১) সময় সুযোগ হলে আমি মাঝে মাঝে মানুষ দেখতে বের হই।চলতি পথের লোকজনের আচার আচরণ কথা বার্তা অঙ্গ ভঙ্গি পোশাক পরিচ্ছদ এসবই আমার দেখার বিষয়। বেশির ভাগ সময়ই আমার লেখা গল্পের শুরুটা হয় রাস্তায় দেখা কোন ঘটনা থেকে তারপর গল্পটি ডালপালা বিস্তার লাভ করে নিজের নানা অতীত অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে।
পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হলে কাছাকাছি পার্কে বসে একটু বিশ্রাম নেই ।সেখানেও মানুষ দেখি। জীবিকার তাগিদে বিচিত্র পেশার লোকজনের কাজ দেখি।আমি বরাবরই খেয়াল করে দেখেছি পার্কের ঘটনাগুলো বেশ বৈচিত্র্যময় হয়।
আজও বসে ছিলাম তেমনি এক পার্কে ।অনেক দিন এদিকটায় আসা হয় নি। একটা ফাঁকা বেঞ্চ দেখে বসলাম। জায়গাটা বেশ ছায়া সুশীতল ।অদূরে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বয়স্ক লোক একতারা বাজিয়ে গান গাইছে।গান শেষে অনেকে টাকা পয়সা ছুড়ে দিলো।লোকটার গানের গলা বেশ চমৎকার। অনেকটা আবদুল আলীমের মত।প্রতিভা থাকলেই হয় না সুযোগও পাওয়া লাগে।সুযোগের অভাবে লোকটি আজ পথে পথে গান গাইছে।তার সঙ্গের কিশোর ছেলেটা টাকাগুলো কুড়িয়ে নিয়ে এক জায়গায় রাখছে কিছু টাকা সে নিজের পকেটে রাখছে।ভাব দেখে মনে হলো সে এই টাকাটা লোকটিকে দিবে না। আচ্ছা ও কি স্কুলে যায়? জানা দরকার এটাও এক ধরনের ভিক্ষা বৃত্তি।এই বয়সে সে ভুল পথে চলছে ।উঠবো বলে ভাবছি এমন সময় আমার কাছাকাছি একজোড়া তরুণ তরুণী এসে বসলো। তারা সমবয়সী এবং কলেজ পড়ুয়া। মেয়েটির পরণে ইউনিফর্ম দেখে কনফার্ম হলাম। বসতে বসতে মেয়েটি ছেলেটিকে বলল,
- এ্যাই তুমি মাস্ক পড়ে আছো কেন? মাস্ক খোল এখন তো করোনা ভাইরাস নেই।তোমার গরম লাগছে না?
মাস্কটি স্বাভাবিক মাস্কের চেয়ে বড়।
- না এখন খোলা যাবে রাজু আঙ্কেল প্রায় এই পথ দিয়ে যায় আমাকে দেখলে মাকে বলে দেবে। না যদি জানে আমি মেয়েদের সাথে কথা বলি তাও আবার পার্কে বসে তাহলে আমার খবর আছে। ছেলেটি মাস্ক দিয়ে নিজেকে আড়াল করতে চাইছে। বিচিত্র জীবন! আমি মুচকি হেসে সরে দাড়ালাম।এবার আমার যাওয়া উচিত।....
