somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের রাজনীতি ও আমাদের ভাবনা ..

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকে বলেন বাজার অর্থনীতি বা মুক্ত বাজার অর্থনীতির চাপ বাংলাদেশে সহ্য করার ক্ষমতা কি আছে ।হ্যাঁ কি না তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল এখন পা যখন চলে গেছে সেদিকে, তাই এখন পেছনে ফিরে তাকানোর আর কোন সুযোগ নেই ।তাকালে বিপদ এর চেয়ে বেশি হবে বৈ কম হবে না ।

এক্ষেত্রে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কটারমনের একটি উক্তি প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয় । ভেঙ্কটারমনের উক্তিটি ছিল এরকম ''আন্তর্জাতিক ভাবে চালু করার আগে আমাদের উচিত অভ্যন্তরীণ ভাবে মুক্ত বাজার চালু করা ।'' কিন্তু আমরা সেই প্রথম থেকেই যখন দেশের অর্থনীতি শিশু অবস্থায় মুক্ত বাজারে পা ফেলে মনে হয় দোষ না হলেও কিছু টা ভুল করে ফেলছি । দোষ বলছি না করন বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে তখন না হলেও এখন কিন্তু প্রবেশ করতেই হতো ।আর ভুল বলেছি এজন্য যে একটু আগে বাগে প্রবেশ করার জন্য ।

তাই বলতে হয় ''হনুমান কি চেয়েছিল লেজের আগুনে মুখ পুড়তে ,কিন্তু যখন দেখা গেল মুখে লেজ না ঢুকালে তার নিজেকেই পুড়ে মরতে হবে ,তখন বাধ্য হয়ে মুখপোড়া সাজাই শ্রেয়েতর মনে করল হনুমান ।'

সেজন্য মুক্তবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবেই ।

ভারত কিন্তু গত শতকের নব্বই দশক থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত বাজারে প্রবেশ করে ।এখন বলতে গেলে মুক্তবাজারে ভারতের বিশাল প্রভাব রয়েছে ,ফলে ভারত এখন আর কাউকে তোয়াজ করে চলে না ।আমরা যদি ভারতের অর্থনীতির দিকে থাকাই ,তাহলে দেখব সেখানে রয়েছে বিশাল অংকের এক মধ্যবিত্ত গোষ্ঠি ।গত বছর ফেবুয়ারি মাসে দ্য ইকনমিক টাইমস একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যেখানে বলা হয় আগামী পাচঁ বছরের মধ্যে ভারতের মধ্যবিত্তের সংখ্যা ২৬২ মিলিয়ন হয়ে যাবে ।রিপোর্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয় তা হলো এই বৃদ্ধি প্রাপ্ত মধ্যবিত্ত ভোক্তরা হল বিভিন্ন কম্পানির লক্ষ্যের মধ্যে ।কিন্তু কেন ? কারন এই বিশাল অংকের মধ্যবিত্তের সংখ্যাই হল বিভিন্ন কম্পানির আয়ের প্রধান উৎস,পন্যের মূল ক্রেতা ।তাই এদের বৃদ্ধি নিয়ে তাদের যত মাতামাতি ।


বুশ সাহেবের আমলে আমরা দেখেছি বুশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ঘনঘন ভারত ভ্রমণ করতে,ভারতের সাথে লিয়াজোঁ করতে।
।ভ্রমণের লক্ষ্য কি ছিল । আফগানিস্তান আক্রমনে ভারতের সহযোগিতা ? তা হতে পারে । কিন্তু তার চেয়ে বেশি মার্কিন পন্যে দিয়ে ভারতের মধ্যবিত্তের বাজার দখল করা ।এখন যদি ভারতের সাথে আমেরিকার সুসম্পর্কের কোন রূপ অধঃপতন ঘটে তবে আমেরিকা বিশাল এক বাজার হারাবে ।যা সুচতুর মার্কিনরা কোন ভাবেই চাইবে না ।এজন্য মাঝে মাঝে দেখা যায় ওবামা প্রশাসনকে ভারতকে তোয়াজ করে চলতে ।গত মাসে ইরানের তেহরানে যে ন্যাম সম্মেলন হয়েছে ,সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ইরানের প্রেসিডেন্টের সাথে ওবামার পক্ষে ওকালতি করতে দেখা গেছে ।ভারতের সত্যিই এতো চোখ ধাঁধাঁনো প্রভাব বিশ্ব মুরিধের কাছে । এর মূলে কিন্তু ভারতের সেই মধ্যবিত্তের বাজার মূখ্য ভূমিকা রেখেছে ।

