৯টা ৬।এটা ঘুমানোর সময় না। অন্তত যার ২ সপ্তাহ পর পরীক্ষা, তার তো নয়ই। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা স্রোতের বিপরীতে চলতে পছন্দ করে। সমাজ এদের বাউন্ডুলে নাম দিয়েছে।
বাউন্ডুলেরা রাত জাগে না। অন্তত পড়ার জন্য জাগে না। ওরা রাত জাগে আড্ডা দেয়ার জন্য। কবির খাদ্য যেমন চাঁদ আর জসনর আলো, তেম্নি বাউন্ডুলেদের খাদ্য আড্ডা। বিকেলে একবার খেয়ে মন ভরে না। সারারাত ওরা আড্ডা দেয়। আড্ডা খায়।
আগে এভাবে আড্ডা হত না বন্ধুদের সাথে। আড্ডা হত সরাসরি-মুখোমুখি। কিন্তু এখন আড্ডা হয় ফেইসবুকে নয়তোবা মুঠোফোনে। এপাশ থেকে ওপাশের মৃদু শব্দটাও স্পষ্ট শোনা যায়। নেটওয়ার্ক মজবুত কিনা!কিন্তু বোঝা যায় না চেহারায় ফুটে ওঠা,ভালবাসা, মুচকি হাসি আর মায়া ভরা মিথ্যে রাগ। সমস্যা নেই। ফেইসবুকে ইমো আছে তো। ফেইসবুকে যার চ্যাট লিস্ট সবচেয়ে বড় যার স্ট্যাটাসে সবচেয়ে বেশি লাইক তার বন্ধুত্বই ততবেশী খাটি। মানুষ বন্ধুত্বকে না, ভালবেসে নেট স্পিড। 2জি না, 3জি স্পিড।
কয়েকদিন পর পরীক্ষা। চ্যাট লিস্টটা ছোট হতে হতে ৩০ এ নেমে এসেছে। সবাই পড়তে ব্যস্ত। কিন্তু ফারহানের পড়তে ইচ্ছে করছে না। হয়তো ফেইল করবে। তবু ওর বাউন্ডুলে স্বত্বা ওকে পড়তে দিবে না। বাউন্ডুলেরা পড়বে কেন? ওরা শুধু আড্ডা দিবে, মাঝে মাঝে হিমু সমগ্র পড়বে আর পকেটে টাকা থাকলে ফুচকা খাবে। বড় ৫ তারা হোটেলে ফুচকা খাওয়ার নিষেধ আছে। ফুচকা খেতে হবে ছোট্ট কোনও ভ্রাম্যমাণ দোকানে, গার্লস স্কুল অথবা মহিলা কলেজের সামনে হলে ভালো হয়। ওরা,আরেকটা কাজ করতে পারে, ওরা খুব ভালো ঘুমাতে পারে। সাধারণ ঘুম না,১২-১৪ ঘণ্টার গভীর ঘুম। রাতেতো সাধারণ মানুষ ঘুমায়। ফারহানরা ঘুমায় দিনে। রোদ যখন সবাই কে কাঁপিয়ে তোলে, তখন ওরা ঘুমায়। বাউন্ডুলেরা ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে না। ওরা স্বপ্ন দেখে; জেগে জেগে। চোখ খোলা রেখে।কবিরা সেই স্বপ্নগুলোর নাম দিয়েছে "আকাশ-কুসুম" স্বপ্ন। ফারহান এখনও ঘুমতে পারে নি। তাই স্বপ্ন দেখছে। চোখ অবশ্য বন্ধ। বাউন্ডুলে আইনের একশো সাড়ে বিয়াল্লিশ ধারা ভঙ্গ করলো ফারহান।
গরমটা বেড়েই চলছে। এভাবে আর বেশিক্ষণ স্বপ্ন দেখা যাবে না। কারেন্ট আসার নাম নেই। সেই ৯ টা২ মিনিটে গেছে। এখন ৯ টা ৪১। কাটায় কাটায় সময় রাখার অভ্যাসটা ফারাহানের ছিল না। অভ্যাসটার হয়েছে অর্পির সঙ্গে কথা বলে বলে।মেয়েটা কি করে যে এত টা পারফেক্ট! পারফেক্ট মানে নিখুঁত, উৎকৃষ্ট। কিন্তু, অর্পি পুরপুরি নিখুঁত না। ওর ও কিছু রিপু আছে। ফারহান ওগুলোর নাম দিয়েছে সু-রিপু। র যখন হাসে ওর দুই গালে দুটোতে টোল পড়ে,আর বেড়িয়ে আসে গজদন্তটা। ফারহানের ও একটা গজদাঁত আছে। কিন্তু ভালো লাগে না। আর অর্পির দাঁতগুলো যেন একদম আদর্শ।
না,এখন অর্পিকে মনে করা যাবে না। ওকে ভুলে থাকতেই হবে। নাহলে বাউন্ডুলেদের অসম্মান। ফারহান ফেইসবুক লগইন করে। আড্ডা দেয়ার কেউ নাই। একাকীত্বে মনে হয় বেশি গরম লাগে। জানলা খুলে দিলে গরম কমবে। কিন্তু মশারি সরিয়ে নামতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কয়েকটা স্ট্যাটাস পড়তে পড়তে কারেন্ট চলে এলো। ফ্যান ঘুরছে। একটা ক্যাত-ক্যাট শব্দ। অন্য দিন কানে বাজে শব্দটা, আজ মায়াবী লাগছে। গরমে মনে হয় অডিটরি স্নায়ুটা গেছে।
এই মায়াবী শব্দে, ধীরে ধীরে লাল চোখ বন্ধ হয়ে আসে। চোখ বন্ধ হলেই অন্য এক জগতে পৌঁছে যায় ফারহান। সে জগতে শুধু অর্পি আছে। আছে চিরচেনা দুই গালের টোল,আর গজদাঁত টা। বাস্তবের অর্পির মত এই অর্পিকে হারায় না। এখানে অর্পি প্রাণ খুলে বলা যায় সব। কিন্তু ফারহান কিছুই বলে না।এটাকে ফারহানের চুরি মনে হয়। ফারহান চোর না ও চুরি করতে পারে না। শেষবার যখন দেখা হলো, ফারহান চুরি করে দুই বিন্দু কেঁদে নিয়েছিল। কিন্তু অর্পি টা ওটাও ধরে ফেলেছে। আসলেই মেয়েটা পার্ফেক্ট।
বাউন্ডুলেদের পার্ফেক্টদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে নেই। তবু ফারহান দেখে। কেন দেখে জানে না। হয়তো একদিন জানতে পারবে। পার্ফেক্ট মেয়েটে মনে হয় এর কারন জানে। একদিন হয়তো বাউন্ডুলেটার সব বাউন্ডুলামি কান ধরে ছুটিয়ে দিবে। আর কারণটা বলবে।যে কারনটা ফারহান সহস্র বছর ধরে জানতে চায়।
---
ফাহিম শিহাব রেওয়াজ