somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনে আর কোন দিনও এদের ভোট দিবো না...।

০৫ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনের প্রথম ভোটটা নৌকায় দিয়ে এই আওয়ামি লিগকে ক্ষমতায় বসতে সাহায্য করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণে শৈশব থেকেই লিগের প্রতি আমি দুর্বল। লেখালেখি যতটুকু করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মস্তিষ্কে ধারণ করেই করি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য কবিতায়-পত্রিকায়-ফেসবুকে, মঞ্চে-মানববন্ধনে-মিছিলে যতটুকু অংশ নেয়া যায়; নিয়েছি। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় লিগকে যতটা ডিফেন্ড করা যায়, করেছি; এমনকি বিতর্কিত বাকশালকেও জায়েজ বানাবার চেষ্টা করেছি শেখ মুজিবকে ভালোবেসে। ইচ্ছা ছিল পরের নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দেবার।

কিন্তু আওয়ামি লিগের সাম্প্রতিক স্বৈরাচারী-সামরিকসুলভ-দমনমূলক, ঔদ্ধত্যপূর্ণ-বুদ্ধিজীবীবিরোধী আচরণে লিগের পক্ষে কোথাও কিছু বলবার সুযোগ পাচ্ছি না! কোণঠাসা হয়ে পড়েছি। বিএনপি বা জামায়াতের কী সমালোচনা করব, লিগের সমালোচনা করেই যেন কূল পাচ্ছি না! লিগ এখন একাই সরকার, একাই বিরোধীদল, একাই সামরিকবাহিনী, একাই সিভিলসমাজ!
যে তরুণপ্রজন্ম আর যে বুদ্ধিজীবীদের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে লিগ এবার মসনদে আসীন হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেই লিগ খড়্গহস্ত! অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মতো আন্তর্জাতিক আইকনকে অনর্থক হেনস্তা করাটাকে কিছু জন্মান্ধ আওয়ামি লিগার ছাড়া কেউ ভালো চোখে নেয়নি; অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে সরকারি সাংসদরা যে ভাষায় ('টোকাই') আক্রমণ করেছেন, তা সভ্য দেশে অসম্ভব; শ্রদ্ধাভাজন বর্ষীয়ান লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদকে নিয়ে রোজার ইদের পরে খোদ প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় কটাক্ষ করেছেন, তাতে লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে গেছে; সাংবাদিকদম্পতিহত্যার পর খোদ প্রধানমন্ত্রীই বললেন সরকার কারো 'বেডরুম' পাহারা দেবে না; আমার সরাসরি শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে অনর্থক আদালতে নিয়ে হয়রানি করা হলো; হুমায়ূন আহমেদের 'দেয়াল' উপন্যাসের আমি ঘোরবিরোধী হলেও ইশুটাকে আদালতে নেবার পক্ষে আমি ছিলাম না, সরকারের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল বইটা আদালতে নিয়ে একটা নিরর্থক কাজ করলেন; ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া নিয়ে এক শিক্ষক আর এক ছাত্রের নামে দুটো রাষ্ট্রদ্রোহমামলা হলো বা হতে যাচ্ছে, ব্লগিংয়ের কারণে দুজন সেকুলার ব্লগারকে আটক করা হলো, সর্বশেষ : আলোর পথের দিশারি, জাতির কাণ্ডারি, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ নিয়ে খোদ জাতীয় সংসদে এই ন্যক্কারজনক কাণ্ড!

এই সরকারই আবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে চিল্লাচ্ছে! আমার মনে হয় গত কুড়ি বছরের মধ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে এভাবে ভূলুণ্ঠিত করা হয়নি। কেউ বা একে আইয়ুবশাহি বা এরশাদশাহি আমলের সাথেও তুলনা করছেন। এমনকি ফেসবুকে যাদেরকে পাঁড় আওয়ামি-সমর্থক বলে জানি, তারাও সরকারের এই আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, কমেন্ট দিচ্ছেন!

সরকার বা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু লিখলে তা ঠিকঠিকই জায়গামতো পৌঁছে যায়, মামলাও হয়। কিন্তু আওয়ামি-সমর্থকেরাই যে আওয়ামি-আচরণে ক্ষোভপ্রকাশ করে চলছেন, সে খবর জায়গামতো পৌঁছোচ্ছে না কেন? সরকারের ফেসবুক-এজেন্টরা কোথায়? সরকার কেন নির্বিকার? সরকার কেন গণমাধ্যম ও সিভিলসমাজের সাথে ইচ্ছে করে দূরত্ব তৈরি করছে? আওয়ামি লিগ কি সিভিলসমাজের সহযোগিতা ছাড়াই পরেরবার ক্ষমতায় যেতে চায়? নাকি সরকার ধরে নিয়েছে যে, আগামী পঞ্চাশ বছর তারা এমনিতেই ক্ষমতায় থাকবে? এর মাধ্যমে সরকার আসলে জনগণকে, গণমাধ্যমকে বা সিভিলসমাজকে কী বার্তাটা দিতে চাইছে?

হত্যা ২ প্রকার : শারীরিক ও মানসিক। আলবদরবাহিনী একাত্তরের চৌদ্দই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদেরকে শারীরিকভাবে হত্যা করেছিল। একুশ শতকে বুদ্ধিজীবীদেরকে সুকৌশলে মানসিকভাবে হত্যা করছে। দুটোর মধ্যে তফাত্‍ সামান্যই।


কৃতঙ্গতায়:
আখতারুজ্জামান আজাদ
আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×