সতর্কতাঃ প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য
~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রম্য গল্পঃ লুঙ্গী সমাচার
~~~~~~~~~~~~~~
সকাল সকাল বাড়িতে হা হা হি হি তুফান আর তুমুল হৈচৈ এ আমার আরামের ঘুম হারাম হয়ে গেল।
মহা বিরক্তি নিয়ে উঠতে যাবো তখনি বুঝলাম বিব্রতকর অবস্থায় আছি। কি যেন একটা নেই।
তো বিছানা থেকেই হাঁক দিলাম, কই গো শুনছো? কি হলো এত হল্লা পাল্লা কিসের? চেঁচামেচি কিসের। আমার ঘুমের তো বারোটা বেজে গেল।
ওমা বলতে না বলতে দেখি সেই মুহুর্তে আমার রুমে ছোট শ্যালিকা হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল।
-আরে দুলাভাই লকডাউন সেলিব্রেট করতে এলাম আর আপনি এখনো ঘুমে, সো স্যাড।
- কি করবো রোজা রমজানের মাস, সেহেরি খেয়ে একটু ঘুমিয়ে ছিলাম।
-ওঠেন ওঠেন চলেন ছাদে যাই। আপনার সাথে কথা আছে।বলেই সে আমায় জড়িয়ে থাকা বিছানার চাদর ধরে টান মারতে গেল অমনি আমি চিল চিৎকার দিলাম।
আমার চিৎকার শুনে সে বেশ খানিকটা হকচকিয়ে গেল। থতমত খেয়ে বড় বড় চোখ মেলে চেয়ে রইলে।
আসল ঘটনা হলো আমি বিছানা ছেড়ে উঠবো কি করে চাদরের নিচ দিয়ে হাতড়ে হাতড়ে আমার লুঙ্গী খুঁজে পাচ্ছি না। ততক্ষণে গিন্নিও হাজির।
আমি গিন্নি কে ইশারা করতে সেও ঠোঁট বাকিয়ে ইশারা করল।
আমি একটা চোখ টিপ মেরে মুখভঙ্গিতে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম আমার লুঙ্গী পাচ্ছি না। উল্টো সে আরও ভুল বুঝে আমায় ভৎসনার করে উঠলো,
- রোজা রমজানের দিনে কী লাজ শরমের মাথা খেয়েছো? চোখ টিপি মারো!
বেহায়া বেশরম পুরুষ মানুষ কোথাকার।
আমি নিরুপায় হয়ে বললাম,
- আরে মাথা গরম করো কেন? আমার লুঙ্গী তো পাই না।
-তোমার লুঙ্গী তো হুইল পাউডারে ভিজায়ে দিছি।রোজার মাসে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা জরুরী। বুঝলা।
শালিকার সাথে ছাদে ঘুরতে যাওয়ার এমন সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে আমি অসহায় হয়ে বললাম,
- তাহলে আমি কি পরবো?
আমার শালিকাটি যেমন রসিক তেমন চটুল,
- কি ব্যাপার দুলাভাই রাতে বুঝি জন্মদিনের পোশাক পরে ঘুমান। খুব রোমান্টিক তো আপনি হি হি হি
তাড়াতাড়ি আমার বউ বলে উঠল
- আরে না না ওসব কিছু না তোর দুলাভাইয়ের একটা সমস্যা হলো সে রাতে লুঙ্গী পরে ঘুমায় ঠিকই মাঝরাত্তিরে আর সেই লুঙ্গীর খোঁজ থাকে না।আজ সকালে ঘর ঝাড় দিতে এসে দেখি তোর দুলাভাইয়ের লুঙ্গী খাটের নিচে গড়াগড়ি খায়। ভাবলাম লকডাউনে কাজের লোক তো আর আসবে না তো কাপড়চোপড় আমাকেই কাঁচতে হবে তো ভিজিয়ে দিলাম। আর ঘুম থেকে উঠলে বলবো চাদরটা জড়িয়ে নাও।
-চাদর??????
শালিকার লজ্জা বুঝি এবার ফিরে এলো। সে মুখে কাপড় চাপা দিয়ে এক দৌড়ে পাশের রুমে চলে গেল। বেচারার লজ্জা পাওয়া দেখে আমারই লজ্জা পেয়ে গেল।
কি আর করা আমি বিছানার চাদরটাকে জড়িয়ে ব্যলকনিতে এসে আরাম করে পায়ের উপর পা দিয়ে বসলাম।
এখনো গরমটা তেমন পড়েনি। হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আহ শান্তি!
আমার ফ্ল্যাটের ঠিক মুখোমুখি রহমান সাহেবের ফ্ল্যাট। উনি আবার আমার অফিসের স্টাফ। যদিও আমার জুনিয়র তবুও হ্যাস্যরস,মজা আড্ডা সবই চলে তার সাথে অন্য দিন তিনি চা বা কফি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন আজ মনে হয় রোজা। কেমন যেন বিরস মুখে বসে আছেন। মনে হচ্ছে এখনই তার পানি পিপাসা পেয়েছে। হঠাৎ যেন আমায় খেয়াল করলো,এমন ভাবে বললেন
-আরে হাসান ভাই এটা আবার কোন মডেলের লুঙ্গী। আগে পরেন নি তো নতুন কিনেছেন বুঝি? বড় বড় তাজা গোলাপের মাঝে বেশ ফুটে আছে ভ্রমর কালো সুঁচ। দারুণ কম্বিনেশন।
- আমি বেশ ডাটের সাথে পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে ভাব নিলাম।
-হ্যাঁ এটা তো নিউ মার্কেট থেকে কেনা।কিছুদিন আগে।
বিদেশি প্রোডাক্ট।
- বিদেশি না হয়ে যায়ই না সে তো বুঝতেই পারছি।আর যাই বলেন সাইজটা কিন্তু খানদানি। তিনি কেন যেন আমারদিকে গভীরভাবে লক্ষ করছেন। এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন কে জানে তবুও আমি হো হো করে হেসে সঙ্গ দিলাম। প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে।
হঠাৎ রহমান সাহেব বললেন
- তা আপনার লুঙ্গিটা সেলাই করেননি বুঝি? দিন দুনিয়া তো সব আলগা পালগা হয়ে গেল গা হা হা হা।ঢাকেন ঢাকেন।হা হা হা।
মুহুর্তে আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। আমার গা মাথা ভো করে চক্কর উঠলো দ্রুত ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম। হায় হায় মান ইজ্জত আর কিছুই রইলো না।
ওদিকে রহমান সাহেবের গলা শোনা যাচ্ছে,
- আমি কিন্তু কিছু দেখি নাই হো হো হো
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক৷
গল্পের সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:১৬