somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি আদর্শ সামাজিক সংগঠনের কাঠামো

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামজিক সংগঠন হলো, যা কতিপয় ব্যক্তি বিশেষের সমন্বয়ে শিক্ষা, সংষ্কৃতি ইত্যাদি সহ সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন কল্পে কাজ করার লক্ষ্যে গঠিত হয়। অর্থ্যাৎ পারস্পরিক স্বার্থে সুনির্দিষ্ট লক্ষ অর্জনের জন্য একটি সামাজিক পদ্ধতি ও সুনির্দিষ্ট কাঠামোর ভিতর অন্তর্ভুক্ত হওয়াকেই সংগঠন বলে । একটি আদর্শ সামাজিক সংগঠন শিক্ষা, সংষ্কৃতি, স্বাস্থ্য উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে । ফলশ্রুতিতে সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন হয়, এমন কি সামজিক শান্তি শৃংখলা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। এক কথায় বলা যায় সামাজিক উন্নয়নে, সামাজিক সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে । তবে তার জন্য প্রয়োজন সঠিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কাজ করা ।
একটি আদর্শ সংগঠন কাঠামো গড়ে তুলতে হলে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা একান্ত প্রয়োজন।

সুনির্দিষ্ট কাঠামো: প্রতিটি সংগঠন একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোর আওতায় গড়ে উঠে। কাঠামো সংগঠনের প্রতিটি উপাদানের পারস্পরিক সম্পর্ক ও তাদের যথাযথ ব্যাবহার নির্দেশ করে। অর্থ্যাৎ, একটি সংগঠন কোন ধরনের কাজ করবে, কি কাজ করবে, কে কোন কাজ করবে ইত্যাদি সর্বদা সুনির্দিষ্ট থাকবে।

বিশেষায়ন ও সমন্বয় সাধন: একক প্রচেষ্টায় মানুষ সবকিছু অর্জন করতে পারে না। কারণ কোনো কাজ কেউ জানে আবার কেউ জানে না, আবার কেউ অনেক বেশি জানে। সংগঠনের মাধ্যমে এ সকল কিছুর সমন্বয় সাধন করা হয় ও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে গবেষণা করা হয়।

সামাজিক পদ্ধতি: প্রতিটি মানুষ যেমন একটি সামাজিক পদ্ধতির সঙ্গে জড়িত, তেমনি একটি সংগঠনও অপর একটি সংগঠনের সাথে সামাজিকভাবে জড়িত। তবে বিভিন্ন সংগঠনের কাজ ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। অনেক সময় আবার একটা সংগঠন অন্য একটি সংগঠনের পরিপূরক হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে একটি সংগঠন অন্য সংগঠনের জন্য সামাজিক দ্বায়িত্ব পালন করে।

ব্যাক্তি ও দলের সমন্বয়: একা কোনো ব্যাক্তি একটি সংগঠন পরিচালনা করতে পারে না যেহেতু সংগঠন একাধিক ব্যাক্তির সমন্বয় তাই তাদের উদ্দ্যেশ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান একত্রিত করে সংগঠন সৃষ্টি করতে হবে।

পারস্পরিক স্বার্থ: পারস্পরিক স্বার্থই হচ্ছে সংগঠন গড়ে ওঠার মূল ভিত্তি। মানুষ একে অপরের স্বার্থে কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে পারস্পরিক স্বার্থ পূরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে পারস্পরিক স্বার্থ ও সংগঠনের স্বার্থ এক নয়।

সর্বদাই লক্ষে নির্দেশিত: একটি আদর্শ সামাজিক সংগঠনে কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। আদর্শ সংগঠন সর্বদাই লক্ষ নির্দেশিত পথে কাজ করে এবং সে লক্ষ পূরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় চালায়। লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়া চলবে না।

সহ-শিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে সামাজিক সংগঠন: অনেকে মনে করে সংগঠনে কাজ করা মানে সময় নষ্ট, পড়ালেখার ক্ষতি! আসলে এটা ভুল ধারণা । বরং সুস্থ সংগঠনগুলোতে কাজ করার মাধ্যমে ইতিবাচক গুণাবলি তৈরি হয়। দায়িত্বশীলতা বাড়ে। নেতৃত্বগুণ তৈরি হয়। একজন সংগঠন করা ব্যক্তি “সংগঠন না করা” ব্যক্তির চেয়ে আলাদা।’ সংগঠন মানুষকে সহনশীলতা শেখায়, একসঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে।সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াকেন্দ্রিক যা-ই হোক না কেন, তার নির্দিষ্ট মূল্যবোধ বা আদর্শ থাকে। সেই সংগঠনের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ব্যক্তি যেমন নিজেকে বিকশিত করতে পারে, তেমনি সামাজিক সুস্থতাও আসতে পারে এই উপায়ে। শিক্ষা প্রতিষ্টানে বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন প্রকারের সংগঠনের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়, যার অধিকাংশই আঞ্চলিক ছাত্র সংগঠন । পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে তারা পিকনিক, খেলাধুলা, ঈদ পূনর্মিলনীসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়োজন করে থাকে । এর পাশাপাশি তারা বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে । যেমন, বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশ ।

সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব : যারা দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার চর্চা করেন এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলে দেশ বা সমাজের জন্যে কিছু করতে চান তাদেরকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং তাদের মধ্যে থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে । তবে সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব গ্রহণে নিরুৎসাহিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য সংগঠনের কমিটিতে থাকা উচিত না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকের মূখ্য উদ্দেশ্য থাকে সংগঠনের পদবী লাভ করা। সভাপতি, সেক্রেটারি বা কার্যকরী কমিটিতে একটি পদ চাই! পদ পাওয়ার পর তারা হয়ে যান নিষ্ক্রিয়। এদের ধারণা এসব পদবীর প্রচারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায় । এই ধরনের ব্যক্তিদের সংগঠনের দ্বায়িত্ব থেকে দূরে রাখা ভালো ।

পরিশেষে একটা কথাই বলব, সঠিক লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেলে সামাজিক সংগঠন সত্যিকার অর্থেই সমাজের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। তাই আমদের সকলের উচিৎ হবে, সভাপতি, সেক্রেটারি ইত্যাদি পদবীর লোভ বিসর্জন দিয়ে, সম্মাননা উপাধী বানিজ্যের চিন্তা না করে; সত্যিকার উন্নয়নমূলক কাজের সংকল্প নিয়ে সংগঠন করা। তা করতে পারলেই সম্ভব হবে সমাজের উন্নয়ন করা। নিজের এলাকাকে আদর্শ এলাকা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা, সম্প্রীতির বন্ধন দূড় করা। তাহলে সাধারণ মানুষ সম্মানের সাথে ব্যক্তি ও সংগঠনকে স্মরণ করবে অনন্ত কাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৩১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×