somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাউণ্ডুলে

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৯টা ৬।এটা ঘুমানোর সময় না। অন্তত যার ২ সপ্তাহ পর পরীক্ষা, তার তো নয়ই। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা স্রোতের বিপরীতে চলতে পছন্দ করে। সমাজ এদের বাউন্ডুলে নাম দিয়েছে।

বাউন্ডুলেরা রাত জাগে না। অন্তত পড়ার জন্য জাগে না। ওরা রাত জাগে আড্ডা দেয়ার জন্য। কবির খাদ্য যেমন চাঁদ আর জসনর আলো, তেম্নি বাউন্ডুলেদের খাদ্য আড্ডা। বিকেলে একবার খেয়ে মন ভরে না। সারারাত ওরা আড্ডা দেয়। আড্ডা খায়।

আগে এভাবে আড্ডা হত না বন্ধুদের সাথে। আড্ডা হত সরাসরি-মুখোমুখি। কিন্তু এখন আড্ডা হয় ফেইসবুকে নয়তোবা মুঠোফোনে। এপাশ থেকে ওপাশের মৃদু শব্দটাও স্পষ্ট শোনা যায়। নেটওয়ার্ক মজবুত কিনা!কিন্তু বোঝা যায় না চেহারায় ফুটে ওঠা,ভালবাসা, মুচকি হাসি আর মায়া ভরা মিথ্যে রাগ। সমস্যা নেই। ফেইসবুকে ইমো আছে তো। ফেইসবুকে যার চ্যাট লিস্ট সবচেয়ে বড় যার স্ট্যাটাসে সবচেয়ে বেশি লাইক তার বন্ধুত্বই ততবেশী খাটি। মানুষ বন্ধুত্বকে না, ভালবেসে নেট স্পিড। 2জি না, 3জি স্পিড।

কয়েকদিন পর পরীক্ষা। চ্যাট লিস্টটা ছোট হতে হতে ৩০ এ নেমে এসেছে। সবাই পড়তে ব্যস্ত। কিন্তু ফারহানের পড়তে ইচ্ছে করছে না। হয়তো ফেইল করবে। তবু ওর বাউন্ডুলে স্বত্বা ওকে পড়তে দিবে না। বাউন্ডুলেরা পড়বে কেন? ওরা শুধু আড্ডা দিবে, মাঝে মাঝে হিমু সমগ্র পড়বে আর পকেটে টাকা থাকলে ফুচকা খাবে। বড় ৫ তারা হোটেলে ফুচকা খাওয়ার নিষেধ আছে। ফুচকা খেতে হবে ছোট্ট কোনও ভ্রাম্যমাণ দোকানে, গার্লস স্কুল অথবা মহিলা কলেজের সামনে হলে ভালো হয়। ওরা,আরেকটা কাজ করতে পারে, ওরা খুব ভালো ঘুমাতে পারে। সাধারণ ঘুম না,১২-১৪ ঘণ্টার গভীর ঘুম। রাতেতো সাধারণ মানুষ ঘুমায়। ফারহানরা ঘুমায় দিনে। রোদ যখন সবাই কে কাঁপিয়ে তোলে, তখন ওরা ঘুমায়। বাউন্ডুলেরা ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে না। ওরা স্বপ্ন দেখে; জেগে জেগে। চোখ খোলা রেখে।কবিরা সেই স্বপ্নগুলোর নাম দিয়েছে "আকাশ-কুসুম" স্বপ্ন। ফারহান এখনও ঘুমতে পারে নি। তাই স্বপ্ন দেখছে। চোখ অবশ্য বন্ধ। বাউন্ডুলে আইনের একশো সাড়ে বিয়াল্লিশ ধারা ভঙ্গ করলো ফারহান।

গরমটা বেড়েই চলছে। এভাবে আর বেশিক্ষণ স্বপ্ন দেখা যাবে না। কারেন্ট আসার নাম নেই। সেই ৯ টা২ মিনিটে গেছে। এখন ৯ টা ৪১। কাটায় কাটায় সময় রাখার অভ্যাসটা ফারাহানের ছিল না। অভ্যাসটার হয়েছে অর্পির সঙ্গে কথা বলে বলে।মেয়েটা কি করে যে এত টা পারফেক্ট! পারফেক্ট মানে নিখুঁত, উৎকৃষ্ট। কিন্তু, অর্পি পুরপুরি নিখুঁত না। ওর ও কিছু রিপু আছে। ফারহান ওগুলোর নাম দিয়েছে সু-রিপু। র যখন হাসে ওর দুই গালে দুটোতে টোল পড়ে,আর বেড়িয়ে আসে গজদন্তটা। ফারহানের ও একটা গজদাঁত আছে। কিন্তু ভালো লাগে না। আর অর্পির দাঁতগুলো যেন একদম আদর্শ।

না,এখন অর্পিকে মনে করা যাবে না। ওকে ভুলে থাকতেই হবে। নাহলে বাউন্ডুলেদের অসম্মান। ফারহান ফেইসবুক লগইন করে। আড্ডা দেয়ার কেউ নাই। একাকীত্বে মনে হয় বেশি গরম লাগে। জানলা খুলে দিলে গরম কমবে। কিন্তু মশারি সরিয়ে নামতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কয়েকটা স্ট্যাটাস পড়তে পড়তে কারেন্ট চলে এলো। ফ্যান ঘুরছে। একটা ক্যাত-ক্যাট শব্দ। অন্য দিন কানে বাজে শব্দটা, আজ মায়াবী লাগছে। গরমে মনে হয় অডিটরি স্নায়ুটা গেছে।

এই মায়াবী শব্দে, ধীরে ধীরে লাল চোখ বন্ধ হয়ে আসে। চোখ বন্ধ হলেই অন্য এক জগতে পৌঁছে যায় ফারহান। সে জগতে শুধু অর্পি আছে। আছে চিরচেনা দুই গালের টোল,আর গজদাঁত টা। বাস্তবের অর্পির মত এই অর্পিকে হারায় না। এখানে অর্পি প্রাণ খুলে বলা যায় সব। কিন্তু ফারহান কিছুই বলে না।এটাকে ফারহানের চুরি মনে হয়। ফারহান চোর না ও চুরি করতে পারে না। শেষবার যখন দেখা হলো, ফারহান চুরি করে দুই বিন্দু কেঁদে নিয়েছিল। কিন্তু অর্পি টা ওটাও ধরে ফেলেছে। আসলেই মেয়েটা পার্ফেক্ট।

বাউন্ডুলেদের পার্ফেক্টদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে নেই। তবু ফারহান দেখে। কেন দেখে জানে না। হয়তো একদিন জানতে পারবে। পার্ফেক্ট মেয়েটে মনে হয় এর কারন জানে। একদিন হয়তো বাউন্ডুলেটার সব বাউন্ডুলামি কান ধরে ছুটিয়ে দিবে। আর কারণটা বলবে।যে কারনটা ফারহান সহস্র বছর ধরে জানতে চায়।





---
ফাহিম শিহাব রেওয়াজ

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×