somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইসিয়াক
একান্ত ব্যক্তিগত কারণে ব্লগে আর পোস্ট দেওয়া হবে না। আপাতত শুধু ব্লগ পড়বো। বিশেষ করে পুরানো পোস্টগুলো। কোন পোস্টে মন্তব্য করবো না বলে ঠিক করেছি। আমি সামহোয়্যারইন ব্লগে আছি এবং থাকবো। ভালো আছি। ভালো থাকুন সকলে।

গল্পঃ আপনা মাংসে হরিণা বৈরী

০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(১)
মাগরিবের আজান কানে যেতেই জুলেখার শরীর মন জুড়ে একটা অন্য রকম অনুভূতিতে ছেয়ে গেল। কেমন যেন ভয় মিশ্রিত শূন্যতা অনুভব করছে সে। অদ্ভুত এক আধাঁর তার পৃথিবীতে নেমে আসছে ধীরে ধীরে। তাকে জড়িয়ে ধরছে আষ্টেপৃষ্টে। এই অনুভূতিটা সম্পূর্ণ নতুন এর আগে কখনও এরকম অভিজ্ঞতা হয়নি তার।বুকের মধ্যে কেমন হাহাকারে ভরে উঠলো। হারানোর বেদনায় অসীম শূন্যতায় ছেয়ে যাচ্ছে মন! এটা কি হলো! কেন এমন হলো?
হায় আল্লাহ! দিনটা শেষ হয়ে গেল।
শেষ হয়ে গেল সব এত তাড়াতাড়ি! সুতীব্র আক্ষেপ!
আজকের দিনটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে জুলেখার যত স্বপ্ন আশা আকাঙ্খা ছিল রাব্বি আর তরুকে নিয়ে তার নির্মম সমাধি হলো যেন।চোখে পানি চলে আসছে বারবার।কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না যে। বাঁধ ভাঙা সে জল।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জুলেখা চোখ মুছলো। নাহ! তাকে ভেঙে পড়লে চলবে না।লড়াই তো কেবল শুরু। এ দীর্ঘ লড়াইয়ে তাকে জিততে হবে। হবেই। সে জানে শেষ অবধি সে জিতবে। এই যে সাংসারিক অধিকার আদায়ের লড়াই এ লড়াই তার ইচ্ছাকৃত লড়াই নয়। সে না চাইতে জড়িয়ে গেছে রাব্বির সাথে বৈবাহিক সম্পর্কের সূত্র ধরে। জীবনের অঙ্ক কখনও কখনও জটিল হয়। কি করে কি করে যেন জড়িয়ে যেতে হয় নানান জটিল থেকে জটিলতর অধ্যায়ে।
তরুর ও কি তার মত অনুভূতি হচ্ছে? ভয় মিশ্রিত শূন্যতা বোধ ঘিরে ধরছে তাকে? বাবার জন্য খারাপ লাগছে কি ওর? ও কি তেমন করে কিছু অনুভব করতে পারছে? মনে হয় না পারছে, মেয়েটি এখন এক মনে পুতুল খেলছে।সারাক্ষণ ওর খেলার সঙ্গী পুতুল। কতটুকই বা বয়স ওর? সবে সাত এ পড়েছে। মেয়েটা এতিম হয়ে যাবে। কি ই বা বোঝে সে? তবে তার বাবার যে ফাঁসি হবে এটা সে এ বাড়িতে আসার পরে কিছুটা বুঝতে পেরেছে। এ নিয়ে বার কয়েক প্রশ্ন ও করেছে
- মা ফাঁসি কি?
-জানি না।
-ফাঁসি হলে কি হয়?
