somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কুল জীবনের বৃষ্টিভেজা দিনগুলো

২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে একটা ফটো দেখে হঠাৎ করেই স্কুল লাইফের বৃষ্টিভেজা দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো । কেন জানিনা, কৈশোরের যেকোনো কথা মনে পড়লেই বুকের মধ্যে একটা ব্যাথাভাব মোচড় দিয়ে উঠে । আর কোনদিনই ওইসব দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারবোনা বলেই হয়তো এমন হয় । যাইহোক, স্কুল জীবনের বৃষ্টির দিনগুলো ছিল আমার কাছে অন্যরকম উৎসবের উপলক্ষ । গ্রামের স্কুলে পড়তাম । বৃষ্টির দিন মানেই স্কুলে কোন ক্লাস হতোনা । কিন্তু ক্লাস না হলে কি হবে আমরা সবাই স্কুলে জেতাম ঠিকই । বরং অন্যান্য দিনের চেয়ে আরও বেশী জোশ নিয়ে যাইতাম । বৃষ্টিভেজা ঠাণ্ডা ওয়েদারে বৃদ্ধপ্রায় শিক্ষকগুলা টিচার্স রুমে বসে বসে ঝিমাইত । আমাদের হই হুল্লোড়ে বাঁধা দেবার মত কেউই থাকতোনা । কাজেই বাঁধভাঙ্গা হই হুল্লোড় হত স্কুলের পুরা সময়টা জুড়ে ।
অথবা বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলার পাইতারা শুরু হয়ে যেত । বৃষ্টিতে ভিজে স্কুলের মাঠের কাদায় লুটোপুটি খেয়ে ফুটবল খেলার সেই স্মৃতিকে লিখে প্রকাশ করার ক্ষমতা হয়তো কাররই নাই । খেলা শেষে স্কুলের পাশের ছোট্ট নদিতে ঝাপিয়ে পড়ে দাপাদাপি চলতো আরও কিছুক্ষণ । শরীর ক্লান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়তে চাইতো । কিন্ত মন! কখনই ওই নদির ঘোলা পানি থেকে উঠে আসতে চাইতোনা ।
অথবা ক্লাসরুমের পাশের অব্যাবহিত রুমে বসে সম্পা সারকার অনু'র গান শোনা । অনু আমার স্কুল জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু এবং আমার জীবনের প্রথম প্রেম । সে এখন কোথায় আছে আমি জানিনা । খুব সহজেই এই মেয়েটিকে আমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে যেতে দিয়েছি । যাই হোক, বৃষ্টির দিনগুলোতে সবাই যখন হই হুল্লোড় করা নিয়ে ব্যাস্ত ঠিক তখন হটাত করেই অনুকে ডেকে নিয়ে ওই ঘরে চলে যেতাম । আমার ডাক শুনেই ও বুঝত আমি ওর গান শুনতে চাচ্ছি । আমিও জানতাম আমি চাইলে ও গান শোনাবেই । তারপরেও অনু খুব সহজে গান শুরু করতোনা । আমার বিভিন্ন ব্যাপারে অভিযোগ তুলে কিল ঘুষি দিত বেস কিছুক্ষন । কিলঘুশির জবাবে আমিও যে চুপ থাকতাম এমনটা না । আমাকে একটা মারলে আমি তা সুদে আসলে শোধ দিতাম । অদ্ভুত ব্যাপার হোল এই মেয়েটি কখনই আমার উপর রাগ করে থাকতোনা । একবার আমি ওর কপালে এতো জোরে ঘুষি মারি যে কিছুক্ষনের মধ্যেই কপাল ফুলে ওঠে ভয়ঙ্করভাবে । আমিতো ভয়েই অস্থির । স্যারদের প্যাদানি খাবার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত । স্যার আসলে ও বলল যে দরজার সাথে মাথা লেগে এরকম হয়ছে । স্যার ওকে বাসায় পাঠিয়ে দিল ।
গানের প্রসঙ্গে ফিরে আসি । কিলঘুষি চলতে চলতেই গান গাইতে শুরু করতো অনু । আমি তখন গানে হারিয়ে যেতাম । মুগ্ধতার অন্য একটা জগতে প্রবেশ করতাম । ওই বয়সেই অনু "জনমও জনমও তব তঁরে কাদিব" "শাওনও গগনে ঘোর ঘনঘাটা" "অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে" শীর্ষক গানগুলো অসম্ভব ভালো গাইতো । বৃষ্টির ঝঙ্কার আর অনুর কণ্ঠের সুরের ঝঙ্কার দুই মিলে আমার কৈশোরের দুরন্ত মনকেও উদাস করে তুলত । আহারে! সেই দীনগুলা । এখনো প্রতিবছর অন্তত দুইবার সপ্নে আমি স্কুলের সেই রুমে ফিরে যায় । অনুর সাথে কিলঘুশি বিনিময় শেষে মুগ্ধ হয়ে ওর গান শুনি ।

স্কুল ছুটি হলে এক ছাতার নীচে অনুর সাথে বাড়ির পথে হাটতাম । সবই ছিল অন্যরকম সুখের অনুভুতিতে পরিপূর্ণ ।

আমাকে যদি কৈশোরের একটা মুহূর্ত ফিরিয়ে দেওয়া হয়, আমি তাহলে অনুর কণ্ঠে গান শোনার মুহূর্তটা ফিরে পেতে চাইব । আমাকে যদি কৈশোরের একটা দিন ফিরিয়ে দেয়া হয়, আমি স্কুল জীবনের একটা বৃষ্টিভেজা দিন ফিরে পেতে চাইব ।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×