প্রথমেই বলে নিই কেউ যদি এ লেখাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্বেষী কারো লেখা বলে ভেবে পড়া শুরু করে থাকেন, তবে তা পুরোপুরিই ভুল করবেন। এটি ঢাবি বিদ্বেষী তো নয়ই, বরং অতিমাত্রায় ঢাবিপ্রেমী একজনের লেখা। মা- বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে যেয়েই হোক আর নিজের ইঞ্জিনিয়র হওয়ার অদম্য ইচ্ছা ত্যাগ করতে না পারার জন্যই হোক, ঢাবিতে শেষ পর্যন্ত পড়া না হলেও সারাজীবনের স্বপ্নের ইনস্টিটিউশনের প্রতি আমার ভালোবাসা কোনদিনই কমেনি। বন্ধুদের সাথে অনেকসময়ই ঢাবির পক্ষ হয়ে লড়াই করতেও অনেকসময় বাধ্য হতে হয়। কিন্তু কিছুদিন পরপরই এমন সব ঘটনা ঘটে, যার কারণে আমাদের মত মানুষদের মুখ বন্ধ করে ফেলতে হয়। যেমন আজকের ঘটনা। খবরে পড়লাম আজকের সংঘর্ষের কারণ দুর্ঘটনা যেটার কারণ বাসশ্রমিকদের সাথে হাতাহাতি।
এখন আমার প্রশ্ন :
১। কতগুলো বাসশ্রমিকের সাথে ঢাবির মত একটা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মারামারি লাগে কিভাবে? এদের সাথে হাতাহাতিতে কি ঐ ছাত্রদেরই ক্লাস ডিমোশন হয় না ?
২। স্বাভাবিকভাবেই কি মনে হয় না যে এরা কিছুসংখ্যক বিপথগামী তথাকথিত ছাত্র ? এদের জন্য পুরো প্রতিষ্ঠানের নাম ডুবানোর অর্থ কি ?
৩। শাহবাগ এলাকায় অর্ধশত গাড়ি ভাংচুর। কিছু হলেই গাড়ি ভাঙা যেন একটা নিয়ম হয়ে গেছে। কেন ? গাড়ি যারা চালায় অনেকেই কষ্ট করে এই ব্যয়টা সহ্য করেন। অযথা সাধারণ মানুষের উপর এটা কি ধরণের অত্যাচার ?
৪। আমরা কি তাহলে ধরে নিব ঢাবির লেবেল পেয়ে গেলেই একশ্রেণীর ছাত্র ধরে নেয় যে তারা যা খুশি তাই করার লাইসেন্স পেয়ে গেছে ? তাদের মনে রাখা উচিত যে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপীঠে এত কম খরচে তারা যে পড়াশুনা করে, সেটা কিন্তু সম্ভব হয় দেশের মানুষের কারণেই, সে কারণে হলেও অনেকক্ষেত্রে তাদের দেশের প্রতি কিছু দায়িত্ব থাকে।
লেখাটা লেখা হয়েছে আজকের ঘটনার উপরে কিন্তু জিজ্ঞাসাগুলো শুধু আজকের না। ভাবতে খারাপ লাগে এই সেই বিশ্ববিদ্যালয় যাকে একসময় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হতো, এরা সেই ছাত্রদের উত্তরাধিকার যারা না থাকলে হয়তো আমাদের ভাষা হয়ে যেত উর্দু, দেশটা হয়তো কখনোই বাংলাদেশ হতো না বা আমরা এখনো হয়ত স্বৈরাচার শাসিত বলেই পৃথিবীতে পরিচিত হতাম। এর থেকে পরিত্রানের কি কোন উপায়ই নেই ?
শেষ করছি লোকপ্রশাষণ বিভাগের এ.কে.ফিরোজ স্যারের একটা কথা দিয়ে। স্যার তার Introductory ক্লাসে বলেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটা জায়গা যার কোন ঢুকবার বা বেরোবার দরজা নেই, এর কোন নির্দিষ্ট সীমানাপ্রাচীর নেই কেন না এটা এমন একটা জায়গা যেখানে সবাই সবসময় আমন্ত্রিত, শুধু দুঃখের বিষয় এই যে যাদের জন্য এই বিশাল পরিসরটা সাজিয়ে রাখা হয়েছে, তাদেরকেই এটি এখন আর আটকে রাখতে পারে না। খোলা দরজাটা দিয়ে ঢোকার বদলে বের হয়ে যেতেই তারা বেশি আগ্রহী।
এরকম একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যে আহত ভঙ্গিতে শেষ কথাটুকু বলেছিলেন, তা মনে পড়লে আজও কষ্ট লাগে। আমাদের শিক্ষকেরা কি এরকম কষ্টই ডিজার্ভ করেন আমাদের কাছে ?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১১ রাত ১:৩৫