একটা শিশুর কানের কাছে একই কথা বারবার বললে জানার আগ্রহ তো তৈরি হতে পারে তার শিশু মনে। এতদিন যদিও বিশেষ দক্ষতায় সবকিছু মেয়ের কাছ থেকে আড়ালে ই রেখেছিল জুলেখা ।দীর্ঘ সময়ের কোট কাছারি নানা ঝামেলার দিনগুলোতে সে একাই এসেছে কোর্টে। অসম লড়াইটা সে একাই চালিয়েছে ,মনোবল হারায়নি কখনও।
জুলেখার বাবা দুঃখ করে কথায় কথায় একদিন বলেছিলেন,
-আল্লাহ তোরে কি জীবন দিল রে মা।আমার যে চিন্তা শেষ হয় না।
-বাবা তুমি খামাখা চিন্তা কর।
- মারে চিন্তা করি কি আর সাধে, দুনিয়াটা খুব কঠিন জায়গা। তোর লড়াইটাও কঠিন। আমি তোর অনুভূতিটা বুঝি কিন্তু কিছু ই করার নেই। সত্যি ঘটনা নিয়ে মামলায় বেঁচে ফিরে আসা যায় কিন্তু মিথ্যা মামলা বড় জটিল জিনিস মা।এর হাত থেকে মুক্তি মেলে না সহজে।আসামী যদি ভুলের ফাঁদে পা দেয় তো ফেঁসে যেতে হয় চিরদিনের জন্য,তার কোন মুক্তি নেই ।এখানে যে সব কিছু থাকে পরিকল্পনা মত সাজানো।আইনের ফাঁক ফোকড় থাকে বন্ধ। আমার মনে হয় না তুই রাব্বিকে বাঁচাতে পারবি । তুই এই লড়াইয়ে হেরে যাবি,মা। এর মুল কারণ যে বিশাল সম্পত্তি তুই কি সেটা ধরতে পারিস নাই।
-বাবা আমার সম্পত্তি তো চাই না ।আমার ন্যায় বিচার চাই। আমি ওদের বাড়ি থেকেও কোন স্বীকৃতি চাই না। আমার চাকরির ইনকামে আমাদের ভালো চলে যায়। রাব্বি ও সম্পত্তির উপর লোভ নেই। নির্লোভ মানুষ একটা এত সাধাসিধা তবুও ওরা তরুর বাপকে বাঁচতে দিতে চায় না। অথচ ওরটা খেয়ে পরে ওরা মানুষ। ওর সম্পদের উপর চড়ে ওরা ছড়ি ঘোরায় অহর্নিশ।
-আপনা মাংসে হরিণা বৈরী। তারপরও দেখ চেষ্টা করে,ওদের সাথে তুই না হয় কথা বল ।
-বলার চেষ্টা করেছি বাবা, ওরা ওকে পছন্দই করে না আর আমাকে দেখলেও ওদের রাগ হয়।এড়িয়ে চলে। সেক্ষেত্রে কথা বলবো কি। আর এই মামলাতো ওদেরই সাজানো।
-সব সম্পত্তি ব্যবসা বানিজ্য কি রাব্বির নামে?
- হ্যাঁ বাবা, রাব্বির বাবা মায়ের ছিল পছন্দের বিয়ে ওর দাদা ওদের বিয়ে মেনে নেননি কখনো।ছেলের ওপর ভীষণ অসন্তুুষ্ট ছিলেন তবে মুত্যুর আগে কি মনে করে একমাত্র নাতি রাব্বিকে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছিলেন ছেলেকে বঞ্চিত করে, এটাও নিজের ছেলেকে সুক্ষ্ম অপমান করা।যাহোক এর মধ্যে রাব্বির নিজের মা এক্সিডেন্টে মারা যাবার পর বছর ঘুরতে না ঘুরতে আবার বিয়ে করে রাব্বির বাবা। সেই বউ ও তার সন্তানরা সময়ের সাথে সাথে শত্রু হয়ে ওঠে রাব্বির যখন জানতে ও বুঝতে পারে জমি জায়গা বাড়ি সব রাব্বির নামে।
২)
-খাও আরেকটু ভাত খাও খিদে লাগবে তো। আমি চলে গেলে এরা তোমাকে খেতে দেবে না কিন্তু । না খাইয়ে মারবে। খাও সোনা মানিক আমার সামনে বসে খাও।
মেয়ের কথায় ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে জুলেখা। মেয়েটা এক মনে খেলছে। খেলুক, নিজের মনে খেলুক । জীবনের জটিল দিকগুলো সম্পর্কে এখনই তার না জানলেও চলবে।