(২) ফুল স্পীডে অটোরিকশা চলছে।ফাঁকা পেলে অটোরিকশাগুলো উড়োজাহাজ হয়ে যায়।এই দ্রুত চলমান অটোরিকশা প্রায় দূর্ঘটনার কবলে পড়ে কখনও এর চালক আবার কখনও এর যাত্রীরা আহত হয়। অনেক সময় রিকশার বেরিয়ে থাকা হুক বা নাট বল্টুর বাড়তি অংশে পথচারীও আহত হয়।সত্যি বলতে কি এ ধরনের ঘটনার ভুক্তভোগী আমি নিজেও। যা হোক যে জন্য এই লেখা। দ্রুতবেগে আমাদের খালধার রোড় বেয়ে অটোরিকশা ছুটে চলেছে।ফাঁকা রাস্তায় অস্বাভাবিক গতি দেখে কিনা জানি না একবার চোখ তুলে চাইলাম।রিকশাটা অনতিবিলম্বে আমাকে ছাড়িয়ে গেল হঠাৎ অদ্ভুত শব্দ ও কান্নার আওয়াজে আমি আবার পিছনে ফিরে দেখি অটোরিকশাটি দূর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। কাছে গিয়ে দেখে যা বুঝলাম উক্ত রিকশার এক যাত্রীর বোরখা রিকশার চাকায় বিশ্রীভাবে আটকে গেছে। শুধু বোরখা নয় মেয়েটির একটা পা ও চাকার মধ্যে বেকায়দায় ঢুকে গেছে এবং তারই পরিপেক্ষিতে রিকশা থেমে গিয়ে বিভৎস অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে । সাথে সাথে লোকজন চলে এলো,তড়িৎ গতিতে পাশের বাসার এক মহিলা দৌড়ে একটা মাছ কাটা বটি নিয়ে এলো বোরখা কেটে মেয়েটিকে উদ্ধার করবে বলে।মেয়েটির মা অসহায় দৃষ্টি নিয়ে দেখতে লাগলো,কিছুই করার নেই যেন, কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা । ঘটনার আকষ্মিকতা তিনি হতভম্ব ।অনেকক্ষণের চেষ্টায় মেয়েটিকে বের করে আনা গেল।আসলে তার একটি পা বেকায়দা আটকে ছিল। ভেঙে যাবার ভয়ে সেভাবে টানাটানি করাও যাচ্ছিল না।মেয়েটি আর্তচিৎকারে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠছিল।অনেক কষ্টে মেয়েটির পা বের করে আনার পর দেখা গেল একটা পায়ের বেশ কিছু অংশ ভীষণ রকম থেতলে গেছে।রিকশা বা অটোরিকশায় ওঠার সময় মেয়েদের শাড়ি বোরখা ওড়না ঠিক ঠাক গুছিয়ে বসা উচিত না হলে এমন বিপদ অহরহ ঘটবে।
(৩) বাজারে প্রচুর রাজশাহীর লিচু উঠেছে একশ লিচু ২৮০ টাকা। খেতেও বেশ সুস্বাদু।
আঁটির আমও পাওয়া যাচ্ছে খুব।এখনও তেমন একটা কলমের গাছের আম ওঠেনি। আম আমার সবচেয়ে প্রিয় ফল তবে অবশ্যই মিষ্টি হতে হবে।আমি আম দিয়ে দুধ দিয়ে ভাত খাই,যতদিন আম পাওয়া যায়। আম দুধ দিয়ে ভাত খেলে আমার ভীষণ ভালো ঘুম হয়,মনে শান্তি শান্তি লাগে। তালের শাস,কালো জাম জামরুল ও উঠেছে প্রচুর।ক্ষুদে জাম আর তালের শাস আমার পছন্দ নয় বলে কিনি নি।জ্যৈষ্ঠ মাসে নানা ফল পাকে বলেই সম্ভবত এই মাসকে মধু মাস হলা হয়।
(৪)
নামাজে যাবার পথে দেখলাম গলির মধ্যে এক রিকশাওয়ালা দাড়িয়ে আছে আমাকে দেখে সাহায্য চাইলো। আমি বললাম আপনি রিকশা চালাচ্ছেন তো কিছু আয় হয় নি? ভিক্ষা করছেন কেন?
সে আমাকে তার পা ও হাত দেখালো। তখনও ক্ষত স্থান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
সবটা শুনে যা বুঝলাম রিকশা থামিয়ে প্রস্ব্রাব ফিরতে গিয়েছিল রাস্তার অপর পার্শ্বে।কাজ শেষে রাস্তা পার হবার সময় দুরন্ত গতির এক মোটর সাইকেল আরোহী তাকে মেরে দিয়ে চলে গেছে।
আহা বেচারা টাকা নেই বলে চিকিৎসাও নিতে পারে নি সম্ভবত ।বোকাসোকা লোকটা ঘাবড়ে গেছে। মালিকের জমা দিতে হবে চারশো টাকা। গ্রাম থেকে এসেছে বুঝতে পারছে না কোথায় কি করতে হবে।এই পা নিয়ে তার রিকশা চালানোও সম্ভব নয় এখন।.....
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



