somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থ্রিলারঃ ধুরন্ধর খেলোয়াড় (উপন্যাস)

০১ লা জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্বঃ
_____________________
কোন কোন দিন আকাশটা অদ্ভুত রকমের মায়া ছড়ায়।মন পাগল করা মায়া।আজকের দিনটাও তেমনি মায়ায় মোড়ানো।
রোদ ঝলমলে স্বচ্ছ আর নির্মল।যতদূর চোখ যায় কোথাও এক ফোঁটা মেঘ নেই,নীল আর নীল।সেই নীলের অবগাহনে বিভোর প্রকৃতি শুনশান স্তব্ধ।
দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠ, মাঠ জুড়ে কাঁচা পাকা সোনাঝরা ধান সেই ধানের উপর ঢেউ খেলছে নির্মল বাতাস,বাতাসের দোলায় ধানের পাতার শনশন আওয়াজ ছাড়া আর কেন শব্দ নেই কোথাও। সেই খোলা মাঠের মধ্যে মেঠো পথ ঘেসে পাঁচিল ঘেরা গাছপালায় মোড়া চার কামরার একটা বাড়ি। বাড়িটি বছর তিনেক আগে বানানো, জানালা দরজা লাগানো সম্পন্ন হলেও রং প্লাস্টার কিছু ই হয় নি তেমনভাবে। এখন আর রং প্লাস্টার হবে কি- না তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।এ কথা এখন জোর গলায় বলা যায় কারণ বাড়ির কর্তা রাহাত মাহবুব অপ্রত্যাশিত এক খুনের মামলায় জড়িয়ে বর্তমানে জেল হাজতে আছেন।সেই মামলায় তিনিই প্রধান এবং একমাত্র আসামী মামলার বিচার প্রক্রিয়া প্রায় সমাপ্তির পথে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে রায় বের হবে।
লোকমুখে জনশ্রুতি রাহাতের নাকি ফাঁসির রায় হবে।এ কথা কে বা কারা ছড়িয়েছে তা জানা না গেলেও ঘটনা বেশ খানিকটা সত্য,মানুষ জন তা বিশ্বাসও করে ।
বহুল চর্চিত এই যে এত বড় এই ঘটনার সাথে যে পরিবারের প্রধান পুরুষ জড়িত সেই খুনে পরিবারকে লোকজন এড়িয়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। সমাজ পতিত মানুষকে দোষী সাব্যস্ত হবার আগে দোষী বানিয়ে ফেলে। আরও যদি কোন উদ্দেশ্যমূলক কারণ থাকে সেখানে পর্দার আড়ালে ধুরন্ধর খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
রাহাত জেল হাজতে আর তার মা কুলসুম বিবি বউ তনিমা আর মেয়ে ছোঁয়া বলা চলে একরকম একঘরে।
এখানে একটু ভুল বলা হলো রাহাতের বউ তনিমা তার স্বভাব সুলভ উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন এখনও চালিয়ে যাচ্ছে নির্দ্বিধায় তাকে আটকার ক্ষমতা স্বয়ং বিধাতার বুঝি নেই আরও অবাক করা বিষয় তার প্রতি কিছু মানুষের পক্ষপাতিত্ব চোখে পড়ার মত।সুযোগ সন্ধানী মানুষ সম্ভবত সব জায়গায় থাকে।আগুন সুন্দরী তনিমার কামনার আগুনে আত্মাহুতি দিতে অনেকই আগ্রহী,শুধু যেন সুযোগের অপেক্ষায়।
এক্ষেত্রে তনিমার দৃষ্টি আকর্ষণের ইঁদুর দৌড়ে জেলার প্রথম সারির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্ব রায়হান সোবহানের ছেলে অভীক বেশ এগিয়ে।শোনা যায় রাহাত মাহবুবের ফাঁসির রায় কার্যকর হবার পর অভীকের সাথে তনিমার বিয়ে হবে।তাদের মেলামেশায় অত্র এলাকায় দারুণ গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। তবে তনিমা এক পুরুষে সুখী নয় সেটা কমবেশি সবাই জানে।তার বহুগামিতা নিয়ে কারও কারও মনে চাপা অসন্তোষও আছে।তবে তনিমা তাতে থোড়াই কেয়ার করে তার খুঁটির জোর আছে।