জুলেখা বাইরে বাগানের দিকে তাকালো।কিছু ভাববে না ভেবেও আবার ভাবনাগুলো ফিরে আসছে।কি যে জ্বালা হলো ভাবনা জগতটাই তাকে ঘিরে ধরছে বারবার।
রাব্বির সাথে আজ শেষ বিদায় নেবার দিন ছিল।কি কঠিন জীবন ,লোকটা জানলো না এই শেষ দেখা তাদের আর কোনদিন এত ভালো মানুষটার সাথে মন চাইলেও দেখা হবে না। কথা হবে না কোন। জেল গেটে রাব্বির সাথে দেখা করার সময় আজই প্রথম মেয়েকে সাথে করে নিয়ে গেছে জুলেখা। জেলগেটে নিয়ে যাবার আগে সংগত কারণেই জেলখানা এবং সেখানকার পরিবেশ ও তার বাবার বন্দী জীবন সম্পর্কে মেয়েকে নিজের মত করে কিছু বুঝিয়েছিল সে। তরুও বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিয়েছিল মায়ের সকল কথা ছোট মনের যুক্তিতে সব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে হয়তো ঠিক ঠাক। না হলে সে আরও প্রশ্ন করতো।কিন্তু এ বাড়িতে এসে প্রয়োজনীয় গোপনীয়তা টুকু আর অবশিষ্ট রইলো না মেয়ের কাছে।
জেল গেটে যাবার উদ্দেশ্যে গত রাতে এ বাড়িতে এসে উঠেছে তারা অর্থাৎ মা ও মেয়ে।অবশ্যই জোবাইদা বেগমের ডাকে। এর আগে কোনদিন এমন আমন্ত্রণ পায়নি জুলেখা এ বাড়ি থেকে। ক্ষীন আশায় বুক যে একেবারে বাঁধেনি জুলেখা তা কিন্তু নয়।সে এখানে আসার আগে মনে মনে ভেবেছিল এইবারই তো প্রথম নিশ্চয় ভালো কিছু হবে। কিন্তু সব যে শেষ হয়ে গেছে এই বোধ জুলেখার মধ্যে কাজ করছে না। মানসিক সমস্যাধেখা দিয়েছে তার চিন্তা চেতনায়। বয়স্ক মানুষটা ডাকছে নিজের মত বদলাতেও তো পারে। আসলে মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে অলীক স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে কখনও কখনও বিপদের সময় খড়কুটোকে আঁকড়ে ধরে কিন্তু এদের আচরণ দেখে এখন মনে হচ্ছে এখানে না আসাই ভালো ছিল। অহেতুক অপমান হজম করতে হলো কাজের কাজ কিছু হলো না।
জুলেখার এ শহরে থাকার অন্য কোন জায়গা নেই । এর আগে সেই একই কারনে ফোনে উকিলের সাথে জরুরি কথা ও কাজ সেরে মামলার দিন ফার্স্ট ট্রিপে সে কোর্ট এসে পৌঁছাতো। কিন্তু গত পরশু ডি আই জি প্রিজন সাহেবের রেজিস্ট্রার চিঠি পাওয়ার পর চিঠিতে দেওয়া সময় মোতাবেক এবার আর ফার্স্ট ট্রিপে শহরে এলে রাব্বির সাথে শেষ দেখা হতো না। সকাল দশটায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যেতে। তাই একদিন আগেই আসা।এখানে আশ্রয় নেবার এটাও একটা কারণ বটে। আগের দিন এলেও এখনও তার সাথে এ বাড়ির কারও দেখা সাক্ষাৎ হয়নি তেমনভাবে। তার জায়গা হয়েছে সার্ভেন্ট কোয়াটারের পাশে। খাওয়া দাওয়াও সেরকম জুটেনি। জুলেখা অবশ্য মেয়ে নিয়ে হোটেল থেকে খেয়ে এসেছে। এ বাড়ির খাবার তার গলা দিয়ে নামবেও না।সে নিজে একটা সরকারি প্রাইমারী স্কুলে চাকরি করে। নিজে যেহেতু স্বাবলম্বী তাই অন্যের গলগ্রহ হবার প্রশ্নই আসে না তার। এক্ষেত্রে সে একটু অহংকারী বটে।
