somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষা ব্যবস্থা (আমার নিজেস্ব দৃষ্টিভঙ্গি)

১৮ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি চুপচাপ বসে থাকতে পারি না। সেদিন স্কুলে কি মনে করে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুই পড়িস কেন?’
-আমি আর কই পড়ি ?
-এই যে তুই পদার্থ-রসায়ন-জীব সবগুলাই ত অনেক ভাল করে পড়িস...মানে, তোর সিলেবাস ত মাত্র দেড় মাসেই শেষ ।
-আরে সাইন্সেরগুলা পড়ি কারণ যখন ইউনিতে যাব, তখন বিজ্ঞান ভাল পারা বড় ভাইদের দামই আলাদা... জুনিয়র মেয়েরা পড়া বুঝায় নিতে আসে............ (বাকিটুকু অশ্লীল, তাই লিখলাম না)
যার সঙ্গে এই কথোপকথন সে ‘একটু’ মেয়েঘেষা, তাই খুব বেশি অবাক হইনি ।

আরেকদিন ম্যাথ অলিম্পিয়াডে ন্যাশনাল পর্যায়ে যাওয়া একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি ম্যাথ অলিম্পিয়াডে কেন যাও?
-ভাল লাগে তাই ।
-হুম, ভালো ত লাগে । কিন্তু কেন?
- দেখ, সিম্পিল হিশাব, আমার ইচ্ছা IMO (International Math Olympiad) তে যাব, IMOতে যাইতে পারলে অন্যরকম ‘দাম’ ।
- ত?
-ত ইচ্ছা মত মেয়ে বিয়ে করতে পারব। (আরও কিছু কারণ দেখিয়েছিল সেগুলো হাস্যকর)
- ও ...।


এবার অবাক হয়েছি, বেশ অবাক হয়েছি। তার কাছ থেকে এধরণের উত্তর আশা করি নি। আমি জানতাম সে ম্যাথকে ভালবাসে, তাই অলিম্পিয়াডে যায়। আমি অবশ্য নিশ্চিত নই তার উত্তরটা শুধু মজা করার জন্য ছিল কিনা । তবে তার কথা বলার ধরণে তেমনটা মনে হয় নি ।


এবার নিজেকেই প্রশ্ন করে বসলাম, আমি কেন পড়ি । নিজের কাছে নিজে যেই উত্তরটা দিয়েছিলাম সেটা অনেকটা এরকম, ‘মামনি-বাবা পড়তে বলে তাই পড়ি, ছোটবেলা থেকেই পড়তেছি তাই পড়ি, না পড়লে চাকরি পাব না,চাকরি না পাইলে খাব কি?! আর ভাল কিছু না করতে পারলে ত বউও... (আমার চিন্তাও দেখি, ঐ এক জায়গায় যায়)...।’


জ্ঞানীরা বলেন পড়াশুনার উদ্দেশ হলো জ্ঞানার্জন । সত্যি বলতে, যে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের ইতিহাস পাল্টে যায়, যে দেশে বইয়ের শিশুকে হিজাব পড়িয়ে সাম্প্রদায়িকতার উৎস বানানো হয়,যে দেশে বছরে পাঁচবার(মতান্তরে ছয়বার) ইংরেজির সিলেবাস চেঞ্জ হয়, যে দেশে বইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় ভুল থাকে,যে দেশে গাইড বই নিষিদ্ধ হয়না, কোচিং-বাণিজ্য চলে দেদারে (যার বেশির ভাগই ‘অশুভ শক্তি’র হাতে বন্দী) সে দেশের পাঠ্যপুস্তক পড়ে জ্ঞানী হওয়া যায় না। বড় জোর পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ঠোঙা বানানো যায়। ঠোঙায় জ্ঞান থাকে না, পেঁচানো-পেঁচানো জিলাপি থাকে।

