আষাঢ় মাস চারদিক বৃষ্টির সমারোহ ।এখানকার বৃষ্টিটা যেমন দেখার মত তেমনি বেশ উপভোগ্য। মন ভরে যায়। শুধু একটা জিনিসেরই অভাব আর সেটি হল বর্ষা রানী কদম ফুল। এখানে আছে হাজারো গাছের সমারোহ,আছে ছোট খাটো অনেক বন। তবে কদম তথা ফল-মুলের গাছ নেই বললেই চলে। ভালোই দিন হল এখানে আছি। প্রায় প্রতিদিন বিকেলে হাটতে বের হই পাল ধরে। ভালোই লাগে পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা পথ ধরে হাটতে। মাঝে মাঝে আমরা বনের ভিতরে দিয়েও হন্টন করি। বেশ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ চারদিকে সবুজের গভীর সমারোহ, আর বেশ রোমান্চকর জঙ্গলের বুক চিরে দু-পায়ের মেটা পথ! যখন কোন পাহাড় বা টিলার মাথায় ভর করি তখন কাছের কিংবা দূরের পাহাড়, টিলা আর বাচ্চা গ্রাম গুলোকে দেখতে বেশ ভালো লাগে, একেবারে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আজ এ টিলায় গেলে কাল যেতাম ও টিলায় পরশু যেতাম সে টিলায়। একদিন আমরা মনস্থির করলাম দূরের কোন পাহাড়ি বাজারে যাব। যেই কথা সেই কাজ বিকেল বেলায় হাটতে বের হলাম গন্তব্য কালেঙ্গা বাজার। পাহাড়ি পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা পথ ধরেই চলছি অনেক ছোট বড় টিলা পিছনে ফেলে এসেছি। যখন আমরা একটা মাঝারি আকারের টিলা অতিক্রম করছি এমন সময় একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করল বলুনতো এ টিলার নাম কি? জানিনা আজই প্রথম এ দিকে। ধারনা করেন? আমি তো আর হুমায়ুন আহমেদের হিমু না যে, যা ধারনা করব তাই ঠিক হবে, জীবনে অনেক আইডিয়া করেছি আর সবি হয়েছে উল্টো। আর এখানে নামের যে বিবর্তন হয়, বাচ্চুও নাকি এখানে বাচ্ছু!
যা হোক আপনে পরিস্কার করে দেন? উনি বললেন “গরম টিলা”। চমৎকার নাম আসে পাশে ঠান্ডা টিলা আছে নাকি? এভাবেই দিন অতিবাহিত হচ্ছিল।
অনেক দিন পর আমরা আবার গরম টিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি টিলায় লাল ধাচের পতাকা উড়ছে। আমি বললাম বারে হিরার খনি পাইল নাকি! একটু সামনে অগ্রসর হতেই দেখা গেল দু-পায়ের একটা নতুন রাস্তা করা হয়েছে পতাকার নিকটে যাওয়ার জন্য। ঝাড়-জঙ্গল কেটে পরিস্কার করে, সামান্য মাটি কেটে সমানও করা হয়েছে। আমরা সবাই সেই পতাকার কাছে যাওয়ার জন্য ধিরে ধিরে এগুচ্ছি। এক পর্যায়ে পৌছে গেলাম পতাকার নিচে। সেখানে কোন মানুষের দেখা মিলল না, তবে টিলার একটা অংশ কেটে সমতল করা হয়েছে। আমরা সবাই সমতল অংশের উপর বেশ কিছুক্ষণ হেটে চলে আসি। বুঝলাম না ব্যাপারটা তখনও। এর পর অনেক দিন যাওয়া হয়নি ঐ দিকে। এরপর আবার ঈদ আমরা সবাই ঈদের ছুটিতে বাড়িতে চলে যাই।