এ বাড়িতে গতকাল পৌঁছে দেখা শোনার মধ্যে তেমন ভাবে শুধু টায়রার সাথে দেখা হয়েছে বলা যায় । টায়রা রাব্বির ছোটবোন। দেভে শুনে মনে হচ্ছে সে এ বাড়িতে তার মায়ের আজ্ঞা বহ। খুশি মনে সে জুলেখা আর তার মায়ের মধ্যে কথা চালাচালি করছে প্রয়োজন মত।
সকালে উঠেই জেল গেটে সে ও তরু গিয়েছিল রাব্বির সাথে দেখা করতে যদিও সাত জন দেখা করার অনুমতি ছিল। কিন্তু একজন খুনির সাথে দেখা করতে রাব্বির পরিবারের কেউ রাজী হয়নি। এমনিতে রাব্বির কর্মকান্ডে সিকদার পরিবারের অনেক অসম্মান হয়েছে নাকি ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে তাদের রাব্বির সামনে দাড়ানোর মুখ নেই যে।রাব্বি এবং জুলেখা দুজনেই তা ভালোই জানে। নিরাপরাধ একটা মানুষকে সম্পত্তির লোভে এভাবে অপরাধী সাজিয়ে রাষ্ট্রীয় আইন কানুনের সুযোগ নিয়ে তাকে ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত পৌছে দেওয়া হয়েছে সুক্ষ্ণ কৌশলে। এ অন্যায়ের বিচার একদিন না একদিন হবেই।আজ না হোক কাল। জুলেখা মনে শুধু এটুকুই বিশ্বাস ।এ বিশ্বাসের বলে ই সে লড়াই চালিয়ে গেছে।
জেল গেটে পৌছানোর পর মন ও মানসিকতার দিক দিয়ে ক্লান্ত বিধস্ত ছিল জুলেখা।সারারাত না ঘুমানোর জের তার চোখে মুখে তবু রাব্বির সামনে নিঁখুত অভিনয় করতে হয়েছে আজ।কান্না গুলো লুকাতে হয়েছে হাসির আড়ালে। অভয় বা স্বান্তনার বানী শোনাবার মত কেউ ছিল না তার পাশে সে সময় । সে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে বলেছে পারবে তুমি জুলেখা তুমি পারবে। তোমার ভরসাতো তুমিই। জীবনে এমন কঠিন সময় যেন কারও না আসে জুলেখা মনে মনে বলেছে আর দীর্ঘশ্বাস চেপেছে।
জেল গেট থেকে ফেরার পর পর দেখা করতে এসেছিল মিসেস জোবাইদা বেগম। তার হাবভাব চলাফেরার ভঙ্গিতে চরম উদ্বত্ত ভাব। অকারণে অনেকটা সময় ধরে অনেক অনেক বেশি কথা শুনিয়ে গেল সে।অভিযোগ আর অভিযোগ। জুলেখার অবশ্য কথার খোঁচা হজম করার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে,সে প্রতি উত্তর ও পয়েন্টে পয়েন্টে দিতে পারে কিছু আজকের দিনে কারও সাথে তর্কাতর্কি করতে ইচ্ছে হলো না তার।তবে কেন জানি মনের মধ্যে অস্হিরতা কাজ করছে আজ কোন কথাই সহ্য হচ্ছে না কিন্তু মুখে কিছু না বললেও কি এক জ্বলুনিতে অন্তরটা জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে । সেটা ভালো কথা হোক বা মন্দ। বুকের মধ্যে শত শত অভিমান মেশানো মেঘ এসে জড়ো হচ্ছে কোথা থেকে যেন। যখন তখন বরষার জল হয়ে ঝরে পড়বে।তবে এ বাড়িতে অবস্থান কালে সে ভেঙে পড়তে রাজী নয়।যে বাড়িতে সে কোনদিন জায়গা বা মর্যাদা পায়নি সে বাড়িতে আজকে এই পরিস্থতিতে কোন সমাদর পাবে সে আশায় গুড়ে বালি সেটা সে ভালো করে জানে। এরা তাকে নিশ্চয় নিজের স্বার্থে ডেকেছে। বয়স্ক কেউ ডাকলে শুনতে হয়।তাদের অমান্য করতে নেই। জুলেখা বাবা বলতেন।
লোকটার শেষ কথাগুলো বারবার কাঁটার মত বিঁধছে জুলেখার মনের মাঝে।
-জুলেখা?
