হালকা কুয়াশা আর শিশিরসিক্ত পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে রিক্সা চলছে । অবশ্য একে রিক্সা না বলে ত্রিচক্রযান বলাই ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে অরুণের । রিক্সাটা খাটি বাঙলাদেশি । রিক্সার যে জাতি-বর্ণ থাকে না সেটা অরুণ জানে । কিন্তু একে বাঙলাদেশি মনে করার কারণ হলো (১) রিক্সাটা একটু নিচু, (২) রিক্সার পিছনে বাঙলা ছবির পোস্টারের মত ছবি আঁকা । এধরণের ছবি এখন আর দেখা যায় না; আগে দেখা যেত, যখন অরুণ বাবার কোলে বসে রিক্সায় ঘুরত তখন । সে সময়ে অরুণ শুধু এই ছবিগুলোই দেখত না প্রতিটি রিক্সার নাম্বার পড়ার চেষ্টা করত । যদিও তার পড়ে শেষ করার আগেই রিক্সা রাস্তার মাঝে অদৃশ্য হয়ে যেত ।
অরুণের এখন আর আগের মত রিক্সার নাম্বার পড়তে সময় লাগে না, সে এখন নাম্বার পড়েও না । অরুণ এবার ক্লাস নাইনে । বার্ষিক পরীক্ষা শেষ । কালকেই পরীক্ষা শেষ হয়েছে, আর পরীক্ষা দিয়ে বের হয়েই ছোটখাটো একটা এক্সিডেন্ট । এক ক্লাসমেটের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে স্কুলের গেট দিয়ে বাড়ি খেয়েছে । যেনতেন বাড়ি না, অসম্ভব জোরে । মাথার বা দিক, বাম হাত, কোমরের বাম দিকে প্রচণ্ড ব্যথা ।
ডাক্তার-হাসপাতাল অরুণের ভালো লাগে না, ভয় পায় হয়ত না হলে হাসপাতালে যেত নিশ্চিত । ব্যথার কারণে ঔষধ যে খাচ্ছে না সেটাও না । ঔষধ খাচ্ছে, ঔষধের নাম ফ্লেক্সি । ফ্লিক্সিলোডের মতই তাড়াতাড়ি কাজ করে । ব্যথা কমে গেছে অনেক । কিন্তু এই ঔষধ খেয়ে যেন সাইড-ইফ্যাক্ট না হয় তাই আরেকটি ঔষধ খেতে হচ্ছে, নাম রেনিডিন ।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে এইসবই ভাবছিল অরুণ । হঠাৎ, রাস্তার স্পিড ব্রেকারে ধাক্কা খেয়ে রিক্সা নড়ে ওঠায় অরুণের নাক গিয়ে লাগল রিকশাওয়ালার পিঠে । শ্রমজীবীরা শক্তসমর্থ হয় বলে অরুণ জানত, তাই বলে এতটা ! নাক ব্যথা করছে । পরপর তিন চারটে হাঁচিও হলো । মারা যাবার পর পুরো শরীরটাই দান করার ইচ্ছে আছে অরুণের । কিন্তু এভাবে প্রতিদিন আঘাত পেলে শরীরটা হয়ত ভাঙরির দোকানেই শেষ পর্যন্ত দান করতে হবে ।
বাড়ি এসে আয়নায় নিজেকে দেখে হা হয়ে গেল অরুণ । তার নাক লাল । সেদিন রাতে একটা কুকুর দেখেছিল তার চোখটাও অনেকটা এমন ছিল ।
কাদের মোল্লার ফাঁসি নাকি খুব শিগ্রিই হবে । আচ্ছা, মৃত কসাইয়ের চোখও কি সেদিন রাতের কুকুরের চোখের মত হবে ???
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৬