somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ মহালয়ার ভোর

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘড়িতে এলার্ম দেওয়াই ছিল।এখন রাত সাড়ে তিনটা বাজে। আস্তে আস্তে বিছানা ছাড়লেন তপনবাবু।বয়সের কারণে শরীরটা আজকাল আর কথা শুনতে চায় না।প্রায় বিদ্রোহ করে। জরুরী বাসি কাজগুলো সারতে সারতে প্রায়  চারটা বেজে গেল।
বহুকালের অভ্যাস মহালয়ার ভোর মানে অন্য রকম একটা ঘোর কাজ করে সব সময়। শিউলি গন্ধ, ঘাসের ডগায় স্বচ্ছ শিশির বিন্দু,বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ভরাট গলায়  চন্ডী পাঠ, কান ফাটানো চমকে ওঠা বাঁশির শব্দ। স্বর্গীয় আমেজ।
কাঁপা হাতে গ্যাস জ্বালিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে রেডিও নব ঘোরাতে গিয়ে দেখলেন রেডিওতে কোন সাড়া শব্দ নেই।
কি আশ্চর্য! গত রাতেও তো সব ঠিক ছিল। হঠাৎ কি হলো আবার। বার কয়েক চড় থাপ্পড় মারার পরও ফাইভ ফোর থ্রি সেটটি মুখ খুলল না।এত ভোরে মেকানিক পাওয়া যাবে না। কি যন্ত্রণা!  এমন শুভক্ষণে মনটা খারাপ হয়ে গেল তপনবাবুর।
মন খারাপ হলেই আজকাল অনেক কথা মনে আসে এক বুক অভিমান ভীড় করে।ছেলে মেয়েরা নিজের মত যার যার পথ দেখে নিয়েছে।মাসে দুমাসে এক আধবার খোঁজ নেয় দায়িত্ববোধ থেকে। ওটুকু শেষ
তার নিঃসঙ্গ জীবনের কষ্ট কেউ বুঝতে চায় না। ভালোবাসা সে তো দুর কি বাত।
নির্দিষ্ট সময়ে ভেসে আসে মহালয়ার সুর বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ভরাট কন্ঠে চণ্ডীপাঠ।  মন্ত্র মুগ্ধের মত কান পাতেন তপন চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া আর উপায় কি!
আগেকার দিনের মত এখন কেউ কারো খোঁজ রাখে না। একান্নবর্তী পরিবারগুলো একে অন্যের মায়ার বাঁশঝাড়ের মত জড়াজড়ি করে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো সে সময় আর এখন সবটাতেই ব্যক্তি স্বার্থ। ভাইবোনের সম্পর্কটাই এখন টেকে না নানা টানাপোড়েনে। বাবা মা থাকে অবহেলিত।
ছেলে মেয়েরা বহুবার বলেছে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যেতে। তপন বাবু জানেন মুল উদ্দেশ্য কি।এই বাড়ি বেঁচে টাকা ভাগ করে নেওয়া। তিনিও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। চৈতালীর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি তিনি বেঁচে থাকাকালীন কিছুতেই বেঁচবেন না।তিনি মরে গেলে সব তো পড়েই থাকবে তখন যার যা ভালো মনে হয় সে তাই করবে বাধা কেউ দিবে না।
এরপর থেকে ছেলেমেয়েদের যাওয়া আসা কমে যায়। ছোট মেয়েটা বছরে একবার আসে বাকিরা ফোনে কাজ সারে।
জীবন সায়াহ্নে এসে মৃত্যু চিন্তা ফিরে ফিরে আসে। মনে আফসোস বাড়ে।সামনের দিনগুলোতে তিনি হয়তো আর থাকবেন না কে জানে এটাই হয়তো তার জীবনের শেষ মহালয়া। আর শোনা হলো না চন্ডী পাঠ। নেওয়া হবে না শিউলির সুবাস।দেখা হবে ঘাসের ডগায় তিরতির করে কাঁপা শিশির বিন্দু।
তপনবাবুর চোখে জল আসে।হয়তো শেষ পুজো। পুজোর শুরুটা কেমন যেন পানসে হয়ে গেল। ভগবান হয়তো এমনটাই চেয়েছেন।  
সদর দরজায় কে যেন কড়া নাড়ছে। এত ভোরে কে এলো আবার। যে মেয়েটি রান্নার কাজ করে সে তো এসময়ে আসবার কথা নয়।তপন বাবু ভিতর বাড়ি থেকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসেন সদর দরজার দিকে।
শরীরটা আজকাল বড্ড বেশি অসহযোগীত করছে। বাতের ব্যথাটাও বেড়েছে খুব বেশি।
তপন বাবু দরজা খুলতেই একঝলক আলোর রেখা যেন ছড়িয়ে পড়লো সারা ঘর জুড়ে।
এই ভোরে রন্টি তরু,সুদীপ্ত, অমল,রতন,পিয়া এসে হাজির।
- তোরা এত ভোরে।কি ব্যাপার?
সুদীপ্ত চনমনিয়ে বলল
-তোমায় নিতে এলাম দাদু।চল চল বাবা তোমায় ডাকছে।
- কেন রে?
- বাবা বলল, " যা দেখ তো বাবাই সোনা তোর দাদু একলা রয়েছে  ডেকে নিয়ে আয় সবাই মিলে চন্ডীপাঠ শুনবো৷ তাই তো এলাম তোমায় নিয়ে যেতে।চলো চলো আমাদের বাড়ি চল।
ছেলে মেয়েদের দলটি সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো
- চল চল দাদু চল। 
এতক্ষণ জীবনটা কেমন যেন পানসে লাগছিল। হঠাৎ আলোক ছটায় রঙিন হয়ে উঠলো সব কিছু। সত্যি বেঁচে থাকা দারুণ ব্যাপার। 
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×