বেশ কদিন বিরতির পর ছোঁয়া আজ কয়েকদিন হল স্কুলে যাচ্ছে ।আসলে মেয়েকে স্কুলে তনিমাই জোর করে পাঠিয়েছে,মেয়ে বাসায় থাকলে তার সমস্যা হয়।তবে এক্ষেত্রে তার বক্তব্য মেয়েটা বেশ ফাঁকিবাজ হয়ে উঠেছে, পড়াশোনায় একেবারে মন নেই ।
আজ কুলসুম বিবিও বাসায় নেই। মামলার তদবির করতে শহরে গিয়েছেন।
বাসা ফাঁকা এই সুযোগে অভিক এসেছে তনিমার সাথে দেখা করতে।এই অবেলায় তনিমা নিজেকে পরিপাটি করে সাজিয়ে রেখেছে। রুপ যেন পদ্ম পাপড়ির মত ঝলমল ঝলমল করছে।ঘরে অভীক নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছে না কিছুতেই তার যেন তর আর সয় না। সে অভিযোগের সুরে বলল,
-কত দিন আর ধৈর্য ধরমু কও তো?
- আহারে আমার সোনার ময়না পাখি।এত অবুঝ হইলে চলে।তনিমা বলতে বলতে হেসে গড়িয়ে পড়ল।
- সত্যি কইতাছি আমার আর ধৈর্য্যে কুলায় না।
- সবুর মিয়া সবুর। সবুরে মেওয়া ফলে। আমার কামডা হইছে?
- হইছে হইছে। কেন বিশ্বাস যাও না।তুমি খুব নিষ্ঠুর।
- তুমি এত অবুঝ ক্যান?
-তোমার হাতটা একটু ধরুম? ধরি?
-শুধু হাত কইলাম।
- তুমি আমারে বিশ্বাস যাও না?
- কেডায় কইছে।
-তয় কাছে আইবার দাও না ক্যান?
- মাইনষে দেখলে কইবো কি? আমার বদনাম হইবো না?
-ইশশ ভুতের মুখে রাম নাম। মাইনষেরে তুমি ডরাও নাকি?
খিলখিল করে হাসে তনিমা বলে
- হাত ধরবা কইছিলা। মাইনষে আইয়া পড়লে ধরবা? শুধু কথার ফটফটানি কামে নাই কিছু । ধর ধর আমারে জড়াইয়া ধরো।
-সত্যি
- পাগল কোনহানকার। ধরো তো।
-তবে রে আমার আলতাবানু তোরে আজ আমি খাইছি।
অভীক জড়িয়ে ধরে তনিমাকে ঠিক তখনই বাইরে থেকে ছোঁয়া ডেকে ওঠে।
- মা, মা, মা কই গেলা। ও মা...
সচকিত হয় তনিমা, ধড়ফড়িয়ে ওঠে ।ছোঁয়া ঘরে ঢুকেই বিষ্ময়ে বিমূঢ়। তার চোখে ঘৃণা।তনিমা আর অভিক একে অন্যের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। নিজেদের দ্রুত ছাড়িয়ে নেই।
একটু ধাতস্থ হয়ে তনিমা চিল্লিয়ে ওঠে
- কিরে স্কুল তন ফিরা আইলি যে? ছুটি দিয়া দিছে?
ছোঁয়া মায়ের প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে ঘাড় গুজে দাড়িয়ে আছে,এটুকু বুঝেছে এখানে ভালো কিছু হচ্ছে না ।তার শিশু মনে প্রবল আন্দোলন চলছে যার প্রতিচ্ছবি তার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে।
- কিরে কথা কস না ক্যান? বহুত ফাঁকিবাজ হইছোস না।তর ফাঁকিবাজি আমি আজ ছুটাইতাছি।কাম নাই কাজ নাই সারাদিন ঘরে বইসা বইসা খাওন আর খেলা। তোর আজ খাওন নাই। তোর দাদী কই? কই গেছে হেই নবাবজাদি। একটা কাম যদি অরে দিয়া হয়।
অভীক কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে সে বেশ আহ্লাদের স্বরে তনিমাকে বলে
- আহ! তনিমা ওরে এত বকা ঝকা করো কেন? পোলাপান তো এমনই। তুমি মন খারাপ কইরো না পাখি আও আমার লগে আও চকলেট খাইবা। তোমারে আমি চকলেট কিইন্যা দিমু।দামি দামি চকলেট।