অথবা আমরা যদি দেখি, মার্কিনদের ইরানের প্রতি অবরোধ আহবান অগ্রাহ্য করে ভারত কিন্তু বলেই দিয়েছে ,আমরা ইরানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ছেদ দিতে অপারগ ।এর ফলে ভারতের কিন্তু ভালই ফায়দা হল । একদিকে ইরানের সাথে ভালই সর্ম্পক হল ,অন্যদিকে ভারত তেলের মূল্যে ভাল একটা ছাড় পাবে বলে অনেকেই মনে করেন ।এই হল ভারতের রাজনীতি ।সেখানে লাভ আছে ,সেখানে কারও পরোয়া না করে লাভের দিকে দৃষ্টি দেওয়াই ভারতের বাজার নীতির মূল কথা ।

''বার্লিক প্রাচীর কেনো ভাঙ্গা হল ।রাজনৈতিক কারনে ? রাজনৈতিক ধোয়া তুলা হলেও তার গভীরে কিন্তু কাজ করেছে অর্থনীতি ।পূর্ব জার্মানির আদেশ মূলক অর্থনীতি(command economy),পশ্চিম জার্মানির বাজার অর্থনীতি পরাভূত করেছে ।''তাই যতই অবরোধ আর হুকমি করা হোক না কেন যেখানে বাজার অর্থনীতি আছে সেখানে কোন বাধাঁই কাজে আসবে না ।আজকের মুক্তবাজের যারাই চালাক তারাই বেশি সুফল ভোগী।

তবে আমেরিকার সাথে ভারতের এই অম্লমধুর সম্পর্কের মাঝে আরেকটি কারন আছে ।চীনকে মোকাবেলা করতে ইউএস পাশে পাওয়া । যেমন 'নিউক্লিয়ার নন প্রলিফারেশন ট্রিটি' এর লংঘন হওয়া সত্ত্বেও ২০০৫ সালে বুশ প্রশাসন ভারতকে পেন্টাগনের 'New Framework for US-India Defense Relations' প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও অ্যাডভান্সড ইউএস নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে।
এবং ভারতও এশিয়ায় চীনকে মোকাবেলা করতে ওয়াশিংটনের সাথে কৌশলগত মিত্রতা স্থাপন করেছে।

আজ যদি আমরা মিয়ানমারের দিকে দৃষ্টি দেই তবে দেখতে পাই দেশটির উপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া এবং আবার সম্পর্ক সৃষ্টি করার জন্য যাই কিছু করা হচ্ছে সেখানে মূল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে মিয়ানমারের বাজার দখল ।প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপূর দেশটির সম্পদ ছলেবলে কৌশলে কুক্ষিগত করা ।ফলে দেখা যায় মিয়ানমারে আমেরিকার বিনিয়োগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।আবার দেখেন এই যে রোহিঙ্গাদের এই সমস্যায় মিয়ানমারকে চাপ না দিয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ ।কিন্তু এর জন্য দায়ী তো মিয়ানমার ।কিন্তু সেখানে কিছু না বলে শুধু চাপ আর চাপ বাংলাকে ।কারন ওরা চায় না মিয়ানমারকে ক্ষেপিয়ে তাদের বাজার নষ্ট করতে । তাই যেখানে লাভের আনাাগোনা সেখানে মানবতা পরাভূত ।

কিন্তু বাংলাদেশ কেনো সুযোগ নেয় না ।ভারতকে ট্রানজিট দেবে ভাল কথা, বিনিময়ে ভাল মাশুল আদায় করা আমাদের কি কাজ নয়?
।আমাদের সামনে বিরাট এক সুযোগ ,আর্থিক ভাবে লাভমান হওয়ার সুবর্ণ এক সুযোগ । শুধু তাই নয় ,ট্রানজিটের সুযোগ নিয়ে আমরা ভারতের কাজ থেকে অনেক কিছু আদায় করে নিতে পারি । যদি সঠিক রাজনৈতিক চাল খেলতে পারি ।

ইউরোপের মহামন্দার ঢেউ কিন্তু আমাদের উপর লাগতে আর বেশি দিন বাকী নয় ।তাই আমাদের সামনে বিরাট এক সমস্যা উকিঁ দিচ্ছে ।আমাদের প্রধান রপ্তানি এলাকা ইউরোপ হারিয়ে গেলে কিছুই করার থাকবে না ।তাছাড়া সেখানকার এই সমস্যায় আমাদের প্রবাসি ভাইদের চাকরি হারানোরও আশংক আছে ।ফলে আমাদের রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স উভয়টা হারানোর ভয় আছে ।তাই ব্যবসা -বাণিজ্যে ও রপ্তানির জন্য আমাদের নতুন বাজার খোজাঁ আশু প্রয়োজন ।
আমি একটি কথা সবসময় বলি তা হলো দেশের ভাল না করে শুধু শুধু রাজনীতি করে লাভ কি ।তাই দয়া করে দেশের কথা ভাবুন ।সময় খুবই কম ।




তথ্যসূত্র: মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বাংলাদেশ ,বিরূপক্ষে পাল
বিভিন্ন পত্রিকা ও ব্লগ ।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৯
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×