somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলিজা

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ধানমন্ডি ২৭।
বেঙ্গল বইয়ের উঠোনে কোনার টেবিলে একা বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি আর ফেসবুকিং করছি । অলস সময় কাটানোর চেষ্টা বলা যায়। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছি। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ লোকজন বেশ কম। হাতে গোনা কয়েকজন টেবিলগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। কেউ গল্প করছে আবার কেউ প্রেমিকাকে কলিজা সিঙাড়া মুখে তুলে খাওয়াচ্ছে। প্রেমিকও তার প্রেমিকাকে একইভাবে খাওয়াচ্ছে। কি চমৎকার দৃশ্য! কেনো জানিনা আমার ভেতর এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করছে ওদের দেখে। আচ্ছা,মেয়েটা যদি বলে তুমি আমার জন্য কলিজা কেটে সিঙাড়া বানিয়ে খাওয়াতে পারবে;তখন ছেলেটা কি উত্তর দেবে? কিংবা ছেলেটা যদি একই কথা বলে তাহলে মেয়েটা কি খাওয়াবে? নিজেকে প্রশ্ন করলাম। উত্তর পেলাম না। আমি ওদের দিক দেখে চোখ সরিয়ে ফেসবুকে নজর দিলাম। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিলাম।

ফেসবুক স্ক্রল করে নীচে নামতেই একটি ওয়েডিং ছবি দেখে ধাক্কা খেলাম। তাকিয়ে রইলাম অপলক। শাড়ি পরা একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে শেরওয়ানি পরা ছেলের পাশে। রাজ্যের ভালোলাগা নিয়ে মায়াবি হাসির দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে আমি চিনি। অনেক ভালো করে চিনি। কতোটা চিনি সেটা কোন নিক্তি দিয়ে হয়ত পরিমাপ করা যাবে না। পৃথিবীর সব পুরোনো প্রেমিকারা এভাবে এক গাল হাসি দাঁড়িয়ে থাকে সম্পূর্ণ অচেনা এক মানুষের পাশে। তাকে শরীরের বৈধতা দেয়। ভালোবাসার চাষ হয়। ফসল ফলে। তখন তাদের সম্ভবত মনে থাকে না- অতীতে তার শরীর কেউ চাষ করেছিলো। অবৈধভাবে। কিছু ভালোবাসা খুব ধীরে গোপনে মুছে যায়। আমারটাও গেছে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাশের টেবিলে চোখ পড়তেই দেখলাম সেই জুটি নেই। সম্ভবত চলে গিয়েছে। কখন উঠে গেলো বুঝতে পারলাম না। এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম। যদি পেয়ে যাই তাহলে ডাকবো। সামনের চেয়ার দু'টিতে বসিয়ে একটি কলিজা সিঙারা সামনে রেখে তখন নিজেকে করা প্রশ্নটি করে উত্তর জেনে নেবো। কিন্তু কোথাও পেলাম না। উপরে স্বচ্ছ কাঁচের ভেতর দিয়ে যতোদূর দেখা সেখানেও তারা নেই। অল্প কয়েকজন বই পড়ছে। কেউবা আবার সেলফি তুলছে।
হাতের ঘড়ি দেখলাম। অনেক সময় হলো। রাত ঘন হচ্ছে। বাড়ি ফেরা প্রয়োজন। চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবো ঠিক একমন সময় একটা চিৎকার শুনতে পেলাম। মেয়েলি কন্ঠের চিৎকার। আমি কৌতুহল নিয়ে দ্রুত সামনে এগিয়ে যেতেই দেখি অনেকে দৌড়ে বের হচ্ছে। আমার আগ্রহ বাড়লো। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। কেউ একজন একটান দিয়ে হাত টেনে ধরে বললো,

'উপরে যাবেন না ভাই।' ভয়ানক ব্যাপার ঘটে গেছে।’
'কি ব্যাপার ভাই?’
'একটি ছেলে খুন হয়েছে।’

