আজ দিন ভর ***সময় টিভির**একটা খবর আমাকে খুব পীড়া দিচ্ছে,
তা হল বৃহত্তর রংপুরে ৯৫% তালাকের কথাটি শুনে ।বেশীর ভাগ তালাক
নাকি হচ্ছে যৌতকের কারনে যদিও সিলেটে তালাকের পরিধিটা ভিন্ন ।
এই খবরটি শুনে আমার এক পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল, জন্ম
সুত্রে আমরা চার ভাই কিন্তু আমার জেঠা আব্বু ( আমার বাবার বড় ভাই )
তার কোন পুত্র সন্তান ছিল না কিন্তু মেয়ে ছিল চারজন ।
যাক তাদের সবার বিবাহ হয়েছে, কিন্তু প্রতি ঈদে আপুরা যখন বেড়োতে
আসতো আমাকে ধরে মাঝে মাঝে, এমন কান্না কাটি করতো তা বলে শেষ
করতে পারবো না ।মেয়েরা তো মমতাময়ী এক আপু কান্না শুরু করলে
আস্তে আস্তে সবাই শুরু হয়ে যেত । এদিকে তাদের কান্না দেখে আমারও
চোখের পানি বের হয়ে আসতো ।
তাদের একটাই আবদার আমি কেন তাদের বাড়িতে যাই না, সব সময়
একটা কথা বলতো তুই যদি আপন ভাই হইতি অবশ্যই যাইতি অবস্তা
বেগতি দেখে রাজি হয়ে গেলাম, আমি বললাম কিছুদিন পরে যাব ।
তখন আমি এইস এস সি তে ২য় বর্ষের ছাত্র ।
গ্রীষ্মের ছুটি মধু মাস আমাদের বাগানের আম, কাঁঠাল, লিঁচু, পেঁয়ারা
ও পেঁপেঁ নিয়ে জেঠাতো বোনের বাড়িতে বেড়াতে গেলাম, আপু একটু
একটু হাসছে আর বলছে ,তা হলে তুই শেষ পর্যন্ত আমাদের বাড়ি চিনতে
পেরেছিস !!
আমি একটু হেসে বাড়ির ভিতরে চলে গেলাম.বোনের দু সন্তান ছেলে আর
মেয়ে ।তারা তো মহা খুসি আমাদের মামা এসেছে মামা এসেছে ।
বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে ,আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছি ।( বৃষ্টির
সময় সবুজ গাছ গুলো যখন বাতাসে দোল খায় খুব ভাল লাগে ) ভাগিনারা
বাইরে বৃষ্টিতে আনন্দ করছে আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি ।এমন সময়
দেখতে পেলাম ছোট্র একটি মেয়ে কাপড় পড়ে ওদের সাথে খেলছে বয়স
সম্ভবত ৭/৮ হবে বউ বউ ভাব তবে খুব সন্দর ।
আপু খুব ব্যস্ত রান্নায়, প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে আমাকে হাত মুখ ধুয়ে আসতে বললো
খানা খাবার জন্য ।খাবার টেবিলে বসে খানা খাইতেছি আমি আর ৩বছরের ছোট্র ভাগিনা । দুলা ভাই প্রাইমারি স্কুলের শিহ্মক আমাদের সঙ্গে নেই, অনেক দুরে
স্কুল হওয়ায় সন্ধায় বাড়ি আসতে হয় ।
যাক মুল কথায় আসি, খাবার সময় লহ্ম করলাম সেই বউ বউ ভাব মেয়েটি
আবার কাপড় পরে এসেছে, আমি আপুকে বললাম,
আপু মেয়েটি কে ? সব সময় কাপড় পরে থাকে এত ছোট্র মেয়ে ।
আপু বললো, পাশের বাড়ির মেয়ে, বিয়ে হয়েছিল তাই কাপড় পরে থাকে ।
আমি বললাম কি ?
আপু বললো – হাঁ
ওই মেয়ের বাবা আর যেখানে বিয়ে হয়েছিল ওই ছেলের বাবা তারা বন্ধু ছিল,
তারা দুজন বিয়াই বিয়াই করে ডাকতো একদিন বিয়াই রহ্মা করার জন্য
মুল্লারে ডাক দিয়ে ৫বছরের ছেলে আর ৫ বছরের মেয়েকে দিয়ে বিবাহ দিয়েছে ।
গত কিছুদিন আগে মেয়ের মা তাদের বাড়িতে বেড়াইতে গিয়ে ছিল সেখানে
তাদের ঝগড়া হওয়ায় মেয়েটিকে তালাক দিয়েছে ।
আমি তো শুনে অবাগ, আশ্চার্য এটা কেমন করে সম্ভব এই মেয়ে কি বুঝে
বিয়ে কাকে বলে ?
আর বিয়েতে সম্মতি কে দিয়েছে ?
আমি একটু মজা করে মেয়েটিকে বললাম- তুমি তোমার শুশুর বাড়ি যাওনা ?
মেয়েটি জবাব দিল – আমাকে তালাক দিছে ।
আমি আবার বললাম- তুমি তালাক বুঝ ?
মেয়েটি বললো- না, মা কইছে আর ওগো বাড়িতে যাওয়া যাইবো না ।
আমি ভাবতে লাগলাম মানুষ কেমন করে এত অমানুষ হয়, তাদের কি
বিবেগ বলতে কিছু নাই, হৃদয় হীন পাষন্ড,এদের ধরে ধরে পাবনায় পাঠানো
দরকার ।আসুন আমরা যারা একটু অহ্মর জানি, সবাই মিলে তাদের প্রতিরোধ
করি ।আপনার পাশে যদি কখনো এমন ঘটনা ঘটে, রুখে দিন তাদের ।যদি
আপনি তাদের সামনে বাধাঁ হয়ে না দাঁড়াতে পারেন তবে আপনি আর তাদের
মধ্যে তফাৎ থাকবে না ।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ ।
মনে রাখবেন ,
**একজন শিহ্মিত মা দিতে পারে একটি শিহ্মিত জাতি **