বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর দুইটা বাজলো।ফেরিঘাটে জ্যাম ছিল, দেরি হবার আশংকায় দুপুরের আহার পর্ব সেখানেই সেরে নিয়েছিলাম।
বাসায় এসে পৌছানোর পর দেখলাম কি একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে বাড়িতে।বাড়িতে অনুষ্ঠান আর আমি জানি না! ঢোকার মুখে দেখলাম সারিবদ্ধভাবে বসে মুসল্লীরা একটানা কোরআন পড়ছেন দরদালানের সন্মুখের বড় ঘরটাতে।তার ওপাশের বড় দরজাটাও খোলা সেখান দিয়ে দেখা যাচ্ছে বাড়ির পিছনের অংশ। সামিয়ানা টাঙিয়ে ব্যাপক আকারে খাওয়া দাওয়া চলছে।ওখানে প্রচুর লোক সমাগম।কি উদ্দেশ্যে এত আয়োজন কে জানে?আর আমাকেই বা জানায় নি কেন তাও তো বুঝতে পারছি না।আসলে কোন হিসাবই মিলছে না। আমি বিভ্রান্ত হয়ে
অনেকক্ষণ এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করলাম বাসার তেমন কাউকে দেখছি না,কি আশ্চর্য আমাদের বাড়ি লোকজন সব কোথায় গেল? অনেকক্ষণ খোজাখুজির পর মাকে পেলাম,উনাকে কয়েকজন ঘিরে ধরে বসে আছে অসুস্থ না-কি? সবচেয়ে অবাক করা ব্যপার হলো আমাকে দেখেও তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কেন এমন করলেন আমি কিছু ই বুঝতে পারলাম না।তিনি কি আমাকে চিনতে পারছেন না?নাকি আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইছেন।এটা কি করে সম্ভব?ভীষণ অভিমান হলো।
আরও অবাক ব্যপার আত্মীয় স্বজনরাও কেউ আমার কথার কোন উত্তর দিচ্ছে না।এরকম উপেক্ষার কারণ কি? কি করেছি আমি?
এদিকে এত খাতিরের যে শফি ভাই সেও আমাকে এড়িয়ে গেল বলে মনে হলো।আমার প্রশ্নের কোন উত্তরই দিল না।আমি কখনও কাঁদি না,ও সব মেয়েলি স্বভাবগুলো আমার সাথে যায় না কিন্তু এখন আমার চোখ ভিজে উঠলো। পৃথিবীটাকে কেন জানি মিথ্যা মনে হলো।কিছু বাদে বাবাকেও দেখলাম। বাবাকে কেমন যেন আরও বেশি বয়স্ক লাগছে হঠাৎ করে। আরও অবাক করা ব্যাপার উনি মোহন ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ডাক ছেড়ে কাঁদছেন।কি হচ্ছে এসব? অনুষ্ঠান! কান্না! হৈ হট্টগোল! মজা! মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল।নিজেকে এই পরিবেশে অপাংতেয় মনে হলো।যা হয় হোক পরে দেখা যাবে আগে একটু বিশ্রাম নেই। প্রচন্ড ক্লান্তিতে হঠাৎ ই দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসছে। মনে পড়ে গেল ক'রাত ঘুমাতে পারি নি।সারা শরীরে অসংখ্য পোকামাকড়ের খুবলে খুবলে খাওয়ার দরুন অসহ্য ব্যথার মত একটা চাপ ব্যথা।আমি বুঝলাম এখন আমার বিশ্রামের প্রয়োজন, বাসায় যখন আছি সব জানা যাবে।আমি নিজের ঘরে গেলাম।ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছি আসলে আমি হিসাব মেলাতে পারছি না তাই চিন্তাগুলো ঘুরে ফিরে ই আসছে। ঘুম আসছে না চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি ।কিছুক্ষণ বাদে সম্পা এলো ঘরে ।সম্পা! আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম। ও এখানে কিভাবে এলো! আশ্চর্য।ও তো বছর দুয়েক আগেই মারা গেছে!
- দাদাভাই
- কি?
-চল?
- কোথায়?
- আমাদের এখন ফিরতে হবে?
- কোথায় ফিরবো?
- আমাদের এখানে থাকা যাবে না।
-কেন?
-অসুবিধা আছে।
- কি অসুবিধা?
- আমাদের এখানে থাকতে নেই।
- মানে?
- তুই কেন সত্যিটাকে মেনে নিতে পারছিস না দাদাভাই । ফিরে চল।
এতক্ষণে মনে পড়লো সবকিছু ।আমি সোজা হয়ে বসলাম। আরে! আমি তো বেশ কিছু দিন আগে বাইক এক্সিডেন্টে মারা গেছি আজ আমার চল্লিশা!
(গল্পটি প্রতিলিপি, ফেসবুক ও অন্যান্য ব্লগে পূর্বে প্রকাশিত)
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক