somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ঊন মানুষের মন

১৫ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটু আগে আমার আব্বা মারা গেছে। আমি তাঁর লাশের সামনে বসে আছি।স্থির নিশ্চল!আমি জানি এখন আমার শোক প্রকাশ করা উচিত ।মিথ্যে করে হলেও কান্নার অভিনয় করা উচিত । না হলে লোকে মন্দ বলবে।সমাজে আমার বদনাম হয়ে যাবে কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও আমি কান্না করতে পারছি না।আসলে অভিনয়টা আমার দ্বারা হয় না।

শত চেষ্টা স্বত্বেও আমি মুখ দিয়ে বুক ঠেলে ওঠা গোঙানির শব্দ আনতে পারলাম না। কেন জানি নিজেকে আমার ভীষণ নির্ভার লাগছে। মন জুড়ে কেমন যেন শান্তি শান্তি ভাব। আহ! মুক্তি।
কিসের মুক্তি তা অবশ্য আমি জানি না!

এদিকে আমার সৎ ভাইবোনগুলোর শোক বিলাপে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। সেটাই স্বভাবিক। আমার সৎ মা ঘণ ঘণ মূর্চ্ছা যাচ্ছেন।তাকে ঘিরে উপস্থিত প্রায় সকলেরই চোখে জল।তার মধ্যে কেউ কেউ আমাকে লক্ষ করে ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে কি সব আলাপ করছে।সে সব অবশ্যই প্রশংসা সূচক কোন বাক্য নয়।আমি জানি ওরা এমনই। আবার এও জানি এসব আমার প্রাপ্য ।
আমার এমন অদ্ভুত অনুভূতির কারণ অবশ্যই আছে!
সত্যি বলতে কি সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি বহুদিন আমার আব্বার মৃত্যু কামনা করেছি।নানা রকমের মৃত্যু! কখনও বাস এক্সিডেন্টে মৃত্যু। কখনও পানিতে ডুবে যাওয়া মৃত্যু। কখনও আবার আমাদের বাড়ির দোতলা ছাদ থেকে ঝুপ করে গড়িয়ে পড়ার মৃত্যু। কিন্তু তিনি এতদিন আমার কোন ডাক কবুল করেন নি।আজ হঠাৎ...
ছোট থেকেই আমার নিজের মাকে আমি কখনও দেখিনি।দেখলেও স্বরণে নেই। ইচ্ছা অনিচ্ছায় আব্বার কাছেই মানুষ।বেড়ে ওঠার জন্য একটা আশ্রয়স্থল অবশ্যই প্রয়োজন। জ্ঞান হওয়া অবধি আমি আব্বাকে যমের মতো ভয় পেতাম। আব্বার কড়া শাসন সাথে নানা রকম মানসিক নির্যাতন,কথায় কথায় রাম ধোলাই আমার সৎ ভাই বোনদের বিনোদিত করলেও আমার জীবনকে করে তুলেছিল বিষময়।
যদিও জানি এসব কিছুর পিছনে ছিল আমার সৎ মায়ে চক্রান্ত।আমাকে তাড়ানোর চক্রান্ত। সম্পত্তির হিসাব বড় কঠিন হিসাব।।অবশ্য এটাও জানি আমার আব্বা তাঁর তৃতীয় বিয়েটা টিকিয়ে রাখবার জন্য মরিয়া ছিলেন।বিশেষ কিছু কারণে সৎ মায়ের কথা শোনা ছাড়া তাঁর অন্য কোন উপায় ছিল না। তাই বলে তিনি আমার সাথে ঘটমান অনেক না ইনসাফি অবশ্যই ঠেকাতে পারতেন, আমি আবারও জোর দিয়ে বলবো অবশ্যই ঠেকাতে পারতেন। তিনি কি পারতেন না আমার হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতে?
ছোট মা না হয় দুষ্টু বুদ্ধিটা দিয়েছিলেন।তাই বলে তিনি আমাকে ভারতের নিয়ে গিয়ে অজানা অচেনা বাজারে ছেড়ে দিয়ে আসবেন! এত নিষ্ঠুর তিনি কি করে হয়েছিলেন? আমি অবশ্য তিন মাসের মাথা সশরীরে বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম এবং আমার বাড়ির লোকজনদের দারুণভাবে চমকে দিয়েছিলাম।আমার বাসার সবাই আমাকে সাথে নানা রকম নির্যাতন করতো।একবার তারা আমাকে বাঁওড়ে বেড়াতে যাবার নাম করে ডুবিয়ে মারতে চেয়েছিল। সে যাত্রা য়ও আমি বেঁচে গিয়েছিলাম।