লোকটি বেশীক্ষন দাঁড়ালো না। আমার হাত ছেড়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় আমাকে আরো কি যেন বললো। আমি সেদিকটায় খেয়াল না করে উপরে উঠলাম ধীর পায়ে। দ্বিতীয় তলা। কেউ নেই। তৃতীয় তলা। সেখানেও কেউ নেই। সাবধানী পায়ে সামনে এগোলাম। কাঠের মেঝেতে রক্ত গড়িয়ে পায়ে এসে লাগলো। জুতা রক্তে লাল হয়ে গেলো। আমি সামনে এগোচ্ছি রক্তে লাইনকে অনুসরন করে। একটি মেয়ে। বাম পাশটায় বসে ফোঁস ফোঁস শব্দ করে কি যেনো চাবাচ্ছে। মুখের উপর চুল পড়ায় চেনা যাচ্ছে না। মেয়েটা আমার পায়ের শব্দ পেয়ে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকালো। আঁতকে উঠলাম! মেয়েটা কলিজা চাবাচ্ছে। আরে এতো সেই মেয়ে। যাকে একটু আগে উঠোনে বসে সিঙারা খেতে দেখেছিলাম। তাহলে মেয়েটা কি তার প্রেমিকের কলিজা চাবাচ্ছে? ক্ষতবিক্ষত লাশের পাশে গিয়ে চেহার দিকে তাকাতেই আমি চূড়ান্ত রকমের আঁতকে উঠলাম। আমার ধারণা ঠিক হলো। মেয়েটি তার প্রেমিকের কলিজা চাবাচ্ছে। আমি এক দৌড়ে বেরিয়ে যাবো এমন সময় মেয়েটির আমাকে ডেকে পৈশাচিক এক হাসি দিয়ে বললো,

'আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম ওর কলিজাটা কতো বড়! আমাকে ছেড়ে অন্য মেয়ের সাথে রাতে শোবে,আর আমি মেনে নেবো-তা তো হয় না।'
কোন উত্তর না দিয়ে, ডান বামে না তাকিয়ে সোজা রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। ৩২ নম্বরের দিকে হাঁটা আরম্ভ করলাম। আমার মাথা ঝিম মেরে আছে। এমন সময় পকেটের ফোনটা বেজে উঠলো। ওপাশ থেকে ছোট ভাই আশিকের ফোন,

'ভাই,ফেসবুকে দেখছেন কিছু?'
'দেখেছি।'
'যার জন্য এতোকিছু করলেন। কি করেন নি আপনি তার জন্য! পারলে নিজের কলিজা কেটে খাওয়াতেন,সেই মেয়ে এখন অন্যের হয়ে গলো! আমি হলে ভাই প্রতিশোধ নিতাম। ঐ মেয়ের কলিজা কেটে খেতাম।'

আশিকের কলিজা কেটে খাওয়ার কথা শুনে আবারো ধাক্কা খেলাম। ও তো ঠিকই বলেছে। কি না করেছি মেয়েটার জন্য! আর এখন বলে আমি শারীরিকভাবে অক্ষম। পৌরষ্যত্বহীন। কোন পুরুষের কাছে এমন অপবাদ অপমানজনক। আমার সক্ষমতা ছিলো বিধায় চাষের ফসল জন্মেছিলো। তবে অঙ্কুরেই নষ্ট করে দেয় হয়। ওর ইচ্ছাতেই।

'তুই সিঙারা বানাতে পারিস আশিক?'
'কেন ভাই?'
'না পারলে শিখে ন। কাল একসাথে কলিজার সিঙারা খাবো।'

আমি আশিককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলাম। একটা সিএনজি ডেকে রওয়ানা হলাম গুলিস্তানের দিকে। রাতের শেষ বাসটা ধরতে হবে। একটা মেসেজ করলাম পুরোনো প্রেমিকাকে,'আমি আসছি, কাল দেখা করো। তোমার জন্য প্রচুর গিফট এনেছি।'

আমি জানতাম ও দেখা করতে রাজি হবে না। মেসেজ রিপ্লাইয়ে জানালো দেখা করবে না। তারপর আমাদের প্রেমের ঘনিষ্ঠ ভিডিও বরকে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে রাজি করালাম।

পরিশিষ্ট
আমার পুরোনো প্রেমিকা আমার সামনে বসে আছে। হটপট থেকে বিরিয়ানি বের করে মুখে তুলে খায়িয়ে দিচ্ছে।

'তুমি কলিজার বিরিয়ানি পছন্দ করো বলে রান্না করে আনলাম। কেমন হয়েছে?’
'তুমি কখনো মানুষের কলিজা খেয়েছো?'
'কিসব বলছো! খেয়ে দ্রুত আমার গিফট দিয়ে বিদায় হও।'

আমি কয়েক লোকমা খাবার মুখে দেয়ার পর কেমন যেনো ঝিমিয়ে যেতে লাগলাম। আশেপাশে সব ঝাপসা দেখাচ্ছে। একটা পর্যায়ে ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলাম। আমি সম্ভবত মারা যাচ্ছি। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। পুরোনো প্রেমিকার ক্ষিপ্রতার সাথে বলা একটি কথা আমার কানে এসে আঘাত করলো।
'কত্তো বড় কলিজা তোর;আমার সেক্স ভিডিও আমার নতুন বরকে দিবি! কলিজার বিরিয়ানি তোর পছন্দ তাই না? আজ তোর কলিজা দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করবো। আর সেটা আমি আর বর খাবো।’

আমি আর কিছু শুনতে পেলাম না। সম্ভবত ও এখন আমার পেট কেটে কলিজা বের করছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:০৩
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×