প্রায় মাস খানেক চেষ্টার পর আজ আমি আমার নিজের মোবাইল থেকে নিজের কম্পিউটার-এ ইন্টারনেট সংযোগ পেলাম। এর মাঝে আমি বহু বার Grameen Phone, Aktel এবং Warid দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখনো কোনো ভালো ফল পাইনি। যেমন, Grameen Phone। ৫০ টাকা দিয়ে Recharge করে গেলাম GP Customer Care Center-এ। সেখানে প্রথমে আমাকে পাত্তাই দেইনি! পরে ধমক দিয়ে আমার মোবাইলটা দিলাম। আমার মোবাইলটার মডেল হল Samsung S501i যা EGDE, GPRS, 3G এবং ISN সমর্থন করে। অনেকখন পরে আমার সেটটা ধরা হল। দু’ চার মিনিট বাদে ঐ ব্যক্তি কথায় যেনো চলে গেলো। কিছুক্ষন পরে দেখলাম ঐ ব্যক্তিটি অন্য আরেক ব্যক্তির (মহিলা) সাথে গল্প করছে। ১০-১২ মিনিট পর তিনি গল্প সেরে আসলেন। কিছু ঘাটা-ঘাটি করে আমাকে বললেন, আমার মোবাইলটা নাকি নষ্ট। ইন্টারনেটই নাকি নেই! আমি তখন বিব্রত হয়ে বিক্রেতার কাছে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। কিন্তু পথিমধ্যে আমি দেখলাম আমার একাউন্টে মাত্র ০.১৯ পয়সা আছে। তখন আর আমার বুঝতে বাকি রইলনা এটা যে এক প্রকার হয়রানি। তারপরও আমি হাল ছাড়িনি। অন্য এক জনের মোবাইল খেকে নানা ধরনের কোড নিয়ে আমার মোবাইলে লিখে সেভ করি। সব থিক থাকলেও WAP কিন্তু তখনোও চালু হয়নি। এই WAP এর জন্য আমি অন্য আরেক জনের মোবাইলের সেটিং দেখে আমার নিজের মোবাইলে চেষ্টা করি। যখন সব থিক হল, আমি আমার একাউন্টের টাকা দেথি পুরো বিশটা। তারপর আমি আমার মোবাইলটিকে আমার কম্পিউটারে সংযোগ দিলাম। দেখলাম আমার মোবাইলটি মডেম সহ সংযোগ পেয়েছে। তখন আমি আমার মোবাইল দিয়ে আমার কম্পিউটারে ইন্টারনেট লিঙ্ক স্থাপন করি। সেই লিঙ্ক স্থাপনেই আমার খরচ হল ৫.০২ টাকা! ১৪.৯৮ টাকা তখনও আমার একাউন্টে জমা আছে। যখন আমি Google লিখে মযিলা ফায়ার-ফক্স এ সার্চ দিলাম, গুগোলের হোম পেজ পুরোপরি খোলতে না খোলতেই মযিলা ফায়ার-ফক্স আমাকে আমার balance ফুরিয়ে যাওয়ার অতিসুসংবাদ (!) দিলো। সাথে সাথে আমি আমার একাউন্টে যাই এবং অতিসুসংবাদের (!) প্রমান পাই। প্রতি কিলোবাইট বলা আছে ০.০২ টাকা করে। কিন্তু গুগোলের হোম পেজ সব মিলিয়ে প্রায় ১০৩ কিলোবাইট। হিসেবে আসে মাত্র ২.০৬ টাকা। তাহলে আমার বাকি ১২.৯২ টাকা কথায় গেলো? ১২১-এ ফোন করে ম্যানেজারকে খুজঁতেই গেলো ৪.২৬ মিনিট! আমার সাথে কথায় না পেরে বলে প্রমান দিতে। এখন আমি প্রমান পাব কথায়? বিচারপতি যদি চোরকেই বলে চুরি না করার প্রমান দিতে, তাহলে ঐ বিচারপতির ভেতরকার সবকিছুই পরিস্কার হয়ে যায়। থিক তেমনি, সবকিছুই পরিস্কার হয়ে গেলো ম্যানেজারের বেলায়। আমার ৭৪.৬৯ টাকা গেলো শুধুই এবং তা মাত্র ১৬.২২ মিনিটেই। বাংলাদেশের মোবাইল গ্রাহকরা শুধু মাত্র নিজ একাউন্টের জমা টাকার অংকটি দেখতে পায়। কত টাকা মিনিট রেটে, শেষ কলে কত মিনিট কথা বলল এবং কত টাকা কাটা গেলো তা দেখতে পায়না বা তা গ্রাহকের কাছে সংরক্ষিত থেকে না। সে হিসেবে, আমারও শেষ কলে কত রেটে কথা বললাম, তা আমি নিজেই জানিনা। হিসেব করে দেখা গেলো ৪.