পিছন থেকে কেউ হয়তো ডাকল। ডাকুক। আমি শুনতে পাইনি, আমার কানে হেড-ফোন। মোবাইলে গান চলছে, "এক মুঠো মুক্তিই-ইর ডাআআক পাঠাআআচ্ছেএএ...", তার সঙ্গে উমত্ত্য গিটার আর ড্রামের শব্দ। একে অবশ্য শব্দ বলতে নেই, বলতে হয় মিউজিক।
অন্য কারও কথা শোনার আগ্রহ বা ইচ্ছা কোনটাই আমার নেই, আমি গান শুনছি, অনুভব করছি। ভালো করে বলতে গেলে বলতে হয় 'ভোগ করছি'।
আমার ডান হাত, হাতের শাহাদাত আর বৃদ্ধাঙ্গুলি ব্যস্ত অনেক। একবার এগিয়ে আসছে ঠোঁটের দিকে, তারপর আবার নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। গুটিয়ে নে'য়ার সময় আঙ্গুল দুটো সুন্দর শিল্পের মত নিজেদের নাড়িয়ে-চড়িয়ে হাতে ধরে রাখা অগ্নিশিখাকে আড়াল করে। আমার হাতের অগ্নিশিখাটি গনগনে সূর্যের মত তারুণ্যের প্রতীক না। ওটা হলো 'সিগেরেট'। নাম "মোর"। 'মোর' মানে বেশি। এর দামও বেশি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে কমিয়ে দিচ্ছে আমার আয়ু!! জগতে বৈচিত্র্যের শেষ নেই। মাদকের নামেও অবাক হতে হয়!!
এই ধোঁয়াতে নাকি মৃত্যু আছে। মৃত্যুদূত এতেই চড়ে এগিয়ে আসেন। আমিও চাই, আসুক যমদূত। আমি এই ঘোলাটে ধোঁয়ায় ধুঁকে ধুঁকে মরবো । উপভোগ করব মৃত্যুর প্রণয়। দেখব কতটা কষ্ট দিতে পারে সে!? আচ্ছা, মৃত্যুর রং কি?? আমার চোখের মত রক্ত-লাল নাকি টকটকে নীল!! নাকি রংহীন;ধোঁয়াটে!!?
সামনে অন্ধকার-আমি। আমার ছায়া। আমি ল্যাম্পপোস্টের আলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। দূরে দূরে আরেকটু দূরে। আলো থেকে যত দূরে সরছি আমার অন্ধকার ছায়া ততই বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হচ্ছে; আর আমি হচ্ছি ছোট, অনেক ক্ষুদ্র।
আমি আগে কবিতা লিখতে পারতাম। এখন পারিনা। তবু মনের মধ্যে একটা কবিতার মত কি যেন জমা বেঁধেছে ...
________________হৃদয় নিয়েছ আগেই;
________________এবার নাও ফুসফুস, নাও পাকস্থলী।
_______জৈবিক প্রেমের কিছুটা কানুন রক্ষা কর, সুকন্যা।
________________বিনিময়ে দিও না কিছুই,
________________আমি নেব না ...।
________________খুব ইচ্ছে হলে
________________বরাবরের মত টকটকে নীল দুঃখ দিও,
________________দিও কষ্ট, বেদনা আর লাঞ্ছনা।
________________আমি হৃদয় পেতে নেব
________________যা কিছু দিবে তুমি...
________________যেমন করে
________________ফুসফুস নিচ্ছে তামাক আর নিকোটিন।
এর লেখক কে?? আমি নাকি তামাক??? নাকি, সুকন্যা!!!??
আবার হয়তো পেছন হতে কেউ একজন ডাকছে। হয়তো আমি নিজেই! ডাকুক। আমি এগিয়ে চলছি, এগিয়ে চলছি জনহীন রাস্তা ধরে। সামনে ধোঁয়াটে অন্ধকার,সঙ্গে ঘোলাটে কুয়াশা। আজ চাঁদ উঠে নি,অমাবস্যা হতে পারে; জ্যোৎস্না নেই, জোনাকিও নেই। আছে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা ল্যাম্পপোস্টের জ্যোতিহারা হলুদ সোডিয়াম বাতি। তবু চারপাশ ছেয়ে গেছে কলঙ্কিনী আঁধারে। আর গন্তব্যহীন-আমি এগিয়ে চলছি নিরালোকের দিকে। এই অন্ধকারটাও বোধহয় ঈশ্বরের মত অসীম! হয়তোবা!!!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৩১