কয়েকদিন ধরেই এই সমস্যাটা বেশ ভুগাচ্ছে । কোন কিছুর প্রতি মনোযোগ দিত গেলেই মাথায় কেমন যেন তীব্র যন্ত্রণার অনুভূতি হয় । কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরনগুলো বোধহয় অতি তাড়াতাড়ি উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে । অরুপ বিষয়টা নিয়ে বেশ বিরক্ত । ডাক্তার দেখানো উচিত, কিন্তু কিছু অমূলক ব্যস্ততার কারনে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হচ্ছেনা । মাঝে মাঝে অরুপের মনকে প্রবল ভয় গ্রাস করে নেয় । মনে হয় যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে । একেবারে বদ্ধ উন্মাদ । তবে মাঝে মাঝে ব্যাপারটা ওর কাছে মজারই মনে হয় । পাগল হওয়া ব্যপারটা হয়তো ভালোই হবে । পরিবার এবং উচ্ছ্রিংখল সমাজ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একজন মানুষ ।
অরুপের এক বন্ধু ছিল । তের বছর বয়সে বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ একদিন পাগল হয়ে গেলো । প্রবল শীতের মধ্যেও অরুপের সেই বন্ধু উলঙ্গ হয়ে গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতো । অরুপের তখন মনে হত পাগল হলে বোধহয় সবরকম অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায় । আচ্ছা পাগল হলে ও কি উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে ? না, তাহলে পাগল হওয়াটা আর মজার ব্যাপার থাকবেনা । অরুপের পক্ষে উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা সম্ভব না ।
অরুপ বিছানায় উঠে বসলো । এমনভাবে শুয়ে থাকার কোন মানেই হয়না । বেশকিছুদিন হল সে কোন কিছুই ঠিকমত করতে পারছেনা । আর রাতের ঘুমটাও ঠিকমত হচ্ছে না । আর ঘুমানোর চেষ্টা না করে কিছু একটা করা যাক । বিছানার পাশের টেবিলে ল্যাম্প আছে । অন্ধকারে হাতড়ে খুঁজে ল্যাম্পের সুইচ অন করলো । টেবিল ও বেডের কিছু অংশ উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো । হঠাৎ চোখে আলো লাগায় চোখ জালা করতে লাগলো । চোখে আলো সয়ে এলে ও ঘড়ির দিকে তাকালো । সোয়া-দুইটা বাজে । বিছানা থেকে পা নামিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে অবাক হল সে । প্রতিরাতেই বিছানার পাশে একজোড়া চটি স্যান্ডেল থাকে । আজ নেই । খালি পায়ে হাঁটতে ওর অস্বস্তি লাগে । তাই এই ব্যাবস্থা । অরুপ কিছুক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে রইলো । চটিগুলো কোথায় রেখেছে মনে করার চেষ্টা করলো । বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করেও মনে করতে পারলো না । প্রবল অস্বস্তি নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো । দরজা খুলেই দেখে চটিগুলো পড়ে আছে । ওর কোন ভাবান্তর হলনা । নিঃস্পৃহ চিত্তে চটিগুলো পায়ে দিয়ে বাথরুমে গেলো । বাথরুম থেকে ফিরে রুমমেটদের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল । সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । ও কোনপ্রকার শব্দ না করে আস্তে দরজাটা বন্ধ করলো । প্রায় নিঃশব্দ পায়ে হেঁটে ওর বিছানার কাছে পৌঁছালো । হাত বাড়িয়ে পানির বোতল নিয়ে গ্লাসে পানি ঢাললো । গ্লাসে পানি ঢালার এক অদ্ভুত শব্দ রুমের দেয়ালে বারি খেতে লাগলো । অরুপ ঢকঢক করে গ্লাসের সবটুকু পানি খেয়ে শেষ করে আবার পানি ঢাললো । আবারও সেই অদ্ভুত শব্দটা সৃষ্টি হোল । নিঝুম রাত, চারদিকে পিনপতন নিরবতা । এই পরিবেশে পানি ঢালার শব্দটা সত্যিই অদ্ভুত শোনাচ্ছে । সে অনেকক্ষণ ধরে গ্লাসে পানি ঢালার এই শব্দটা উপভোগ করলো । বোতল থেকে গ্লাসে, গ্লাস থেকে বোতলে । ঠিক কতখন ধরে সে এটা করলো, সেটার কথা একদম ভুলে গেলো ।
প্রবল ঘুমে অরুপের শরীর এখন অবশ হয়ে আসছে । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো পাঁচটা বাজে । বাতি নিভিয়ে নরম বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল । প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এল । কয়েকদিন ধরে নিয়মিত দেখা স্বপ্নটা আজকেও দেখল সে ।
লাল টুকটুকে শাড়ী পড়া একটা মেয়ে জ্যোৎস্নাস্নাত রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছে ওর দিকে । মেয়েটির গায়ের রঙের কাছে লাল টুকটুকে শাড়ীকেও ম্লান লাগছে । মেয়েটির গা ভর্তি গহনা । খোলা চুলগুলো সারা পিঠে ছড়িয়ে আছে । মেয়েটি হাটছে আপন মনে । কোনদিকে খেয়াল নেই । অরুপের কাছাকাছি এসে মেয়েটি হঠাৎ থেমে গেলো । ঠিক তখনই অরুপ মেয়েটিকে চিনতে পারলো এবং ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।
[বিঃ দ্রঃ বাঙালী মাত্রই সাহিত্যিক । প্রতিটা বাঙালীই জীবনের কোন না কোন মুহূর্তে কমপক্ষে একটা কবিতা অথবা গল্প লিখেন বলে আমার বিশ্বাস । কলেজ লাইফে একটা উপন্যাস লেখার ভুত আমার মাথায়ও ভর করেছিল । লিখতেও শুরু করেছিলাম । শেষ করা হয়নি । আজ হঠাৎ সেই উপন্যাস চোখে পড়লো । এর আগে কারো সাথে শেয়ার করা হয়নি । তাই ভাবলাম আজকে শেয়ার করি । উপরের অংশটি সেই উপন্যাসের প্রথম অধ্যায় । সময় এবং আগ্রহ পেলে বাকি অংশগুলো শেয়ার করবো ধিরে ধিরে । ]