somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশবের স্মৃতিঃ শবেবরাত

১৯ শে মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোটবেলা যখন ঢাকার মোহাম্মদপুরের শের শাহ শুরি রোডে থাকতাম তখন শবেবরাত এর দিনটা এখনকার মত এমন ছিল না। বেশ উৎসব মূখর পরিবেশ ছিল তখন।

শবে বরাতের বেশ কদিন আগে থাকতেই আম্মা বাজার থেকে হালুয়া তৈরির উপকরণ সংগ্রহ করতে শুরু করতেন বাসার কাজের সাহায্যকারী ইসমাইল ভাইয়াকে দিয়ে ।
এখানকার মতো তখনও শবে বরাত বা রোজা আসার আগ থেকে জিনিসপত্রের দাম বাড়া শুরু হতো।
চিনি, ছোলার ডাল, ঘি, সুজি, ময়দা,গুঁড়ো দুধ, পোলাওয়ের চাল, কিসমিস, বাদাম আর গ্রাম থেকে আসা চালের গুঁড়া সংগ্রহ শেষে সেগুলো কৌটায় গুছিয়ে তোলা হতো।
শহরের আটা ভাঙানো মিল থেকে যদিও চাল গুঁড়া করা যেত কিন্তু সেই গুঁড়াতে রুটি ভালো হতো না।কেন জানি ফেটে যেতো। ঢেঁকি ছাটা চালের গুড়ায় নাকি রুটিটা ভালো হয়। আমি অত সত না বুঝলেও মা বলতেন তাই জানি আর কি।
তো প্রথমে ছোলার ডাল কেনার পর ঝেড়ে বেছে রোদে দেওয়া হতো। সুজি ও বেছে খুঁটে পরিষ্কার করা হতো কারণ অনেক সময় সুজির ভিতর ছোট ছোট পোকা হয় সেই কারণে সম্ভবত।
ময়দা টুকনি দিয়ে ভালো করে টুকে নেওয়া হতো ময়দার হালুয়ার জন্য। এগুলো সব আম্মা নিজ হাতেই করতেন। আমি বসে বসে দেখতাম।কারণ খাওয়া দাওয়ার আয়োজন সবসময় ই আমার কাছে প্রিয়।

যাহোক তারপর শবেবরাতের আগের রাতে আম্মা ডাল ভিজিয়ে রাখতেন এবং উঠতেন প্রায় মধ্য রাতে।প্রেশার কুকারে এমন ভাবে সিদ্ধ করা হতো ছোলার ডাল তাতে শিল পাটায় আর বাটা লাগতো না। এরপর শুরু হতো নানা পদের হালুয়া তৈরির কাজ।
ছোলার ডালের বরফি,সুজির কয়েক পদ হালুয়া, ডিমেরও কয়েক পদ হালুয়া সহ আরও নানা রকম হালুয়া।
সকালের কিছু পর থেকে অনেক মানুষ আসতো হালুয়া রুটি নিতে।এই রুটি বিলানো দায়িত্ব ছিল আমার।
ভিতর বাহির করতাম আমি সানন্দেই।

একেক জনের হাতে বেশ বড় সড় হালুয়া রুটির প্যাকেট দেখে অবাক হতাম। এত রুটি ওরা কি করতো তা রহস্য হিসাবে ছিল অনেক দিন পর্যন্ত । একদিন শবেবরাতের পরের দিন এক বন্ধুর বাসায় গেছি। ছাদে উঠে খেলা করছি এমন সময় পাশের বস্তিতে চোখ পড়তে দেখি হাজার হাজার রুটি। সব রুটি তাদের ছোট ছোট টিনের ছাদে সারি বেঁধে বিছানো।আসলে এগুলো দীর্ঘ দিন সংরক্ষণের জন্য রোদে শুকাবার পদ্ধতি । পরে শুনেছি অনেকে এই শুকনো রুটি পাপড় হিসাবে ভেজে খেতো।
যাহোক শবেবরাতের বিকালবেলাটাও আমার ভীষণ ব্যস্ততায় কাটতো। সারা পাড়ায় ট্রেতে করে নানা পদের হালুয়া আর রুটি বিলাতে বের হতাম।অন্যরাও আমাদের বাসায় দিয়ে যেত সমানতালে। সেই সময় অবশ্য আমার বাড়ির আশেপাশের বন্ধুরা ততক্ষণে পটকা বাজি ফোটানো শুরু করে দিয়েছে। পটকা বাজি শবেবরাতের বেশ কদিন আগে থেকেই ফোটানোর চল ছিল। শবেবরাতের রাতে আমরা তারাবাজি জ্বালাতাম। পটকা বাজি আমাদের বাড়িতে নিষিদ্ধ ছিল। অন্যান্যরা মুররা ( এক প্রকার চলমান বাজি যা বেশ ক্ষতিকর,কখনও কখনও আগুন লেগে যেত বা কারো লুঙ্গিতে ঢুকে পা, কাপড় পুড়িয়ে দিতো) ও নানারকম বাজি ফুটাতো।আমরা ওসব থেকে দুরে থাকতাম।
সন্ধ্যায় বড়রা কেউ কেউ গোসল করতেন। তারপর মাগরিবের নামাজ আদায় পর্ব। নামাজের পরে মাংস আর রুটি খেতাম খুব মজা করে। তারপর মিলতো একটু স্বাধীনতা তবে কড়া নির্দেশও দেওয়া থাকতো সেই সাথে। কোন বাজে রিপোর্ট আসলে তার খবর হয়ে যেত। আমরা বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তাম। নানা গল্প আর মজাও করতাম। এদিকে ওদিকে ঘোরাঘুরি করতাম যা অন্য দিন ছিল কল্পনার অতীত।তবে রাত বারোটার আগে বাসায় ফিরতে হতোই।
বাসায় ফিরে দেখতাম আম্মা নামাজে আমি তাঁর নামাজের পাটির পাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে একসময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যেতাম।
যখন চোখ মেলতাম তখন দেখতাম সকাল হয়ে গেছে। বাড়ির প্রায় সকলে তখনও ঘুমিয়ে। জানালা দিয়ে বাইরে দেখতাম। ফাঁকা রাস্তা দেখে অন্য রকম অনুভূতি কাজ করতো।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:২৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

×