পূর্বকালে বাঙ্গলা>বাংলা পাঁচটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল – রাঢ়, বাগড়ি, বঙ্গ, বরেন্দ্র ও মিথিলা। বঙ্গ আবার বিভক্ত ছিল তিনটি অঞ্চলে – লক্ষ্মণাবতী, সুবর্ণগ্রাম (সোনারগাঁও) ও সপ্তগ্রাম। সপ্তগ্রাম বা সাতগাঁও ছিল মধ্যযুগীয় বাংলার একটি অন্যতম প্রধান বন্দর এবং দক্ষিণবঙ্গের প্রধান নগরী। অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় অবস্থিত ব্যান্ডেল নগরী থেকে চার কিলোমিটার দূরে এই নগরীটি অবস্থিত ছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে এই অঞ্চলটি একটি প্রায়-গুরুত্বহীন হাট-অঞ্চলে পরিণত হয়।
সবগুলো অঞ্চলকে একত্রিত করে সুলতান শামস উদ্দীন ইলিয়াস শাহ (১৩৪২-১৩৫৮) গৌড়কে রাজধানী করে স্বাধীন বাঙ্গলা সালতানাত গঠন করেন। এই সালতানাতই আধুনিক বাংলাদেশের প্রাথমিক রূপ। এই স্বাধীন বাঙ্গলা সালতানাত ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে বিলুপ্ত হয়।
১৫৩৩ সালে আলফেনসো ডে মেলো নামে এক পর্তুগিজ পাঁচটি জাহাজ ও একশো লোক নিয়ে সপ্তগ্রামে এসে উপস্থিত হন। তারা সুলতানকে প্রচুর উপঢৌকন পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সব উপহারসামগ্রী আসলে ছিল চোরাই মাল। সেকথা বুঝতে পেরে খুশি হওয়ার পরিবর্তে সুলতান তাদের বন্দী করেন। এর পরে সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। গোয়ায় পর্তুগিজ গভর্নরের কাছে খবর পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ডায়ানো রেবেলো সসৈন্যে সপ্তগ্রামে উপস্থিত হন। সুলতান গিয়াসুদ্দিন মাহমুদ শাহ অবশ্য বিরোধের পথে না গিয়ে বন্দী পর্তুগিজদের মুক্তি দেন এবং তাদের সপ্তগ্রাম ও চট্টগ্রামে বাণিজ্য করার অনুমতি প্রদান করেন। এর পিছনে অবশ্য সুলতানের অন্য উদ্দেশ্য ছিল। তিনি আসন্ন গৃহবিবাদে পর্তুগিজদের সমর্থন পেতে চাইছিলেন।
এই সুযোগে ১৫৩৫ সাল থেকে পর্তুগিজরা সপ্তগ্রামে বসতি স্থাপন করে। শেরশাহ সপ্তগ্রাম আক্রমণ করলে পর্তুগিজরা সুলতানের পক্ষ নেন। কিন্তু ১৫৩৮ সালে পর্তুগীজরা তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। এই বছরই সুলতান গিয়াসুদ্দিন মাহমুদ শাহ পরাজিত হন এবং বাঙ্গলা সালতানাত বিলুপ্ত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৩৫