ডোর বেল যে বাজাচ্ছে সে যে অস্থির টাইপের তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।হাতে কাজ ছিল, বিরক্তি নিয়ে দ্রুত হাতে দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়লো মেয়েটি। আমি রাগ দেখিয়ে বললাম
- কিরে এত ব্যস্ত কেন? আজিব!
- মানে?
-ছটফট করছিস কেন?
বলতে বলতে সানজানার দিকে ভালো করে তাকাতেই চোখ আটকে গেল। বাসন্তী রঙ শাড়ি পরেছে সে,সাথে মিল রেখে নানা উপকরণ দিয়ে সেজেছে সে ।চুলগুলোও বেশ গুছিয়ে বাঁধা মুখে হালকা প্রসাধন।বাহ! বেশ তো।
হঠাৎ সানজানাকে বেশ বড় বড় লাগছে।গত পরশু সালোয়ার কামিজে দেখেছি ওকে।তখন তো পিচ্চিই ছিল। ভোজবাজীর মত আজ বেশ বড় সড় লাগছে ওকে। কবে কে যেন বলেছিল মেয়েরা শাড়ি পরলে অন্য রকম দেখা যায়। সানজানার ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হয়েছে।
সমস্যা হল ওর দিকে বারবার তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছে ।এমন কেন হচ্ছে ? পুচকি মেয়েটাও এই সুযোগে ফট করে বলে বসল,
- রায়হান ভাইয়া,কি দেখছেন অমন করে হ্যাংলার মত?
-কই? কি দেখবো? আমি ভুত পেত্নীর দিকে তাকাই না।
-খুব অহংকার আপনার।
- এতে অহংকারের কি হলো?
- জানি না। আপনার সাথে কেন জানি না,কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, আমি যাই।
- এই তো এলি, কেন এলি বললি না তো?
- বলবো না।
- কেন বলবি না।
- আমার খুশি। আর শোনেন মি. আতেল আমাকে আর তুই তুই করে বলবেন না। আমি এখন বড় হয়ে গেছি।
- কে বলল বড় হয়েছিস? তুই তো পুচকি।
- মাথা মোটা মানুষ এসব ব্যপারে একটু কম বোঝে তাই ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার আজ সতের বছর পড়ল আর আমি গতকাল কলেজে ভর্তি হয়েছি ওকে। আর কলেজ পড়ুয়া একটা মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানেন আশা করি।
আমি কিছু একটা বলতে গেলাম তার আগে সানজানা যেমন হঠাৎ এসেছিল তেমনি হঠাৎ চলে গেল।
সে এলো কেন এলো? কেন কিছু বলে গেল না।....
(২)
দরজা খুলে কার সাথে কথা বলছিস? পাশের বিল্ডিং এ রং এর কাজ হচ্ছে হু হু করে ময়লা ঢুকছে তো তাড়াতাড়ি দরজা লাগা।
-মা সানজানা এসেছিল। রায়হান বলল।
সুরাইয়া বেগম করুন চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। সানজানা গত আষাঢ়ে এক ঝুম বৃষ্টির রাতে তিনতলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিল। কেউ কেউ বলে ও আত্মহত্যা করেছিল।তারপর থেকে রায়হানের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। অদ্ভুত এক রোগে পেয়েছে তাকে।রোগটির নাম সিজোফ্রেনিয়া।
কেউ কেউ দুয়ে দুয়ে চার মিলায়।এসব কথা ভাবলে এই এতোদিন পরেও তার বুকটা কেমন জানি ভার হয়ে আসে।.......
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:৪৭