মরে যেতো শুধু মাত্র একমাত্র মেয়ে জরির জন্যই বেঁচে আছে জিন্দা লাশ হয়ে। সুখ সাধ স্বপ্ন আশা বলতে জরিই এখন সব। বাপের সংসারের ঠাঁই ও একসময় ফুরিয়ে এলো জোহরার। নিজের ভাই সৎভাই সবার যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ভাগ্য ভালো ততদিনে জরি পড়াশোনা করতে করতে সরকারী প্রাইমারী ইস্কুলের একটা চাকরী জুটিয়ে ফেলল নিজের যোগ্যতায়।

এবং খুব শিঘ্রি তার একটা ভালো বিয়ে হয়ে গেলো।এর অবশ্য একটা কারণ আছে কারণ বাঙালি সমাজে বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো মেয়েদের খুব একটা ভালো বিয়ে হয় না। জরির হয়েছে।কারণ সে অতি রুপবতী একটা মেয়ে তার উপরে সুশিক্ষিত এবং চাকুরে।

জোহরার ও দিন ফিরে আসে। সে সরাসরি জরির কাছে না থাকলেও জরির বেতনের টাকায় কাছাকাছি এক ফ্লাটে এক রুম নিয়ে একা বাস করতে শুরু করে।জরি তাকে নিয়মিত দেখা শোনা করে হাজার কাজের ফাকে।
যদিও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ব্যপারটাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না।তাতে জরির কিছুই যায় আসে না।মা ই তার কাছে সব।সে সারাজীবন দেখেছে মা তাদের জন্য কি পরিমান অপমান গঞ্জনা সহ্য করেছে, কিভাবে নিজের বাপের বাড়িতে দাসীর মতো খেটেছে সারা দিন রাত।

জোহরা জীবন এই পর্যায়ে এসে সব কিছু ভালোই চলছিলো একরকম।
জীবনে কারো পথই একেবারে মসৃণ নয় কখনোই । একথাটা জরি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে জানে। আর বউ এর মা কে কোন পরিবারই মেনে নেবে না সে যতই সোনার ডিম পাড়া রাঁজহাস হোক না কেন। সে কথা সে ভালো করেই জানে।তাতে সে তাদের দোষ ও দেখে না।তার স্বামীও নিপাট ভদ্রলোক।সে বেশ সুখী বলতে গেলে।

তবে আজকাল জরির মায়ের জন্য খুব চিন্তা হয়।চিন্তা যে শুধু মায়ের জন্য হয় তা কিন্তু নয়, সবার জন্যও হয়, এমনকি নিজের জন্যও। করেনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব সারা বিশ্ব ব্যাপি।তার ঢেউ বাংলাদেশে ও এসে লেগেছে। কি যে হবে।

প্রথমে স্কুল কলেজ বন্ধ হলো তারপর অঘোষিত লকডাউন। নানা গুজব সত্য মিথ্যার ভেদাভেদ করা একরকম কঠিন একটা ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার বাংলাদেশে গত দুদিন কোন করোনা ভাইরাসের রুগি নেই। এটা কি করে সম্ভব সেটা কিছুতেই মেলোতে পারে না জরি, অন্য অনেকের মতো।এক্ষেত্রে মায়ের জন্য তার চিন্তাটা আরো বেশি প্রকট হয়।

মা তো শ্বাসকষ্টের রোগী, মা কি পাবে তার সুচিকিৎসা যদি এসময়ে কোন উল্টাপাল্ট হয়ে যায়। পত্রিকায় ,ফেসবুকে তো কত লোমহর্ষক খবর আসছে।পড়তেই তার গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।কোনটা গুজব কোনটা সত্যি কে জানে! কি আছে ভবিষ্যত তাই বা কে জানে।আল্লাহ যেন মাফ করে সেটাই সবার প্রার্থনা। একমাত্র ভবিষ্যতই ভালো বলতে পারবে সামনে কি আছে?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×