somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ দেশান্তরি

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ভোর ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাকিব আজ দেশ ছাড়ছে।কানাডার সাচকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করবার উদ্দেশ্য চলে যাচ্ছে সে। ছেলেটা একটা ভালো স্কলারশিপ পেয়েছে।এজন্য তার বাবা আব্দুল হাই দারুণ খুশি। অন্তত তার চোখ মুখের চাহনি তাই বলছে।যদিও তার বুকের ভিতরটা তুষের আগুনের মত পুড়ছে।ছেলেকে তিনি একলা হাতে বড় করেছেন।সব দুঃখ কষ্ট ঝড় ঝাপটা দুহাতে সামলিয়েছেন।এ্যাডমিশনের যাবতীয় প্রক্রিয়া নিশ্চিত হবার পর থেকে সব কষ্ট পাথর চাপা দিয়ে চমৎকার অভিনয় করে চলেছেন তিনি।এক জীবনে পরিকল্পনা মাফিক কোন কিছু হয় না। মানুষ ভাবে এক হয় আরেক। এটা তার চেয়ে আর কে ই বা বেশি জানে!
এই তো গতকাল কাকে কাকে যেন মোবাইলে খুশির খবর জানালেন।বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেও ভুললেন না।অথচ..
নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ,রাকিব দেশেই একটা চাকরিবাকরি করে থিতু হবে সেই প্রস্তুতিটা ছিল বহুদিনের। কিন্তু হঠাৎ কিছু বিষয় নিয়ে অনিশ্চয়তার তৈরি হলো।সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি বিবেচনায় আব্দুল হাই ছেলের জন্য ক্রমশ উদ্বিগ্ন হচ্ছিলেন।বিশেষ করে বিগত কয়েক মাসের ঘটনাগুলো খুব একটা সুখকর ছিল না। আব্দুল হাইয়ের আপনজন বলতে ওই একজনই।তার জীবন যদি...

জনাব হাইয়ের সংসারটা ভেঙেছিল অনেক আগেই। অস্থির সময়ে আজকাল কেউ তেমনভাবে সুস্থির নয়। সব্বাই কেবল ছুটছে আর ছুটছে।একদিন রাকিবের মা তুলিকাও সেই দলে নাম লিখিয়েছিলো। অথচ তাদের বিয়েটা প্রেমের ছিল। এখন সে হাজার মাইল দুরে প্রবাস জীবন যাপন করছে।শোনা যায় সে ভালো আছে।সবাই এক সময় যার যার মত করে ভালো থাকে।এটাই জগতের নিয়ম।
সকাল থেকে অনেক কথাই মনে আসছে।বুকের ভিতরটা উথাল পাথাল করছে।আব্দুল হাই বারান্দায় রাখা চেয়ারটা টেনে বসে একটা সিগারেট ধরালেন।ছেলে দেখলে রাগ করবে কিন্তু অভ্যাসটা তিনি ছাড়তে পারেন নি শত চেষ্টা স্বত্ত্বেও।
রাকিব ছোটবেলা থেকে বাবার কষ্টটা বুঝতো।এখন পর্যন্ত বোঝে।তারপর এই হঠাৎ সিদ্ধান্তের পর সে দোদুল্যমান ছিল, সে জানে বাবা কখনও দেশ ছাড়বে না। তাকেই ফিরে আসতে হবে।আর তাই বার বার বাবাকে বুঝিয়েছে। আমি ফিরবো বাবা, আমি অবশ্যই তোমার কাছে ফিরবো।মাত্র তো ক'টা দিন।ও দেখতে দেখতে চলে যাবে।তুমি ভেবো না।
এদিকে সেদিন আবেগের বশে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার জন্য আজও আব্দুল হাইয়ের ভীষণ আপসোস হয়।বাইরে যাবার প্রসেসিং এর সময়কার ঘটনা।কথার পিঠে ফট করে মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন ছেলের মুখের উপর
- এই যে বলছিস কটা দিন,ততদিন যদি না বাঁচি?
জানে কথাটা বলা উচিত হয় নি।ছেলের মন খারাপ হয়েছিল। সিদ্ধান্ত বদলাবে বলে জেদ ধরেছিল।
আব্দুল হাইয়ের ও মাথায় হঠাৎ ই রক্ত উঠে গেছিলো। নাছোড় বান্দা ছেলেকে কষে এক চড় মেরে বলেছিলেন
- হারামজাদা! শুধু আমার কথা ভাবলে চলবে? নিজের কথাও ভাব।কি ভবিষ্যৎ আছে এ দেশে?জীবন্মৃত থাকতে চাস, না-কি লাশ হতে চাস? আমি বেঁচে থাকতে ওসব দেখতে পারবো না।এদেশ এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে, জঙ্গল।
আব্দুল হাই ভালো মত জানে ছেলেটা তাকে প্রচন্ড রকম ভালেবাসে তা না হলে সেই সময়ই সে মায়ের সাথেই ছুটতো।এদিকে আজ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় নানাবিধ জটিল পরিস্থিতির কারণে ছেলেকে ছুটতে হচ্ছে অন্য দেশে।এটা কি পলায়ণ নয়? হ্যাঁ পালাচ্ছে তার ছেলে।এখান থেকে গেলে কেউ সহজে ফেরে না।
অনেকেই তো পালাচ্ছে।অন্য বিকল্প নেই বলেই দেশ ছাড়ছে।
এদিকে গত রাত থেকে আব্দুল হাইয়ের বারবার মনে হচ্ছে সেই তো ছেলেও ছুটলো।এক জীবনে সত্যি কি কাউকে চিরদিন ধরে রাখা যায়। সবারই তো নিজস্ব জগত আছে! সময়ে তাকে ছেড়ে দিতে হতোই। এসব ভেবে নিজেকে নিজে স্বান্তনা দেওয়া আর কি!
রাকিব বারবার বলে চলেছে বাবা আমি খুব দ্রুত ফিরে আসবো, দেখো। আর এখনকার যুগে মোবাইল, ইন্টারনেট কত আয়োজন।আমাকে ছুঁতে তোমার একটুও সময় লাগবে না।
এসব কথার পিঠে আব্দুল হাই কিছু বলতে পারেন না। তার গলা ধরে আসে।ছেলের মুখের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়।চোখ জ্বালা করে। তিনি বহু কষ্টে নিজেকে সামলে চলছেন।ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আবেগ দমন করে রেখেছেন।
এইবার সত্যি তার ব্যস্ততা ফুরালো। তিনি সত্যি সত্যি বেকার হয়ে পড়লেন। তুলিকা চলে যাবার পর জয়া অনেক দিন তার পিছনে ঘুর ঘুর করেছে। আব্দুল হাই ছেলের মুখ চেয়ে সংসারে অন্য কাউকে আনেন নি। রাকিব চলে গেলে তিনি নিঃসঙ্গ জীবন কি করে কাটাবেন?অথচ ছেলের ভালোর পথে তিনি কখনও বাধা হবেন না এটাই তার শেষ সিদ্ধান্ত। তাছাড়া দেশটা ক্রমশ বদলে যাচ্ছে,ছেলেটার চলে যাওয়াই উচিত।ও ওর মতো করে বাঁচুক। ভালো থাকুক। কিছু বছর আগেও এদেশের মানুষের মধ্যে এতটা নৈতিক অবক্ষয়,সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়,ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, নিজ স্বার্থে ব্যক্তি পুজার বাড়াবাড়ি ছিল না,ছিল না সীমাহীন লোভ লালসা।অসুস্থ প্রতিযোগিতাও ছিল না।কত দ্রুত সব বদলে যাচ্ছে,বদলে যায়।সব কিছুতেই লাগাম ছাড়া অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
রাকিব ছোটবেলা থেকে টপার। ব্যবহার আচার আচরণ লেখা পড়ায় সবক্ষেত্রেই সেরা।বাবার মতো দেশ ভক্তিও প্রবল ।তবুও...
সন্তান ভালো হলেও জ্বালা। উচ্ছন্নে গেলেও জ্বালা।ছেলে বিদায় জানাতে জানাতে মনে মনে কথাটা আওড়ালেন জনাব হাই। বাসায় ফিরে দরজা লক করতেই খামচি মারা বুকে ব্যথা শুরু হলো।তীব্রতা বাড়লো ক্রমশ। রাকিব তখন উড়ে চলেছে নতুন সম্ভাবনার খোঁজে। এদিকে ৪/বি ফ্ল্যাটটাতে তখন যমে মানুষে টানাটানি৷ চলছে।
আব্দুল হাই আরও কিছু কাল বাঁচতে চান। এই মুহুর্তে দেশান্তরি হওয়ার কোন ইচ্ছে তার নেই তবুও.....
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ভোর ৬:৫০
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সে কবিতায় অন্য কেউ ছিলনা..