-বল।
- আমাদের মেয়েটা বড় হযে গেছে কত তাড়তাড়ি তাই না?
-হ্যাঁ সময় কি আর বসে থাকে আর মেয়েরা হয় লতার মত। প্রতি মুহুর্তে বেড়ে ওঠে।
- একবার মুক্ত হই আমরা চলে যাবো অনেক দুরে।পাহাড়ের উপর আমাদের ছোট্ট একটা ঘর হবে। প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে বাস করবো আমরা তিনজন। কোন দুঃখই আর তখন আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না।আমরা অল্পতে সন্তুষ্ট হবো।হাসি গানে ভরাবো বাকি জীবন।
-হঠাৎ এই সব কথা?
-মনে এলো তাই বললাম। আমার পুরো ভরসা আছে তোমার উপর জুলেখা।তুমি আমাকে মুক্ত করতে পারবে।
-উপরে আল্লাহ আর নিচে নিজের উপর ভরসা রাখো।অন্যের উপর ভরসা করো না। নিজের চেয়ে আপন কেউ নেই পৃথিবীতে।
-তুমি তো আমার নিজের ।
-অন্য কথা বল আজ আমার মনটা ভালো নেই। এসব শুনতে ভালো লাগছে না।
-কি হয়েছে জুলেখা? তুমি কাঁদছো কেন? তুমি তো কাঁদো না কখনও।
-আমার কি কাঁদতে নেই। আমি কি রোবট? পেটে ব্যাথা করছে তাই কাঁদছি।...
কোন কোন মানুষের স্বপ্নগুলো স্বপ্নই রয়ে যায়। তা বুঝি পুরণ হবার নয় কোনদিন কোন কালে।জীবনটা কেন এরকম?
তরু বারান্দায় এক কোনে খেলা করছে এখন। এখন চারদিকে প্রায়,অন্ধকার।এশার ওয়াক্ত চলছে জুলেখার নামাজ শেষে সে উঠে এলো।
মন কেমন করা সুরে মাকে ডাকলো
-মা!
জুলেখা তখনও নামাজের পাটিতে বসে। মোনাজাতে দুহাত তুলে মনে মনে প্রার্থনা তার
- হে রহিম রহমান। তুমি দয়া কর।তুমি তো সব পারো।তুমি তোমার কুদরতের শান দেখাও হে দয়াময়!
তরু আবার মাকে ডাকে
-ওমা
জুলেখা আনমনে অস্ফুট স্বরে বলে,
-কি মা?
-আব্বার কি আজই ফাঁসি হবে?
-হু
-মা ,আমরা আব্বাকে আর কোনদিন দেখতে পাবো না।
--না।
-কেন মা?আব্বাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে মা।
জুলেখার কি যে হলো সে ঠাসঠাস করে দুটো চড় মেরে দিয়ে চিল্লিয়ে উঠে বলল।
-এক কথা বলো কেন বারবার।এতো কথা কোথায় পাও। কেন একটু মুখ বন্ধ রাখা যায় না। কেন এত বায়না তোমার?
