somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু গল্পঃ বুভুক্ষা

১৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

#মাংসভূক
______________
কাশেম মোল্লার ছোট ছেলে ফরহাদ মোল্লার মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার খবরে সবাই ব্যথিত হলেও মাইমুনার তেমন কোন আক্ষেপ ছিল না বরং মনে মনে সে বেশ খুশিই হয়েছিল।মৃত মানুষটার থেতলে যাওয়া মুখটা মারাত্মক রকমে বীভৎস দেখাচ্ছিল।
সেই মুখ দর্শনে মাইমুনা একটু ভয় না পেয়ে।প্রায় নিঃশব্দ ঘরে এসে খিল তুলতে তুলতে বলেছিল আল্লাহর মাল আল্লায় নিছে এতে আর আফসোসের কি!
সদ্য কিশোরী মাইমুনার মা পারভীনা বানু ফরিদ মোল্লার বাড়ি কাজ করে আজ প্রায় দশ বছর।মাইমুনা মায়ের সাথে এই বাড়ির আশ্রিতা সেই ছোটকাল থেকে।গ্যারেজের কোনায় ছোট খুপরিতে মা মেয়ের সংসার।
মাইমুনা জানে বড়লোকের বাড়ি কেউ মরলে কয়েক তরফায় খাওয়া দাওয়াটা বেশ ভালোই জমে।অদ্ভুত কোন কারণে সে শোকের মুহুর্তে অন্য হিসেব করছিল।.. মৃত্যুর দিনের দিন খাওয়া, তিনদিনের দিন মিলাদের খানা তারপর চল্লিশা..।এছাড়া আত্নীয় স্বজন থাকাকালীন খানা।খানা আর খানা।
সবশেষে শেষ মিছিলে চল্লিশার খাওয়াটাও অফুরান ছিল। মাইমুনা গোটা পাঁচেক মাংস বেশ আয়েশ করেই খেয়েছিল।
মাইমুনা কি খাদ্য লোভী? স্বার্থপর? হৃদয়হীনা?
ফরহাদের মৃত্যুতে মাইমুনার খুশি হওয়া।তার মনোজগতের চলাচল আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত এবং রহস্যময় মনে হলেও মাইমুনার সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ফরহাদকে লোকজন ভালো ছেলে সোনার ছেলে সহ নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করলেও মাইমুনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার কারণে মাইমুনা তাকে ভালো সার্টিফিকেট কোন দিনই দিতে পারবে না। নোংরা অসভ্য ইতর লোক পৃথিবী থেকে যত তাড়াতাড়ি দুর হয় ততই মঙ্গল ।

#সবজি
--------------
দুপুর অবধি সারা বাজার ঘুরে দুটো করলা আর একটা পোকা লাগা কাঁকরোল ছাড়া আর কিছুই মিলল না।বাজারে আজকাল অনেকেই কাঁচা মালের ব্যবসা গুটিয়েও নিয়েছে।
আর যাই হোক খুদের ভাতে একটু সালুন না হলে শুধু লবন দিয়ে ভাত গেলা যায় না কিছুতেই।
অথর্ব জয়নবের মেজাজ সকাল থেকে খিঁচড়ে আছে।চারিদিকে শুধু অভাব আর অভাব। আজকাল আর এ জীবনের বোঝা টানতে ভালো লাগে না।সে মরিয়মকে তার অক্ষমতার কারণে বিশ্রী কয়েকটা গালি দিল।
আভাগীর ঘরের আভাগীর খাওয়া ছাড়া আর কোন গুন নাই। সারা বাজার ঘুরে একটা দুইটা তরকারি চাইলে কেউ দেয় না। এইটা কোন কথা? সেও তো...

মার খাওয়ার ভয়ে মরিয়ম দুর থেকে মাকে দেখে আর ভাবে তার সাথীরা সবাই স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। সে কবে স্কুলে যাবে? তার যে ভিক্ষা করতে একটুও মন চায় না। সবজির দাম বাড়ন্ত বলে এখন সবজিওয়ালা বড় বেশি ত্যাড়া কথা কয়। বাতিল সবজি টুকুও নিজের ঝোলায় ভরে রাখে।এতে তার দোষ কোথায়? তবে কি সে চুরি করবে? মা কি তাই চায়?

#ডিম
-----------
স্কুল থেকে ফিরে। বই খাতা একপাশে রেখে সেলিম তার জন্য রাখা খাবারের ওপর থেকে সরপোশ তুলেই চেঁচিয়ে উঠলো
-কি দিয়া খামু? আর কিছু নাই? খিদা লাগছে ভাল লাগে না।
- যা জুটছে ওই দিয়া খা।
- ডিমভাজির মধ্যে এইসব কি দিছো ?
-তেলাকুচা শাক আনছিলাম বাবুলগো ঘরের পিছন তন।ঘরে তো আলুও নাই। এক সাঝ হওনের মতো না।হের লাইগ্যা পাতাগুলা কুচায়ে ডিম দিয়া ভাজছি। খাইয়া দ্যাখ মজা লাগবো।
একটা ডিম চারজন খাওয়া যায় না মা।রোজ রোজ এক খাওন ভালো লাগে না। আর কোন সালুন রান্ধো না ক্যান?
-চালের কেজি কত জানোস?তরকারী কিনবো কি দিয়া? আর কিছু কেনোন লাগে না।ঘর ভাড়া বাকী পড়ছে। তোর বাপের যা ইনকাম হেতে হের বেশি খাওন জুটতো না।লোকটারে কি দোষ দিমু? মহাজনের রিকশার জমাও বাড়াইয়া দিছে।তোর বাপে তো কয় তোরে স্কুল ছাড়াইয়া কামে দিতে।
সেলিম করুন চোখে মায়ের দিকে তাকায়।
জয়নবের বুকটা মুচড়ে ওঠে। ছেলেটা পড়ালেখায় ভালো।তার কিছু স্বপ্ন ছিল সেগুলো একে একে ভেঙে যাচ্ছে ।ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলেকে স্বান্তনা দিতেই বুঝি বলে
- গারমেন্ট তো খুলবো না মনে লয়। দ্যাশের যা অবস্থা! দেহি কাল একটা নতুন বাসার কামে ঢুকমু ভাবতাছি।বড়লোকগো কামে গ্যালে যদি কিছু মেলে তো তহন না হয় ভালো মন্দ খাস কেনে।
- গরীব মাইনষের আবার ভালোমন্দ! তোমার ভাত তুমি খাও।
জয়নব উদাস দৃষ্টিতে ছেলের পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।আজকাল অনাগত ভবিষ্যতের কথা ভাবলে কেমন যেন একটা ভয় ভয় ভাব হয়। সামনে কি আরও দূর্যোগ আসছে?

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:১৭
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×