অভীক ছোঁয়াকে কাছে টানে। ছোঁয়ার রাগে ফেটে পড়ে তার শিশু মন যেন ঠিকই বুঝতে পারে এই মানুষটির মতলব ভালো না। সে অভীকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়,বলে
- তুমি আর আমাগো বাড়িত আইবা না।তুমি একটা বাজে লোক।আব্বা আইলে আমি সব কইয়া দিমু।
অভিক বিব্রত হলেও খিক খিক করে হেসে ওঠে বলে
- মাইয়া তো তোমার গোখরা সাপ। তোমার তনও তেজি।
কথা শুনে তনিমার গা পিত্তি জ্বলে ওঠে সে ফোঁস ফোঁস করে। ছুটে এসে মেয়েকে চড় মারে
- ওই ছেমড়ি এত কথা কস ক্যা মুখটা বন্ধ রাখন যায় না?আর যদি বেশি কথা কইছোস সোজা কাইট্যা হালামু।
এদিকে রাহাতের মা কুলসুম বিবিও বাড়ি ফিরে এসেছে। অন্য ঘর থেকে সবই শোনে সে, বিড়বিড় করে বলে
-সারাদিন খ্যাচড় খ্যাচড় আর ভালো লাগে না।এত অশান্তি আমারে দিলা খোদা কি পাপ যে করছি তুমিই জানো। রাহাত রে তুই কি যে দেখছোস এই লুইচ্চা বেডির মইধ্যে হেই তো আমার ঘর সংসার সব জ্বালাইয়া পুড়াইয়া দিলো।তোরে তো খাইলো অহন আমারে খাইবো, কই যাই আমি কই যাই।.........
চলবে
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৮:৫৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আদর্শের রাজনীতি না কোটি টাকার হাতছানি...

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫



১. আমি অনেক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছোট দলগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত দেশের মত ২/৩ টিতে থাকাই উত্তম। কারণ, ছোট দলের নেতাদের টকশো-তে গলাবাজি করা ছাড়া আর কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল মাদ্রাসার দেয়াল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯



ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন।

বিস্ফোরণে মাদ্রাসার একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তেল আর জল কখনো এক হয় না......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৫



জুলাই ছিলো সাধারণ মানুষের আন্দোলন, কোন লিডার আমারে ডাইকা ২৪'এর আন্দোলনে নেয় নাই। কোন নেতার ডাকে আমি রাস্তায় যাই নাই। অথচ আন্দোলনের পর শুনি আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড নাকি মাহফুজ। জুলাই বিপ্লবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্ল্যাং রেভলিউশন: ১৮+ সতর্কবার্তা ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩০


সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকে একটা ভাইরাল ভিডিও চোখে পড়লো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্য সালাউদ্দিন আম্মার গণজাগরণ মঞ্চ ৩.০ তে উপস্থিত হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন: দেখতে পাইলে বাকশাল, শা*উয়া মা*উয়া ছিড়া ফেল/... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×