তরু আর কোন কথা বলে না সে ঘ্যানঘ্যান করে কাঁদতে শুরু করে
জুলেখার চেঁচামেচি তরুর কান্না আওয়াজে বারান্দায় এসে উঁকি দেয় টায়রা।টায়রা বাগান বিলাস বাড়ির আদুরে ছোট মেয়ে। রাব্বির ছোট বোন।তার নিজের অনেক ক্ষমতা। সে চাপা স্বরে হিসহিসিয়ে বলে
-এই কি হচ্ছে কি? তোমাদের না মানা করছি কথা বলা চিল্লাচিল্লি কান্নাকাটি করা যাবে না। কথা শোন না কেন? এসব কারণে তো মা তোমাকে পছন্দ করে না।যদি বলে ডানে যেতে তুমি যাও বায়ে। অবাধ্যতা তোমার শিরায় শিরায়।
-ভুল হয়ে গেছে বোন। আর হবে না।
অন্যায় করবে, লজ্জা তো নেই যেই বকা হবে অমনি একটা কথা শিখে রেখেছে ভুল হয়ে গেছে বোন, আর হবে না।যত সব ছোট লোক এসে জুটেছে এ বাড়িতে।
জুলেখা অন্য সময় হলে কিছু কথা কাটতো। সে ও কম কথা জানে না। কিন্তু নানা দুশ্চিন্তায় তার কোন কিছু আর ভালো লাগছে না। সে কিছুতেই মানতে পারছে না তরুর আব্বার আজ ফাঁসি হয়ে যাবে। তার মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে।এখনই তার ঘুম ভেঙে যাবে।মৃত্যু কি এত সহজ! এও কি সম্ভব? সে এখনও বিশ্বাস করে তরুর বাবা একদিন না একদিন ফিরে আসবে।কোন এক কারনে তার ফাঁসি হবে না। কিন্তু
-কি এত ভাবছো?
-না কিছু না।
-মা তোমাকে ডাকছে জরুরি আলাপ আছে।
-কথা হয়েছে তো।
-অন্য কথা আছে জরুরি।
-আসছি
-আসছি বলে আবার বসে থেকো না যেন। মা একটু বাইরে যাবে। পনেরো মিনিটের মধ্যে বের হবেন।
-আমার দেরি হবে না।
-শোক তাপ মনে হয় সব তোমারই লেগেছে। ঢং করো না তো। ঢং করা মানুষ মায়ের আবার দুচোখে বিষ।আমারও অপছন্দ। হিসাব করে দেখো যা হলো তোমার জন্য ভালো হলো। এখন তুমি স্বাধীন। ঝামেলা মুক্ত?
-আমি আবার কোথায় ঢং করলাম? আর ভালো কথা তুমি বলছো যা হলো ভালো হলো।.. পারোও বটে তোমার এই সব আজগুবি কথা শুনে আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।
-এই যে অকারণ মলিন মুখে বসে আছো। ভাব দেখে মনে হচ্ছে দাদা তোমারই সব ছিল। আমাদের কেউ ছিল না।এসব দেখে এমন কথা বলবো না তো কি বলবো।
-তোমরা সত্যি অন্য রকম মনটা তোমাদের এতটা পাষাণ কোন মাটি দিয়ে বানিয়েছে আল্লাহ তোমাদের। তোমাদের কথা বার্তায় একটু রস কষ নাই। স্থান কাল ভেদে অনেক সময় অনেক কথা বুঝে বলতে হয়। আমি কিন্তু ভুলিনি সব তোমাদের কারসাজি তোমাদের ষড়যন্ত্র।
-তোমার সাথে তর্কের কোন ইচ্ছে আমার নেই। আসলে তোমার এসবই ন্যাকামি। যদিও এসব ন্যাকামিতে কোন কাজ হয় বলে আমার মনে হয় না। পারছো ভাইয়াকে ফেরাতে। পারছো কোর্টের জজ সাহেবের মন গলাতে।
-তুমি কোন কাজের কথা বলছো।
টায়রা বিশ্রী একটা গালি দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে ঘরে ঢুকে গেল।
জুলেখা মনে মনে ভাবলো এরা সব নামেই ভদ্র। আচরণে মহা খবিশ। শুধু খবিস না লোভী ও বটে।
চলবে
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

ছবির লিঙ্ক
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:০৭
৯টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×