somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা দেশ, পতাকাতো সবার! যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা সবার হয়ে ওঠে না, ততক্ষণ অব্দি কী করে বলি যে বিজয় অর্জিত হয়েছে?

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওয়াশিংটন থেকে আমাদের এক সহকর্মী এসেছে। দশ বছর পরে। আমি তাকে খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই দশ বছরের ব্যবধানে তুমি বাংলাদেশকে কেমন দেখলা?’

তার চোখেমুখে মুগ্ধতা, বললো, ‘বিস্ময়কর অগ্রগতি! বিশ্বাস করা যায় না, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে একটা দেশ এতোটা উন্নতি করতে পারে। আমিতো রাস্তাঘাট, বাড়িঘর কিছুই চিনতে পারছি না। কয়েক বছরের ব্যবধানে এত বড় বড় দালানকোঠা উঠেছে যে, এই শহরকে চেনাই যায় না।’

আমি এই খেলাটা নিয়মিত খেলি। অন্যের চোখে বাংলাদেশকে আবিস্কারের একটা নেশা বলা যেতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, শুধু ঢাকা থেকে ঘুরে যাওয়া বিদেশী, আর ঢাকার বাইরের কোন শহর বা গ্রাম এলাকা থেকে ঘুরে যাওয়া বিদেশীদের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়।

শুধু ঢাকা থেকে যারা ‍ঘুরে যায়, তারা এই শহরের বড় বড় দালানকোঠা, ভিক্ষুক, ট্রাফিক জ্যাম আর দূষনের কথা বলে! আর যারা ঢাকার বাইরে যাওয়ার সুযোগ পায়, তারা বলে, ‘তোমাদের দেশটা অপূর্ব সুন্দর। ধনধান্যে পুষ্পে ভরা।’ সবার আগে এদেশের মানুষের আতিথেয়তার প্রশংসা করে তারা।

আসলেইতো আমাদের দেশটা অনেক এগিয়েছে। আজ থেকে ৭/৮ বছর আগেও ৬০/৬৫ ভাগ শিশু স্কুলে ভর্তিই হতো না। এখন সেটা ৯৬ ভাগ। প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ খোলা জায়গায় পায়খানা করতো, এখন সেটা মাত্র ১ ভাগে নেমে এসেছে। হাসপাতালের সংখ্যা বেড়েছে। শহরগুলো বড় হয়েছে, বাজেটের আকার বেড়েছে, মানুষের হাতে কত কত টাকা।

গত ১০ বছরে কোটিপতির সংখ্যা কয়েক’শ’ গুণ বেড়েছে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধায় এখন আর মানুষ মঙ্গায় আক্রান্ত হয়ে কচু-ঘেচু খেয়ে মরে যায় না। পোলিও, ডিপথেরিয়ার মতো রোগ প্রায় জাদুঘরে চলে গেছে।

তবু কোথায় যেন কিছুটা বেসুরো লাগে-

আমাদের দারোয়ান মেয়েটার হাজবেন্ড প্রায় অসুস্থ থাকে। সেদিন দেখলাম মাথা ন্যাড়া করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘শীত আসছে, এখন আর মাথা ন্যাড়া করার দরকার কি?’ উত্তরে যা আসলো, তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বললো, ‘এখন ৫০ টাকার নিচে চুল কাটা যায়না। মাসে মাসে এত টাকা পামু কই?’ আমি থমকে গেলাম।

এক গর্ভবতী মা ৫০০ টাকা ভাতা নেয়ার জন্য পেটে ৯ মাসের বাচ্চা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে সারাদিন বসে থাকার পর সেখানেই বাচ্চা প্রসব করে ফেলেছে। কতোটা অনটনে থাকলে কেউ সারাদিন ৫০০ টাকার আশায় বসে থাকে?

শহরে বাস করা কোটি মানুষের অবস্থা ভাল নয়। তারা বস্তিতে দিন যাপন করে। সেখানে জীবন যাপনের সুবিধাদি নেই। দ্রব্যমূল্যের বাজার হুটহাট লাগাম ছাড়া হয়ে যায়। কে যেন পেছন থেকে তাড়া করে। মানুষ এখনো বিচার পায় না। হুটহাট করে কেউ গায়েব হয়ে যায়। রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা নাই। কোন কারণ ছাড়া মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম লেগে থাকে। বছর বছর, একই নিয়মে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়...কিছুদিন পর পর জঙ্গিগোষ্ঠি মাথাছাড়া দিয়ে উঠে...

এসব সামলাতে না পারলে তো দেশের বড় একটা জনগোষ্ঠির দু:খ-কষ্ট লাঘব হয় না। সাধারণ মানুষ খুব অসহায় বোধ করে।

একটা দেশ, পতাকাতো সবার!
যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা সবার হয়ে ওঠে না, ততক্ষণ অব্দি কী করে বলি যে বিজয় অর্জিত হয়েছে?

সকলকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৬
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×