৬০৪৮ টাকা মিনিটে আমি ‘হেল্প লাইনে’ কথা বলেছি! বিকেল বেলায় আবার গেলাম GP Customer Care Center-এ। সেখানে একজন ভদ্রলোককে দেখলাম একই সমস্যায় পরে হয়রানির শিকার হতে। লাইন ধোরে একে একে আমার আগের ঐ ভদ্রলোকটি কাউন্টারে গেলেন। তিনি ঐ খানে কোনো ফল না পেয়ে গেলেন সেখানে উপস্থিত এক ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। আমিও তার সাথে গেলাম। তাকে বলতে শুনলাম যে তার একমাত্র মেয়ে স্বামীর সাথে নরওয়ে থাকে। ভদ্রলোক প্রতিদিন রাতে তার মেয়ের সাথে ইন্টারনেটে কথা বলে। কিন্তু হয়রানির ফলে গত চারদিন যাবত তিনি কথা বলতে পারছেন না। একথা বলে তিনি শেষে কেঁদেই ফেললেন। তবুও কোনো ফল মেলেনি। বাদ্ধ্য হয়েই তিনি সরে দাঁড়ালেন। এ বার, আমার পালা। আমি পেছনের সব কথা ইঞ্জিনিয়ারকে বললাম। সে আমাকে বলল, কম্পিউটারে ইন্টারনেট লিঙ্ক স্থাপন করতে কত কিলোবাইট খরচ হয় তা আমি জানি কি না। আমি তা কে বললাম সে কথায় লেখাপড়া করেছে। সে আমাকে ঢাকা ভারসিটির কথা বলল। তখন আমি তাকে তার বিষয়ের নাম বলতে বললাম। সে BSC. In Computer Science এর কথা বলল। আমি মনে মনে ভাবলাম আর উপহাস করলাম, হয় ঢাকা ভারসিটির মান এখন খুব খারাপ নয়তো সে মিথ্যা বলছে। যা হোক, আমি তাকে বললাম “আমি কথাকার ছাত্র, তা তুমি আমাকে দেথেও বুঝতে পারলেনা? এটা তোমার অক্ষমতা। যে ব্যক্তি আমার চেয়েও কম জানে, তার কাছ থেকে আমি কিভাবে কিছুর সমাধান পাবো বলে আশা করি? সুতরাং, সেটটা আমাকে দিয়ে দাও।” ইঞ্জিনিয়ার কালো মুখে সেটটা দিয়ে দেয়। আর এই ফাঁকে ঐ ভদ্রলোকটি আমার কথা শুনে, আমাকে ইঞ্জিনিয়ার বলে আমার হাত ধরে আমাকে তার সমস্যার সমাধান দিতে বলে। আমি তার বাসার অবস্থান জানতে চাইলে তিনি আমাকে বললেন তিনি নদ্দাতে থাকেন। তখন আমি তাকে আমার একটি পরিচিত Broadband Internet connection সেন্টারের ফোন নাম্বার দেই। এরপর তিনি হাঁসি মুখে চলে যান। আপনারাই ভেবে দেখুন। ভদ্রলোকের কান্নাও কোনো কাজে আসেনি! তার উপর আবার আমাকে কম্পিউটারে ইন্টারনেট লিঙ্ক স্থাপন শেখায়! আপনারা নিশ্চই যানেন কম্পিউটারে ইন্টারনেট লিঙ্ক স্থাপন করতে কত কিলোবাইট খরচ হয়? মাত্র ১ থেকে ২ কিলোবাইট। কারন কম্পিউটারটি যখন ইন্টারনেটে লিঙ্ক স্থাপন করে, তখন IP Address, DNS server, Domain, RPC service, Service Provider, Dialup Number এবং User information ইন্টারনেটে নথিভুক্ত হয়। এগুলো সব মিলিয়ে ২ কিলোবাইটও হয় না। তবুও ২ কিলোবাইট ধরলে খরচ হয় মাত্র ০.০৪ টাকা, কিন্তু খরচ হয়েছে ৫.০২ টাকা! এরপর আমি Aktel দিয়েও চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনো ভালো ফল পাইনি। Grameen Phone থেকে হয়রানি এতে কম হলেও খুব কম না। গেলাম Warid-এ। Warid-এ আমার এক উচ্চপদস্থ কাকা আছেন। তার কথাতেই Warid নিলাম। এ দিকে আমার Grameen Phone এবং Aktel বন্ধ আছে। কিন্তু Waridও কোনো ভালো ফল পাইনি। তাই কাকাকে এ ব্যপারে প্রশ্ন করি। কাকা উত্তর না দিয়ে নিজেকেই ভুক্তভোগী বলে দাবি করেন। এ দিকে আমার Grameen Phone-এর একাউন্টে ৫০.০০ টাকার বদলে ০.৩৭ টাকা, এবং আমার Aktel-এর একাউন্টে ২৮.৬১ টাকার বদলে ১২.৬১ টাকা হয়ে গেলো! আমি বোকা বনে গেলাম। ঐ দিকে আবার Warid-এর একাউন্টে ১০২.০৮ টাকার বদলে ৮৭.৯৮ টাকা হয়ে গেলো। অথচ ৩টি সিম আমি একাই ব্যবহার করি। হটাৎ এমন অবস্থা আমাকে মোবাইল ব্যবহার খেকে দূরে সরিয়ে দিলো। মাত্র ৩টি সিম আমাকে যে হয়রানি করেছে, তাতে আমার আর বাকিগুলো ব্যবহার করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা হলো না।
এতো কিছুর পরোও কি বোঝা যাচ্ছে না, এর মানে কি?
বাংলাদেশকে শোষন করা এর মানে নয় কি? বাংলাদেশের মানুষের টাকা শোষন করা এর মানে নয় কি? বাংলাদেশকে গরীব থেকে আরোও গরীব করা এর মানে নয় কি? বাংলাদেশের অর্থনিতির অবকাঠামোকে ধংস করা নয় কি?
নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন, যদি তা আপনার ভেতর থেকে থাকে।
Copyright © [email protected]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




