somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংসদ রনি ভাই গ্রেফতার হলে দরবেশ বাবা কেন নয় ?

২৬ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই সপ্তাহের টক অফ দ্যা ইস্যু বহুল আলোচিত সাংসদ রনি ভাইয়ের সাংবাদিক পেঠানোর ঘটনা ।এই ঘটনার জন্ম হয়েছে রনি ভাইয়ের দরবেশ বাবার সমালোচনা করে লেখা,টক শোতে আলোচনা এবং তারই ঘটনা পরিক্রমায় শেষ পর্যন্ত রনি ভাইয়ের বিরোদ্ধে মামলা, জামিন নাকচ,গ্রেফতার এবং সর্বশেষ কারাগারে ।এই ঘটনা গুলোর সুক্ষ্ম বিশ্লেষণের তাগিদে দেশের সংবিধান ,সরকার ব্যবস্থা ,রাজনীতিকদের টাচুকারি স্বভাব এবং দেশের মানুষের চিন্তা ও চাওয়াকে নিয়ে একটু আলোচার প্রয়োজন বোধ করি ।না হলে লেখাটি সার্থকতা পাবেনা গ্যারান্টি ।

গেল বছর ১লা সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের একটি সেমিনারে ইলিনয় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন-“বাংলাদেশে সাংবিধানিক ভাবে প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র কায়েম হয়েছে’’তাহলে একটু দেখা যাক দেশের সংবিধান কি বলে বা একনায়কতন্ত্রের এই অধিকার কি দিয়েছে ''কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন ,তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে'' ৭০(১)।

বুঝেন কিভাবে একজন জনপ্রতিনিধির টুটি চেপে ধরার কি সাংঘাতিক ধারা সংবিধানে সংযোজন ।অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোন সাংসদকে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই ,নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাওয়া মানেই হয় দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলবে নয়তো বিদায় হবে ।

একটি মজার কাহিনী বলি বেশি দিন আগের নয় এই সরকারের আমলের ।পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনের দিন ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ।কিন্তু পরবর্তিতে তাদেরকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভোট দিতে হয়েছে এজন্য যে যদি তারা ভোট না দেন তবে সংবিধান অনুযায়ী তাদের আর সংসদ পদ থাকবে না ।

এরকম একটা বিদঘুটে রাজনৈতিক কালচার নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে রাষ্ট্র আর কতো দূর এগিয়ে যাবে ।দেশের বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে দেশের আপামর জনসাধারনও চায় এই খায়ের খাঁ ব্যবস্থার পরিবর্তন; এমন কি আড়ালে-আবডালে উভয় দলের অনেক রাজনীতিকও চান এই অবস্থার পরিবর্তন হোক । রনি ভাইর লেখা পড়ে ,আলোচনা শুনে মনে হয়েছে তিনি চান এই অবস্থার পরিবর্তন হউক ।চাটুকারি বৃত্তের বাহিরে গিয়ে সাংসদরা জনগনের পক্ষে বলুক ,জনগনের চাওয়া কে মূল্যায়ন করুক ।

অনেক লীগ সমর্থক কে দেখেছি রনির সমালোচনা করতে এই বলে রনির লেখালেখিতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে । আমরা দেখেছি গোলাম মাওলা রনি যতটা না সরকারের সমালোচনা করছেন তার চেয়ে বেশি সরকারকে সর্তক করেছে ।প্রায় টকশোতে দেখা গেছে সরকারের একটু সমালোচনা করে কৌশলে কিন্তু তিনি সরকারের বিভিন্ন কাজের প্রশংসা করেছেন ,সরকারকে সর্তক করে দিয়েছেন ।হয়তো জানি না রনি ভাই ম্যাকিয়াভেলির সেই থিয়রিতে বিশ্বাস করেন যে কারও প্রশংসা যদি করতে চায় তবে প্রথমে তার একটু সমালোচনা করে নিও ।

