somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকদিন ধরেই এই সমস্যাটা বেশ ভুগাচ্ছে । কোন কিছুর প্রতি মনোযোগ দিত গেলেই মাথায় কেমন যেন তীব্র যন্ত্রণার অনুভূতি হয় । কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরনগুলো বোধহয় অতি তাড়াতাড়ি উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে । অরুপ বিষয়টা নিয়ে বেশ বিরক্ত । ডাক্তার দেখানো উচিত, কিন্তু কিছু অমূলক ব্যস্ততার কারনে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হচ্ছেনা । মাঝে মাঝে অরুপের মনকে প্রবল ভয় গ্রাস করে নেয় । মনে হয় যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে । একেবারে বদ্ধ উন্মাদ । তবে মাঝে মাঝে ব্যাপারটা ওর কাছে মজারই মনে হয় । পাগল হওয়া ব্যপারটা হয়তো ভালোই হবে । পরিবার এবং উচ্ছ্রিংখল সমাজ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একজন মানুষ ।

অরুপের এক বন্ধু ছিল । তের বছর বয়সে বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ একদিন পাগল হয়ে গেলো । প্রবল শীতের মধ্যেও অরুপের সেই বন্ধু উলঙ্গ হয়ে গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতো । অরুপের তখন মনে হত পাগল হলে বোধহয় সবরকম অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায় । আচ্ছা পাগল হলে ও কি উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে ? না, তাহলে পাগল হওয়াটা আর মজার ব্যাপার থাকবেনা । অরুপের পক্ষে উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা সম্ভব না ।

অরুপ বিছানায় উঠে বসলো । এমনভাবে শুয়ে থাকার কোন মানেই হয়না । বেশকিছুদিন হল সে কোন কিছুই ঠিকমত করতে পারছেনা । আর রাতের ঘুমটাও ঠিকমত হচ্ছে না । আর ঘুমানোর চেষ্টা না করে কিছু একটা করা যাক । বিছানার পাশের টেবিলে ল্যাম্প আছে । অন্ধকারে হাতড়ে খুঁজে ল্যাম্পের সুইচ অন করলো । টেবিল ও বেডের কিছু অংশ উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো । হঠাৎ চোখে আলো লাগায় চোখ জালা করতে লাগলো । চোখে আলো সয়ে এলে ও ঘড়ির দিকে তাকালো । সোয়া-দুইটা বাজে । বিছানা থেকে পা নামিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে অবাক হল সে । প্রতিরাতেই বিছানার পাশে একজোড়া চটি স্যান্ডেল থাকে । আজ নেই । খালি পায়ে হাঁটতে ওর অস্বস্তি লাগে । তাই এই ব্যাবস্থা । অরুপ কিছুক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে রইলো । চটিগুলো কোথায় রেখেছে মনে করার চেষ্টা করলো । বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করেও মনে করতে পারলো না । প্রবল অস্বস্তি নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো । দরজা খুলেই দেখে চটিগুলো পড়ে আছে । ওর কোন ভাবান্তর হলনা । নিঃস্পৃহ চিত্তে চটিগুলো পায়ে দিয়ে বাথরুমে গেলো । বাথরুম থেকে ফিরে রুমমেটদের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল । সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । ও কোনপ্রকার শব্দ না করে আস্তে দরজাটা বন্ধ করলো । প্রায় নিঃশব্দ পায়ে হেঁটে ওর বিছানার কাছে পৌঁছালো । হাত বাড়িয়ে পানির বোতল নিয়ে গ্লাসে পানি ঢাললো । গ্লাসে পানি ঢালার এক অদ্ভুত শব্দ রুমের দেয়ালে বারি খেতে লাগলো । অরুপ ঢকঢক করে গ্লাসের সবটুকু পানি খেয়ে শেষ করে আবার পানি ঢাললো । আবারও সেই অদ্ভুত শব্দটা সৃষ্টি হোল । নিঝুম রাত, চারদিকে পিনপতন নিরবতা । এই পরিবেশে পানি ঢালার শব্দটা সত্যিই অদ্ভুত শোনাচ্ছে । সে অনেকক্ষণ ধরে গ্লাসে পানি ঢালার এই শব্দটা উপভোগ করলো । বোতল থেকে গ্লাসে, গ্লাস থেকে বোতলে । ঠিক কতখন ধরে সে এটা করলো, সেটার কথা একদম ভুলে গেলো ।

প্রবল ঘুমে অরুপের শরীর এখন অবশ হয়ে আসছে । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো পাঁচটা বাজে । বাতি নিভিয়ে নরম বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল । প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এল । কয়েকদিন ধরে নিয়মিত দেখা স্বপ্নটা আজকেও দেখল সে ।

লাল টুকটুকে শাড়ী পড়া একটা মেয়ে জ্যোৎস্নাস্নাত রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছে ওর দিকে । মেয়েটির গায়ের রঙের কাছে লাল টুকটুকে শাড়ীকেও ম্লান লাগছে । মেয়েটির গা ভর্তি গহনা । খোলা চুলগুলো সারা পিঠে ছড়িয়ে আছে । মেয়েটি হাটছে আপন মনে । কোনদিকে খেয়াল নেই । অরুপের কাছাকাছি এসে মেয়েটি হঠাৎ থেমে গেলো । ঠিক তখনই অরুপ মেয়েটিকে চিনতে পারলো এবং ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

[বিঃ দ্রঃ বাঙালী মাত্রই সাহিত্যিক । প্রতিটা বাঙালীই জীবনের কোন না কোন মুহূর্তে কমপক্ষে একটা কবিতা অথবা গল্প লিখেন বলে আমার বিশ্বাস । কলেজ লাইফে একটা উপন্যাস লেখার ভুত আমার মাথায়ও ভর করেছিল । লিখতেও শুরু করেছিলাম । শেষ করা হয়নি । আজ হঠাৎ সেই উপন্যাস চোখে পড়লো । এর আগে কারো সাথে শেয়ার করা হয়নি । তাই ভাবলাম আজকে শেয়ার করি । উপরের অংশটি সেই উপন্যাসের প্রথম অধ্যায় । সময় এবং আগ্রহ পেলে বাকি অংশগুলো শেয়ার করবো ধিরে ধিরে । ]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×