সুমি টানা দুই দিন কলেজে যায় নি। ফোনও বন্ধ রেখেছে । কারও সাথে কোন রকমের যোগাযোগ নেই তার। কি এমন হলো হাসি খুশি মেয়েটির?
তৃতীয় দিন সকালে সদলবলে বন্ধুরা সব হাজির সুমির বড় বোনের বাড়িতে যেখানে সুমি কলেজে যাতায়াতের সুবিধার জন্য আপাতত অবস্থান করছে। হোস্টেলে সিট পেলে উঠে যাবে এরকমই পরিকল্পনা ছিল। আর যাই হোক ২২ কিলোমিটার জার্ণি করে সময় মত কলেজ পৌছানো বেশ ঝামেলার ব্যপার। ক্লাস করতেও ক্লান্তি লাগে তার উপর বাসে যে ভীড়!
-কলেজে আসছিস না কেন?
সুমি কোন উত্তর দেয় না।
অনিমা আবার জিজ্ঞাসা করে
- কথা বলছিস না কেন? কি হয়েছে তোর? এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে?
কি এক অজানা অভিমান নিয়ে জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় সুমি। বলে,
- জানি না।
এই মুখ সে আর দেখাতে চায় না। কি করে দেখাবে? কি লজ্জা! কি লজ্জা!!
-দুই দিন কলেজে যাস নি, কোচিং এ ও এটেন্ড করছিস না সব ক্লাস তো হচ্ছে। তুই পিছিয়ে যাবি তো। কি সমস্যা তোর!
সুমি চুপ করে আছে। এত লোক জন তার কাছে অসহ্য লাগছে।কেন জানি তার কথা বলতে আর ইচ্ছে করে না।
অনিমা, তুলি, চৈতি একটা সময় পরে হাল ছেড়ে দিয়ে নানা কৌতুহল নিয়ে ফিরে চলে গেল।
কি হলো সুমির যে হঠাৎ বদলে গেল। এ প্রশ্নের কোন উত্তর পায় নি তারা।
সুমি ব্যাগ গোছায়। শরীরের ব্যাথা এখনও আছে।হঠাৎ দুর্যোগে জীবনের ছন্দ হারিয়ে গেছে তার। কোনকালে সে স্বতঃস্ফূর্ততা ফিরবে কি আবার?
নিজের বড় বোনের স্বামীর এমন পৈশাচিক রুপ দেখে জীবনের প্রতি ঘৃণা ধরে গেছে। এর থেকে কি মৃত্যু শ্রেয়?
ঘরের মধ্যে ঘৃণা ভরে থুতু ফেলল সে।
থু!থু!!থু!!!
আজ দুপুরের পর মা আসবে তাকে নিয়ে যেতে। বাবা হীন সংসারে মা-ই একমাত্র অভিভাবক। আরেক জনও অভিভাবক হিসাবে ছিল যাকে বাবার মত ভক্তি শ্রদ্ধা করতো সুমি।কিন্তু রক্ষক ই ভক্ষক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে যখন তখন জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা আসা স্বাভাবিক। মা এলে বোনের বাড়ির পাট এবার চুকবে তার। তারপর? তারপর উদ্দেশ্যহীন গন্তব্য।
ইজিবাইক রবীন্দ্রনাথ সড়কের মাথায় আসতেই সুমি কেমন যেন বদলে গেল। বোনের কাকুতি মিনতি বোনাইয়ের নানা প্রলোভন মায়ের নীরবসম্মতি সব ভেসে গেল এক নিমেষে । ভিতর থেকে কে যেন শক্তি যোগাচ্ছে তাকে।
অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে সুমি। অপরাধী সে যেই হোক।
সুমি বেশ কড়া গলায় ড্রাইভারকে বলল
- ড্রাইভার সাহেব থানার সামনে গাড়ি থামান। আমি নামবো।
জোহরা খাতুন বিষ্ময়ে অবাক হয়ে তাকান। কিছু একটা ভাবেন। যাক মেয়েটা যা ইচ্ছে হয় করুক। তবুও যদি একটু স্বান্তনা পায়।
সুমি ঠিক করেছে গত দুই দিন আগে তার সাথে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ সে করবে। অপরাধীর এমন শাস্তি দেবে যেন আর কেউ রক্ষক হয়ে ভক্ষক হিসাবে আবির্ভূত হবার সাহস দেখাতে না পারে ।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৮:৫১