রনি ভাইকে ধন্যবাদ দিতে হয় সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ।দেশের কতো জনের বুকের পাঠা আছে এমন ক্ষমা চাওয়ার ।ধরে নিলাম উভয়ের অভিযোগ সত্য ।যাই হোক ঘটনাটি দুঃখ জনক ।গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর রনি ভাই তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেন ''আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও আমার অন্তরের অন্তর স্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি- আমাকে জেলে পাঠানোর মাধ্যমে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে একটি মাইল ফলক স্থাপন করার জন্য। আমার শাস্তির বিনিময়ে হলেও শেয়ার বাজার চাঙ্গা হোক, সাগর-রুনির হত্যাকারী ধরা পড়ুক এবং প্রিয় দলটি আবার ক্ষমতায় আসুক, দেশবাসী শান্তিতে থাকুক।''এই স্ট্যাটাসে বুঝা যায় দেশের প্রতি,আইনের প্রতি,দলের প্রতি ,প্রধানমন্ত্রীর প্রতি রনি ভাই কতোটা আন্তরিক এবং সত সাহস নিয়ে রনি ভাই দরবেশ বাবার পেছনে লেগেছেন ।বস্তুত রনি ভাই তাঁর কথা ও কাজের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিতে যে ধারা টি শুরু করতে চাচ্ছে তা কিন্তু ইতিবাচক এবং আপামর জনসাধরনের এতো সমর্থনও আছে ।এবং প্রতিটি দলের ভেতর এবং এই ধরনের লোকের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পাবে ,সাদাকে সাদা-কালোকে কালো বলতে পারবে ততই দেশের রাজনীতির জন্য মঙ্গল ।অথচ আমরা সেই মঙ্গলের দিকে যেতে এক দমই নারাজ ।আশ্চর্য বটে !

আগেই বলছি এই ঘটনার পত্তন কিন্তু শেয়ার খাদক,দেশের ৩৩ লাখ শেয়ার বিনিয়োগ কারিকে ফতুর করা ,স্বঘোষিত দেউলিয়া দরবেশ বাবার সামালোচনা ।কিন্তু পরিতাপের বিষয় সেই দরবেশ বাবাকে কিন্তু এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি ।জনাব মাওলা তো শুধু বলেন নি যে শেয়ার কেলেংকারির মূল হোতা এই দরবেশ বাবা ।তার আগে আরও অনেকে বলেছেন কিন্তু এই বাবার নাগের পশম টাই আজ পর্যন্ত সরকার ধরতে পারেনি ।এ্কজন সাংসদের দরবেশের তারিফ করা উচিত না জনগনের পক্ষে দাঁড়ানো উচিৎ?অবশ্যই জনগনের পক্ষে ।হায় সেলুকাস যেখানে আজ দরবেশ বাবাদের জেলে থাকার কথা তা না হয়ে তার বিচার দাবি কারি জনগনের নেতা আজ জেলে ।

গোলাম মাওলা রনির গ্রেফপ্তারের পর অনেক মিডিয়া দেখা গেল উঠে পড়ে লেগেছে তার বাবার আগের অবস্থা নিয়ে রিপোর্ট হচ্ছে ।এই আমরা ভারতের এপিজে আবুল কালাম মাঝির ছেলে ছিলেন ,বাংলাদেশের বর্তমান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর রাখাল ছিলেন এই সব বলে আমরা মানুষ কে মটিভেশন করি ।কিন্তু দুঃখের বিষয় এই আমরাই আবার রনির বাবা এমন ছিলেন বলে রিপোর্ট করি যেন বাবা এমন ছিলেন তাই রনির এমপি হওয়া উচিত হয়নি ।বুঝি না আমাদের একই অঙ্গে কেনো এতো রূপ ?

রনি ভাইর তার কৃতকর্মের জন্য মানে এই দুঃখজনক ঘটনার জন্য বিচার হবে আশা করি ।তবে যেটুকু হয়েছে আমি মনে করি দেশের আইনের শাসনের জন্য একটি মাইল ফলক ।পাশাপাশি আশা করব যেন দরবেশ বাবা যেন ছাড় না পান ।তা না হলে এটা হবে অপশাসনকে মানুষের চোখে সুশাসন দেখানোর জন্য রনি ভাইকে বলির পাঠা বানানো হচ্ছে ।


সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:৪১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×