মাস দুয়েক পরে আমরা আবার কালেঙ্গা বাজারে যাওয়ার জন্য হন্টন করছি। উদ্দেশ্য হলো আলুর দম খাওয়া। বলে রাখি আমাদের একজন আবার আলুর দমের পাগল। হঠাৎ দেখি গরম টিলার সেই দু-পায়ের রাস্তাটা চওড়া করা হয়েছে। কাটা তারের বেড়া দেয়া হয়েছে রাস্তার দু-পাশ দিয়ে। আমরা সবাই সেই রাস্তা ধরে এগুচ্ছি ঘটনাটা আঁচ করার জন্য। যখন পৌছলাম দেখি এক যুবক বয়সি লোক সাদা পাজ্ঞাবি পড়ে বসে আছে। তিন চারটা ঘরও তোলা হয়েছে ছন আর টিন দিয়ে। সবচেয়ে উচুতে যে ঘরটা সে ঘরে কোন বেড়ার বালাই নেই, নেংটা তবে উপরে চান্দুয়া টানানো আছে। আর একটা সাইন বোর্ড চোখে পড়ল, সাইন বোর্ডে যা লেখা তা দর্শন করে হত-চকিয়ে উঠলাম। লেখাটা এ রকম।
সাবধান
পবিত্র স্হান
গরম পিরানে পীর রহমতে সোবাহানি কুতুবে রব্বানী বাবা হযরত নিজাম উদ্দীন আউলিয়া (রা এর মাজার শরিফ
আমরা সবাই অবাক, হঠাৎ করে মাজার! প্রথমে সালাম দিয়ে তারপর ঘটনাটা কি জিজ্ঞাসা করলাম অতি আগ্রহের সহিত। ঐ সাদা পাজ্ঞাবি পড়া লোকটাকে। উনি জবাব দিলেন খুবই আন্তরিকতার সহিত। উনার কথা শুনে আমাদের চোখ কপালে। বলে কি? তার বর্ণনা হলো এ রকম।
এ টিলার যিনি মালিক তার নাম গনি শাহ। তিনি থাকেন সদূর লন্ডনে বিশ – পচিশ বছর থেকে। তার খায়েস জাগছে একটা মনের মত বাড়ি করবে। তার অনেক জমি জামাও আছে। ভেবে দেখল তার গরম টিলাটা বেশ বড়। এখানে টিলার মাথায় বাড়ি করলে বেশ ভালোই হবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। এ কাজ করার দায়িত্ব প্রদান করলেন তার ভাইপো মোসলেম উদ্দিনকে। মোসলেম উদ্দিন টিলার জঙ্গল পরিস্কার করার প্রথম রাতেই খওয়াবে দেখে এক বিশাল দাড়িওয়ালা সাদা পাজ্ঞাবি পড়া লোক তাকে বলছে। মোসলেম উদ্দিন কি করতেছিস তুই? আমি এখানে আছি আর তুই এখানে বাড়ি তৈরি করার জন্য কাজ শুরু করেছিস। বাচতে চাইলে কাজ বন্ধ কর। তোর ঘর সংসার পরিবার পরিজন ধ্বংশ করে দিব।
চলে যা...................।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই সাত সকালে মোসলেম উদ্দিন ফোন করে চাচা গনি শাহ র কাছে এবং বিস্তারিত বলে। চাচা তাকে ধমকদিয়ে বলে আরে এসব কিছু না, তুই কাজ চালিয়ে যা। মোসলেম উদ্দিন বলে চাচা আমি মরে গেলেও তোমার এ কাজে আমি নাই আর পারলে মাথা থেকে এ চিন্তা ঝেড়ে ফেলো। কথা অনুযায়ী মোসলেম উদ্দিন কাজ থেকে ইস্তফা নেয়।
মাস ছয়েক পর হাতের কাজ গুঠিয়ে গনিশাহ চলে আসেন লন্ডন থেকে। তিনি এসেই জোরে সোরে কাজ শুরু করেন। তাকেও এক রাতে খওয়াবে বলেন গনিশাহ তুই কি নি:বংশ হতে চাস? তারাতারি কাজ বন্ধ কর। গনিশাহ প্রশ্ন করে বাবা আপনি কে? আমি ................................................। কিন্তু বাবা আমি এ টিলায় বাড়ি বানাতে চাই। ঠিক আছে বাড়ি কর তবে তার আগে আমার মাজার শরিফ জিন্দা কর।
প্রতিশুতিক্রমে মাজার শরিফটি জিন্দা হয়।
এখন বেশ লোকের সমাগম হয়। প্রতি বৃহ:স্পতিবার হালকায়ে জিকির মোবারক হয়। তবারক বিলি করা হয় ভক্ত আসেকানদের মধ্যে। মানুষের মনের আশ পূর্ণ হয়। ইত্যাদি ইত্যাদি।