এই চৈত্র মাসে গুনে গুনে আট বছর হলো, রূপালী বেগম অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন ।রোগাক্রান্ত মানুষের জীবন যে কত কষ্টের তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন তিনি।কাছের মানুষগুলো কত সহজে দুরের হয়ে গেল এক নিমেষে। ভাবেন আর চোখের পানি ফেলেন। এছাড়া আর কি বা করার আছে তার মত মানুষের জন্য? কিছু করার নেই।
এক কালে মহা দাপটে যে সংসার তিনি একাই সামলেছেন আজ সেই সংসারে তিনি চূড়ান্ত অবহেলিত ।এক রকম আশ্রিতই বলা যায়।দুবেলা দুটো মুঠো ভাত জোটে কি জোটে না।
হারুন যদি যোগাযোগ বন্ধ না করতো তাহলে তার কদর ঠিকই থাকতো।এটা তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন।কেন? কি কারনে প্রাণ প্রিয় মেজ ছেলেটি তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছে, কে জানে?ও কিন্তু কোনদিনই স্বার্থপর ধরনের ছেলে ছিল না,কেন যে এমন করলো,কে বলবে?
বিদেশ যাওয়ার পর নিরবিচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘ পাঁচ বছর সে একাই সংসার টেনে নিয়ে গেছে। তিনটি বোনের ভালো জায়গায় বিয়ে দিয়েছে। অন্য দুই ভাই সেই অবসরে হারুনের টাকায় নিজের ব্যবসা গুছিয়ে নিয়েছে।বেশ বড় অংকের টাকার মালিকও হয়েছে।
হারুনের অন্তর্ধানের পর থেকে সবাই যার যার মত হয়ে গেছে একে একে।এখন রূপালি বেগম আর রুহির দেখাশোনার কেউ নেই। এদিকে ছোট মেয়ে রুহির বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। চিন্তায় ঘুম আসে না রূপালী বেগমের।
চলছিল এমনই কষ্টে সৃষ্টে। হঠাৎ ই এক মধ্য দুপুরে জোহরের আযানের পর পর রুহি হাঁপাতে হাঁপাতে এসে জানালো
- মা, একটা ভালো খবর আছে।
রূপালি বেগম নির্লিপ্তভাবে জানতে চাইলেন
- কি?
- পিয়ন ভাই তোমারে ডাকে?
- ক্যান?
- ভাইজান চিঠি পাঠাইছে।
- কে ভাইজান?
- মেঝো ভাই।
প্রথমে বিশ্বাস হয় নি তারপর জমা হলো একরাশ অভিমান , কোন রকমে দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে রূপালি বেগম তাচ্ছিল্যের সুরে বলল
-ক্যান একটা ফোন দেবার পারে নাই? ঢং কইরা আবার চিঠি দিছে। আজকাল চিঠির চল আছে নি?কই আছিল এত গুলান বছর । কি করছে? ক্যান বে খবর হইছে? কইছে কিছু?
- মা তুমি কি পাগল হইছো?
- আমি তো পাগলই। পাগলই।
- মা!
- ক'গিয়া আমার পায়ে বেদনা,মাজায় বিষ হাটবার পারুম না। তুই গিয়া লইয়া আয়।
একটু সময় পর অভিমান থিতু হতেই জানতে চাইলো কি লিখছে চিঠিত? আমার কথা কিছু লিখছে?
রুহি জোরে জোরে চিঠিটা পড়লো। হারুণ সৌদি আরব থেকে জাহাজে করে ইতালি যাচ্ছে সামনের মাসে।মধ্যে সে বিনা অপরাধে জেলে ছিল তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যোগাযোগ রাখতে পারে নি।যেখানে যাচ্ছে সেখানে নাকি টাকা আর টাকা। চিন্তা করার কিছু নেই।পৌছে খবর দেবে অতি শিঘ্রী। সব শেষে জানায় আগামী মাস থেকে কিছু টাকা পাঠানোর চেষ্টা করবে।
রূপালি বেগমের চোখ চক চক করে উঠলো।এবার তার একটা গতি হবে,বাতের ব্যথারও চিকিৎসা হবে। হারুণ যে তাকে চরম ভক্তি করে।আহা ছেলে একখান! লাখে একটা।
এই খবরে হঠাৎ করে রুহির ভাই ভাবিদের ব্যবহার বদলে যায়। সবাই বেশ খাতির করা শুরু করলো রূপালী বেগমের।রুহি ঘরের দরজা বন্ধ করে নতুন করে রুপমকে মেসেজ পাঠায় "প্লান মাফিক সব কাজ ঠিক ঠাক হয়েছে।সবাই তাকে বিশ্বাস করেছে। মা খুব খুশি।"
রুপম ফিরতি মেসেজ পাঠায়
"মায়ের ব্যবস্থা তো হলো এবার বিয়েটা সেরে ফেলা যাক। আর তো কোন সমস্যা নেই"
"চিঠিতে তো লিখলে মাসে মাসে টাকা পাঠাবে।তার কি হবে জনাব?"
"সে তোমায় ভাবতে হবে না। আগে তো কবুল বল।"
"চ্যাটিং এ কবুল বলে ক্যামনে?"
এরপর একের পর এক হাসির ইমো বিনিময় হয় দুজনের মধ্যে।.....
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
"খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফেরে" ধারাবাহিক গল্পটির পরবর্তী পর্ব খুব শিঘ্রী পোস্ট দেওয়া হবে।
ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৩৭