সবচেয়ে বড় দুঃস্থ
_____________
-মেম্বার সাহেব, আমাকে একটা বয়স্কভাতার কার্ড করে দিবেন বলেছিলেন, কই দিলেন না তো, ভোট হয়ে গেছে বছর পুরতে গেল।
-বলেছিলাম না-কি? মনে নেই তো! ভাতার কার্ডে অনেক খরচ টাকা দিতে পারবি? কিছু টাকা তো আগে দেওয়া লাগে।
-টাকা কোথায়,পাবো? কি যে বলেন না বলেন!
- শোন তুই গরিব মানুষ। আমার আবার গরীব দুঃখীর দুঃখ সহ্য হয় না। এক কাজ কর, কাছে আয় বলি। তুই না আমার ভাই তোর কাছে আর লজ্জা কি!
জয়নাল মন্ডল সরে আসে। জামাল মেম্বার তার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলে
- প্রতিবার টাকা উঠলে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ,রাজী থাকলে বলিস কার্ড হয়ে যাবে। একটা কার্ডের পেছনে অনেক খরচ বুঝিস তো!
খুশিতে সব কটা দাঁত বের করে হে হে করে হেসে উঠলো জয়নাল মন্ডল।
যাক এবার একটু নিশ্চিত হওয়া গেল।ল্যাংড়া খোড়া একা মানুষ সে। ঘরে খোরাক থাকলে আর কিছু ভাবনা নেই। বাকি যা কিছু এ বাড়ি ও বাড়ি ভিক্ষা করলে জোগাড় হয়ে যাবে।
রক্ত চিহ্ন
____________________
রাস্তায় ছোপ ছোপ রক্ত দেখে থমকে দাঁড়ালেন জোবাইদা বেগম।কুজো পিঠ টান টান হয়ে গেল দারুণ উত্তেজিত হয়ে বললেন,
- আরে ও মরিয়ম! ও মরিয়ম!! সাব্বিরের রক্তের চিহ্ন তো এখনও আছে।দেখ দেখ
- কি যে বল না বাড়ি চল তো দাদী,তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে । খালি উল্টো পাল্টা বক বক কর।
- কি যা তা বলিস তুই? আমার মাথা খারাপ?
-সব জায়গায় তুমি আকাশের রক্তের চিহ্ন খোঁজ। এ তো মইনুল কাকুর ছেলের মুসলমানি উপলক্ষে ছাগল জবাই হয়েছে সেই রক্ত।
ভুল হতেই পারে। অকস্মাৎ জোবাইদা বেগমের চোখটা ভিজে উঠলো। শেষ বয়সে এসে এমন একটা তীব্র আঘাত তাকে কুরে কুরে খাবে তিনি সেটা স্বপ্নেও ভাবেন নি।
আহা! গত ঈদের দিন ছিল। তার হাত ধরে ছেলেটি রাস্তায় এসেছিল। কোন এক বেখেয়ালে হাত ছেড়েছিলেন সে। মিনিট খানেকও হয় নি।
ঈদের দিনে বখাটে ছেলেদের উগ্র মোটরবাইক রেস তার পোতা ছেলের জীবন কেড়ে নিলো মুহুর্তে।
ঘর গৃহস্থালী
---------------------------
তিন ছেলে মেয়ের উপর রাগ করে বাড়ি ছেড়েছেন রোকেয়া বেগম। আপাতত ফিরবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।গন্তব্য ভাইয়ের বাড়ি কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলাতেই হলো।হঠাৎ মনে পড়ল বৃদ্ধা শ্বাশুড়ীর ঔষধগুলো বুঝিয়ে দিয়ে আসা হয় নি। বার্ধক্য জনিত নানা রকম জটিল সমস্যায় ভুগছেন তিনি। সময়মত ঔষধগুলো না পেলে ঝামেলা হয়ে যাবে।
ঘরে ফিরে দেখেন ছেলেমেয়েরা এই অবেলায় সবাই পড়ার টেবিলে।মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করছে।
মা কে দেখেই খুশিতে সবাই পড়ার জোর বাড়িয়ে দিল।
রোকেয়া বেগম শ্বাশুড়ীকে ঔষধ দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলেন।বিকালের নাস্তার জন্য ময়দা মাখতে হবে। বাচ্চাগুলোর বিকালে বড্ড খিদে খিদে করে ।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২২ রাত ৮:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




