অপেক্ষার অনেক দিনই কাঁটলো। বছরটাও শেষ হয়ে গেল। রিশিতা কে আজও কিছুই বলা হলোনা। আর অপেক্ষার কোনই মানে হয়না। রিশিতা ক্লাস টেনে উঠে গেছে, এ বছরটা অপেক্ষায় কাঁটলেই বিপদ। কলেজে চলে যাবে রিশিতা এরপর সারাজীবন ধরে না বলা প্রেম নিয়ে আমায় ভুগতে হবে। এখন রিশিতা কে জানালে একটা সমস্যার কথা প্রথমেই বলতে পারে। তা হলো আমি জুনিয়র, মাত্র ক্লাস এইটে। যাক ব্যাপার না, ভালোবাসলে উন্মাদ একটু হতেই হয়।
ঠিক, আমি রিশিতাকে ছোট একটা কাগজের চিরকুটে লিখে দিলাম। " ভালোবাসি"
আশ্চর্য! রিশিতার চোখেমুখে কোন ধরণের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া খেয়াল করলাম না।
রিশিতা খুব সহজ ভাবে বলল, বেশ গরম পড়েছে, তাড়াতাড়ি বাসায় যা, মেডিটেশন কর, লম্বা লম্বা শ্বাস নে, ঠিক হয়ে যাবে।
ধুর! এটা কোন কথা হলো। কেউ প্রেমপত্র দিলে কোন মেয়ে এমন রিয়্যাকশন করে এটা তো আগে কখনও শুনিনি। অনেকেরই প্রেম দেখেছি কিন্তু এমন বিশ্রী সাজেশনের কথা কোথাও শুনিনি।
বরং রিশিতা চোখ গরম করে হাল্কা রাগ দেখাতো, সামান্য ঘৃণার প্রকাশ করত! নাহ তা নয়, আমাকে বলল মেডিটেশনের কথা!
আর ঘৃণা না থাকলে ভালোবাসা হবে কিভাবে? অনেক ভাবনা, অনেক ভাবনা।আর অমন রুপবতী রিশিতা যদি ঘৃণাই না করল তবে এ জীবনের পূর্ণতা কোথায়? থাক, সে রুপের বর্ণনা আমি কিছুতেই দেবনা পাছে সবাই তাকে ভেবে প্রেমে পড়বে। সে রিস্ক আমি নিতে চাইনা।
আমি কিছুতেই পিছু হটলাম না, এতদিনের অপেক্ষা সব কি মিথ্যে নাকি!
আমি বললাম, তুমি সময় নাও, ভাবো, তারপর বলো।
রিশিতা বলল, কি ভাবতে বলছিস রে! পিচ্চি ছেলে একটা, এখনি দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।
তাই বলে রিশিতা আমাকে পিচ্চি ছেলে বলল! একথা শুনলে যে অনেক খারাপ লাগে।
ধুর! আমি হয়ত ঠিকভাবে প্রপোজ ই করতে পারলাম না। তবু হ্যাঁ ছাড়ছিনা কিছুতেই।
রিশিতা আমার থেকে যদিও সিনিয়র তবুও আমি ওকে তুমি বলেই বলি। প্রথম যেদিন তুমি করে বলেছিলাম, একবার বড় বড় চোখে তাকিয়েছিল আমার দিকে। এরপর ধীরে ধীরে মেনে নেয়।
ক্লাসে সিনিয়র বলেই কি আপনি বলতে হবে নাকি! পরে আবার ভাব ধরে বসে থাকবে। এ আমি মানিনা। ছেলে মেয়ের সম্পর্কে আপনি বলে কিছু হয়ই না। আমি বলতে কোনভাবেই প্রস্তুত না।
হঠাত্ খেয়াল করলাম, রিশিতা কোন এক ছেলের সাথে খুব হাসিখুশি মুডে আছে। হায়! হায়! প্রেম নয়ত আবার?
প্রেম হলে তো আমার সর্বনাশ মানে সাড়ে সর্বনাশ!
ছেলেটা কে?
তার জবাব তোকে দেব কেন, পিচ্চি ছেলে পিচ্চির মতই থাক!
দেখো রিশিতা বারবার কিন্তু পিচ্চি শুনতে একদম ভালো লাগেনা আমার।
ভালো না লাগলে আমার সামনে আসিস না।
তা কি করে হয়? ভালোবাসি তবে আসতে কিসের দ্বিধা!
রিশিতা রেগে বলল, আরেকবার যদি বলেছিস তো!
নাহ, রিশিতাকে বোঝাতে পারছিনা কেন? ভালোবাসি তা আবার এত বুঝিয়ে বলার কি আছে?
এরপর একদিন হঠাত্ রিশিতা আমাকে বলল, একটা কাজ করে দিতে পারবি?
আমিতো খুশিতেই বললাম, এটা আবার বলার কিছু হলো! তোমার জন্য তো.....
থাক! তোকে নায়কের অভিনয় করতে বলিনি। আমার প্র্যাকটিকাল খাতা লিখে দিবি। একদম ভুল করবিনা কিন্তু। স্যার যদি খাতা সাইন করতে কোন ঝামেলা করে তো খবর কাকে বলে বুঝবি।
মাথা নেড়ে বললাম ঠিক আছে।
এটাই সুযোগ তবে মন জয় করার। কথামতো অনেক যত্নে প্র্যাকটিক্যাল খাতা লিখে দিলাম। কিন্তু এবার ঘটলো অন্য ঘটনা। রিশিতার খাতা সাইন করতে স্যার ঝামেলা করলো। কোন কথা নেই, রিশিতা এসে আমার গালে কষে এক থাপ্পড় দিল।
কি হলো!
ভাবতেই আজ অবাক লাগছে একটা মেয়ে কিভাবে এত ভয়ঙ্কর রকমের থাপ্পড় দিতে পারে! ওহ, আগে কখনো খাইনি তো তাই বুঝতেও পারিনি। তবে আমি নিশ্চিত, নিউটন যদি এমন থাপ্পড় উপভোগ করতো তবে নির্ঘাত F=ma এর থিওরি বদলে যেত।
রিশিতা রাগী স্বরে বলল, শয়তান! খাতা তো ভালোই লিখেছিস। সেই সাথে প্রতি পৃষ্ঠায় একবার করে I Love U লিখেছিস।
আমি কোন কথা বলতে পারলাম না, মাথা নিঁচু করে ঘুরে চলে আসতেই,
দাঁড়া, কোথায় যাচ্ছিস, আমাকে ভালোবাসিস না?
শান্ত গলায় বললাম, না।
রিশিতা বলল, এখন যদি আর একবার ও না বলেছিস তো, আরেকটা থাপ্পড় খাবি।
আমি ভাবলাম, না, আরেকবার থাপ্পড় খেলে হয়ত জীবনে অন্য আর কোন মেয়ের সামনে এই গাল নিয়ে দাঁড়াতে পারবনা, রিশিতার সামনে তো নয়ই........
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৭ রাত ৩:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