তাই আমরা জানার জন্য পাঠ্যবই পড়ছি না, পড়ছি পরীক্ষার খাতায় কে কতটুকু বমি করতে পারি সে প্রতিযোগিতায় নামার জন্য ।


‘পরীক্ষা’ জিনিসটিও আমার মাথায় ঢুকে না। এটি নিয়ে প্রশ্ন করলে খুব সাধারণ যে উত্তরটি পাওয়া যাবে সেটি হলো, ‘কে ভাল ছাত্র কে খারাপ ছাত্র, সেটা জানার একটা প্রক্রিয়া।’ মানে পরিষ্কার করলে বলতে হয় ভাল আর খারাপ ছাত্রের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করা। আচ্ছা, পার্থক্য হলো, আপনারা জেনে গেলেন কারা ভালো। তাদের নিয়ে দেশ গড়লেন, উন্নত সমাজ গড়লেন। আর যাদের খারাপ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা কোথায় গেলো ?! ধরে নিলাম, ডারউইন সাহেবের উক্তি মেনে নিয়ে কিছু কিছু দুর্বলেরা বিলুপ্ত(আত্মহনন) হলো। তারপরও যাদের কই মাছের প্রাণ কিংবা চক্ষুলজ্জা নেই(!), তাদের কি হবে ? তাদের ত আগেই বাদ দিয়েছিলেন, তারা ত পিছনেই পড়ে আছে, আবার তারাও আপনার উন্নত(!) দেশের নাগরিক। উন্নত দেশে অনুন্নত মানুষ ব্যাপারটা একটু কেমন কেমন না...!?


আমি ঠিক বুঝি না, কেন আমাকে সেরা হতে হবে : পড়াশুনায়, কেন আমাকে বিতর্কে শ্রেষ্ঠ হতে হবে, কেন আমাকে আঁকতে হবে সেভাবেই যেভাবে আমাকে শেখানো হয়েছে, কেন আমি আকাশের রঙ ঘন সবুজ দিতে পারি না, কেন আমাকে সাধারণ একটি ১০০ মিটারের দৌড়ে প্রথম হতে হবে, যখন আমি জানি জীবনের দৌড় আরও অনেক বাকী। আমরা কি ক্রীতদাস নাকি মস্তিষ্কহীন রোবট। সবথেকে ভালো শেষ পর্যন্ত একজনই হয়, কিন্তু জন্ম দেয় অজস্র সবথেকে খারাপের


জনৈক খারাপ ছাত্র বলেছিলেন, ‘Everyone is genius. But if you judge a fish by its ability to climb a tree, it will live its whole life believing that it is stupid.’



আমি বলছিনা পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা হোক, কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন আনা হোক যে মাছকে যেন আর গাছে উঠতে না বলা হয়।


সমস্যাটা আসলে সিস্টেমে না, আমাদের মধ্যে। আমরা পর্ণ দেখে অনেক কিছুই শিখি, কেউ কেউ নাকি বাস্তবেও চেষ্টা করে, কিন্তু 3 idiots অথবা চলো পালটাই এর মত মুভি যতক্ষণ চোখের সামনে চলে ততক্ষণ দেখি, তিন ঘণ্টা শেষ হলে, আবার ‘সৃজনশীল গাইড’ নিয়ে সৃজনশীলতা মুখস্থ করি। (এই ‘সৃজনশীল গাইড’ মালটা আসলে কি? ক্লাস ফাইভে পোলাপান আমাকে জিগাইত কবিতা লেখা শিখছি কিভাবে। তখন সৃজনশীল গাইড ছিল না, থাকলে বলতাম সৃজনশীল গাইড পড়ে শিখছি)


নান্না, আর লেখা যাবে না... পড়তে বসা লাগবে। ‘১৫র এস.এস.সি. পরীক্ষার্থী আমি। গোল্ডেন ত পাওয়াই লাগবে ...। আমার ‘পাঞ্জেরীর’ ‘গণিত সৃজনশীল গাইড’টা দেন কেউ......।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×