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১২




সে কবিতায় অন্য কেউ ছিলনা—
শুধু আমিই ছিলাম, তোমার পরম আরাধনা হয়ে;
যেন কত জনমের সাধনা!
আবেগ আপ্লুত এই আমি তখন
বুঝে গেছি —স্বার্থক আমার কবিতা লেখা,
স্বার্থক সাধনা।

প্রেম যেন এক সদ্য প্রস্ফুটিত অপরাজিতা ফুল
স্বার্থক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলশেগুঁড়ি নয় গল্পটা ইলশে গরুর

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:১৭


মাদের বাজারে সারাবছর মাছই বিক্রি হত আর এক পাশে হাস মুরগীর ডিমাশে পাশের দশ বিশ পঞ্চাশ গ্রাম আর চরের মানুষ সদাই পাতি আনাজ মাছ দুধ নিয়ে আসত সেখানে বিক্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যাপিত জীবন: একটি ইন্টার্ভিউ এবং আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ।

লিখেছেন জাদিদ, ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪০

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান - বাংলাদেশে তাঁদের ফ্যাক্টরি, চায়নার অফিস এবং ঢাকার অফিসের জন্য বিভিন্ন পদে লোক নেয়ার জন্য বিডি জবসে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলো। সেখানে আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে যোগ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কি নারীদের উপযুক্ত সম্মান দিতে জানি না?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩০



গতমাসে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বিএনপির নারী নেত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর কথাবার্তা বলেছিলেন। সেসব নিয়ে হৈচৈ হয়েছিল খুব। বিএনপির পক্ষ থেকে ঝাড়ু মিছিলও বের হয়েছিল। বক্তব্যটা যে শিষ্টাচার বহির্ভুত, তা বলার অপেক্ষা... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৈয়দ আব্দুল হাদীর কালজয়ী কিছু গান

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৭



এ বছরের মেরিল প্রথম আলো পুরষ্কার অনুষ্ঠানের ইউটিউব ভিডিও ফেসবুকে কিছুটা টেনে দেখতে গিয়ে আটকে গেলাম এই প্রজন্মের চার তরুনের কন্ঠে সৈয়দ আব্দুল হাদীর কিছু গান শুনে। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×