সোনার বাংলা
‘পশ্চিম বাংলা’ নাকি এবার ‘সোনার বাংলা’ হবে। কিছু কিছু রাজনেতাদের কন্ঠে এমনই শোনা যাচ্ছে। স্বপ্ন দেখা ভাল, কিন্তু স্বপ্ন দেখানো কত ভাল সে-শিক্ষা আমরা ইতিহাস থেকে পাই । ১৯০৫ সালে বাংলা ভাগ হ’ল, ইংরেজ সরকার শাসন-ব্যবস্থার সুবিধের জন্য তারা এ-কাজটা করেছিল। বাংলার মানুষ এসব মানবে কেন? বাংলার সঙ্গে যে আমাদের প্রাণের সম্পর্ক, হৃদয়ের সম্পর্ক! প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠল সারা বাংলার মানুষ। মেনে নিতে পারলেন না, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও। তাই তাঁর কন্ঠে বেজে উঠল বেদনার সুর—‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল—পুণ্য হউক, পুণ্য হউক,পুণ্য হউক হে ভগবান’!........
১৯১১ সালে আবার অখন্ড ‘সোনার বাংলা’ আমরা ফিরে পেলাম।
‘গঙ্গার স্রোতে ভেসে আসা মাঝি পদ্মার বুকে এসে—
প্রাণভরে গায় সেই সারিগান বাংলাকে ভালবেসে’।
কিন্তু ব্রিটিশ শাসকের উদ্ধত অহঙ্কার,অত্যাচার বিষিয়ে তুলেছিল বাংলার আকাশ-বাতাস । অখন্ড ভারত জুড়ে নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন-দ্বীপান্তর-কারাযন্ত্রণা-ফাঁসির মঞ্চে প্রিয়জন হারানোর মর্মান্তিক ইতিহাস ভুলে যাওয়ার নয় ।
প্রয়োজন ছিল ব্রিটিশ-মুক্ত অখন্ড ভারত, অখন্ড বাংলা, সোনার বাংলা । রবি ঠাকুর শুধু বাংলার বুকে নয়, সারা দেশের দুর্যোগের ঘনঘটা দেখতে পেয়েছিলেন। তাই বীর সুভাষের উদ্দেশে ছিল তাঁর এই শেষ গান—‘তোমার আসন শূন্য আজি, হে বীর পূর্ণ করো’।......
‘রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’ এই ছিল বীর সুভাষের দৃপ্ত কন্ঠ ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা । স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের প্রয়োজন, আন্দোলন কখনও স্বাধীনতা আনতে পারে না—এ-কথা তিনি বিশ্বাস করতেন বলেই ‘আজাদ হিন্দ্ ফৌজ’ গঠন করতে পেরেছিলেন । ‘কদম কদম বাঢ়ায়ে জা, খুশী কে গীত গায়ে জা’ দেশবাসীর মনে আজও শিহরণ জাগায় !
'১৯৪৩-এর ২১ অক্টোবর ‘স্বাধীন’ ভারতীয় সরকার: ‘Provisional Government of Free India’৷ গঠিত হয় পূর্ণ মন্ত্রিসভা৷
রাত বারোটার পর সিঙ্গাপুর রেডিও মারফত প্রধানমন্ত্রী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
নেতাজিই ছিলেন প্রথম ভারতীয়, যিনি দু'শো বছরের পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তির দ্বার খুলে দিয়েছিলেন । ব্রিটিশের দখলে থাকা ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে প্রথম স্বাধীন বলে ঘোষণা করে, জাতীয় পতাকা তোলেন ১৯৪৩ সালে ৩০শে ডিসেম্বরে ।যে কারণে ভারতের আন্দামানই প্রথম ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল ।
কিন্তু স্বদেশী স্বার্থান্বেষী রাজনেতা ইংরেজের সহযোগিতায় অনাকাঙ্খিত ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার আগুন লাগিয়ে দেশকে খন্ড-বিখন্ড করে দিল । এমনকি আমাদের ‘সোনার বাংলা’ তা’ থেকে রেহাই পেল না । আবার দ্বিখন্ডিত হ’ল ‘সোনার বাংলা’।এ এক কলঙ্কিত ইতিহাস । স্বাধীনতার নামে ক্ষমতা হস্তান্তরের খেলায় জয় হ’ল বিশ্বাস-ঘাতকদের, যার রেশ আজও চলছে এই উপমহাদেশ জুড়ে ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:১২