তবুও এত কিছুর পর আমার সমস্ত রাগ দুঃখ অভিমান আমার আব্বা উপরেই বেশি ।সৎ মা তার ছেলে মেয়েরা তো এমনই হয় ।আব্বা কেন তাঁর নিজের সন্তানকে বুঝতে পারেন নি।আমার কষ্টগুলো তিনি কেন অনুধাবন করতে পারতেন না? আমি না তার নিজের ছেলে?কেন শুধু শুধু তিনি আমাকে সহ্য করতে পারতেন না।আমি নিতান্ত বেটে খাটো অসুন্দর,এক চোখ অন্ধ বলেই কি আমার জন্য এই দূর্ব্যবহার বরাদ্দ ছিল? আর আমার মা ও কি পরিত্যক্তা হয়েছিল আমার কারণে ? আমি শুনেছি আমার তিন বছর বয়সে আমার মা আত্মহত্যা করেছিলেন। কারণ ছিলাম আমি সেটাও নিশ্চিত ।জানি আমার শারীরিক ক্রুটি আছে।আমার বেটেখাটো বদখত চেহারার জন্য অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। লোকে হাসে মজা নেয়,তাই বলে আমার কি ভালোভাবে বেঁচে থাকবার কোন অধিকার নেই।আমার জন্ম কি আমার দোষে হয়েছে ?
অনেক কথা মনে আসছে। না ভাবতে চাইলেও মনে আসছে।আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম।আব্বার জন্য দোয়া দরুদ পড়া দরকার কিন্তু কোন দোয়া দরুদ মনে পড়ছে না।
জোহরের নামাজের পর লাশ দাফন হলো।এরপর বাসার সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।যেন স্বাভাবিক একটা দিন।আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম ভাই বোন সৎ মায়ের নকল মুখোশ খসে পড়লো আত্নীয় স্বজন বিদায় হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। এদিকে আমার হঠাৎই গা কাপিয়ে জ্বর চলে এলো।অগত্যা মাথায় যন্ত্রণায় কাতর হয়ে আমি আমার জন্য বরাদ্দ ছোট খুপরিতে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। চাপা স্বরে ঝগড়ার আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঝগড়ার বিষয়বস্তু সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা সম্পর্কিত। কি অদ্ভুত!
কত কথা কত কিছু মনে এলো এর মধ্যে হঠাৎ ই বুক ঠেলে কান্না এলো।দম বন্ধ করা কষ্ট বুকের ভিতর ।আব্বার জন্য কষ্ট হতে লাগলো খুব । আব্বাকে কি আমি ভালোবাসতাম?জানি না তবে বুকটা কেমন যেন ভারি হয়ে গেলো।চোখ ফেটে জল ঝরতে লাগলো।হঠাৎ অনুশোচনা হলো।নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হলো।হয়তো আমার অভিশাপে বাবার এত তাড়াতাড়ি মৃত্যু হয়েছে।আরও কটা দিন বেঁচে থাকলে কি এমন ক্ষতি হতো!
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৪
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: রহস্যময় চৌধুরী ভিলা

লিখেছেন গ্রু, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৩৩



পরদিন সকালে আকাশ পরিষ্কার। গতরাতের বৃষ্টির কোনো চিহ্ন নেই, শুধু রাস্তার ধারের গাছগুলো থেকে টুপটাপ জল পড়ছে। অনিরুদ্ধ তার জীর্ণ নীল রঙের পাঞ্জাবিটা পরে তৈরি হয়ে নিল। সে সাধারণত রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

I have a plan

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২২

আসেন নেতা পা বাড়ান সামনে এগিয়ে চলেন
প্ল্যান টা কী বলেন।

সামনে আজাদ পেছনে দিল্লি কোন দিকে যাই বলেন
প্ল্যান টা কী বলেন।

যে দিকেই যাই ৩৬ যাবে? সেইটা ক্লিয়ার করেন
প্ল্যান... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আদর্শের রাজনীতি না কোটি টাকার হাতছানি...

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫



১. আমি অনেক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছোট দলগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত দেশের মত ২/৩ টিতে থাকাই উত্তম। কারণ, ছোট দলের নেতাদের টকশো-তে গলাবাজি করা ছাড়া আর কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×