somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতিসংঘে 'সার্বভৌম রাষ্ট্রের' মর্যাদা দাবি করে প্রস্তাব তুলবেন আজ মাহমুদ আব্বাস, আসুন জেনে নেই সার্বভৌম রাষ্ট্র হলে কী হবে আর ন হলে কী হবে 8-|

২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলন (পিএলও) বর্তমানে জাতিসংঘের 'স্থায়ী পর্যবেক্ষকের' মর্যাদা ভোগ করছে। এবার তারা 'নন মেম্বার অবজারভার স্টেট' বা 'সার্বভৌম রাষ্ট্রের' মর্যাদা দাবি করছে। গত বছর জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ সদস্য রাষ্ট্রের মর্যাদা চেয়ে আবেদন করেছিল তারা; কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে পর্যাপ্ত সমর্থন জোগাড় করতে না পারায় সে আবেদন ভেস্তে যায়। এবার ফিলিস্তিনিরা কী চাচ্ছে, চাওয়া-পাওয়া মিলে গেলে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হবে কি না, প্রস্তাব পাস না হলে কী হতে পারে, তাই তুলে ধরা হলো
_
ফিলিস্তিনিরা কী চাচ্ছে?

ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকাকেও পশ্চিম তীরের সঙ্গে যুক্ত করতে চায় তারা। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের পর ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা দখল করে নেয়। ১৯৯৩ সালে পিএলও ও ইসরায়েলের মধ্যে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষ পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সহাবস্থানে রাজি হয়। চুক্তিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ (পিএনএ) নামে ফিলিস্তিনে অন্তর্বর্তী স্বায়ত্তশাসিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার দায়ভার তাদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। অধিকৃত অঞ্চল থেকে ইসরায়েল তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে। আশা করা হয়েছিল, পাঁচ বছরের এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উভয় পক্ষ সীমানা, নিরাপত্তা, ফিলিস্তিনি শরণার্থী, ইসরায়েলি বসতি ও জেরুজালেমের স্বরূপ (স্ট্যাটাস) নির্ধারণের মতো ইস্যুগুলো আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করবে; কিন্তু পরবর্তী ২০ বছরে বেশ কয়েকবার শান্তি আলোচনায় বসেও দুই পক্ষ কোনো সমঝোতায় পেঁৗছতে পারেনি। ২০১০ সাল থেকে শান্তি আলোচনাই স্থবির হয়ে আছে।

এরপর কূটনৈতিক পথ বেছে নেন ফিলিস্তিনি নেতারা। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগের সীমানা নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে তাঁরা বিভিন্ন দেশের কাছে আবেদন জানান। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট ও পিএলওর চেয়ারম্যান মাহমুদ আব্বাস পূর্ণাঙ্গ সদস্য রাষ্ট্রের পদ চেয়ে জাতিসংঘে আবেদন করেন। প্রস্তাব পাসের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ১৫ সদস্যের মধ্যে ৯ সদস্যের ভোট দরকার ছিল। তা না পাওয়ায় আব্বাসের আবেদন বাতিল হয়ে যায়। এবার আব্বাস আগের চেয়ে এক ধাপ নিচে নেমে 'সার্বভৌম রাষ্ট্রের' মর্যাদার আবেদন করছেন। বর্তমানে কেবল ভ্যাটিকান সিটির এ মর্যাদা রয়েছে।
প্রস্তাব পাস হলে ফিলিস্তিনিরা সাধারণ পরিষদের বিতর্কে অংশ নিতে পারবে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আইসিসিতে যোগ দিতে পারলে ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকেও চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। ২০০৮-০৯ সালে গাজায় হামলার সময় ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধাপরাধ করেছে বলেও অভিযোগ আছে। সে বিষয়েও আইসিসির কাছে তদন্তের দাবি তোলা যাবে, যদিও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আইসিসিতে ফিলিস্তিনের যোগ দিতে পারার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

যা চাচ্ছে তা পাওয়ার প্রক্রিয়া কী?

ফিলিস্তিনের সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়াটা এক রকম নিশ্চিত। ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে তাদের প্রস্তাবের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পড়লেই চলবে। নিরাপত্তা পরিষদের মতো সাধারণ পরিষদে ভেটো প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। পিএলওর দাবি, এরই মধ্যে তারা ১৩০ সদস্যের সমর্থন জোগাড় করেছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা আশা করছেন, তাঁদের প্রস্তাবের পক্ষে ১৫০ থেকে ১৭০ ভোট পড়বে। তাঁরা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ সদস্য পদের বিষয়টি আপাতত স্থগিত রেখেছেন তাঁরা। সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা নিশ্চিত হলে পরে সুবিধামতো সময়ে পূর্ণাঙ্গ সদস্য পদ চাইবেন তাঁরা।


প্রতীকী অর্জন হয়েই থাকবে, না পরিস্থিতি পাল্টাবে?

ধারণা করা হচ্ছে, ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলেও সেটা হবে ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রতীকী অর্জন। কারণ তারা যে সীমানাকে ভিত্তি ধরে পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় যেতে চায়, তাতে সায় নেই ইসরায়েলের। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ১৯৬৭ সালের আগের সীমানাকে ভিত্তি ধরে কোনো রকম আলোচনায় বসতে নারাজ।
পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম মিলিয়ে বর্তমানে দুই শতাধিক বসতিতে প্রায় পাঁচ লাখ ইহুদি বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ হওয়ার পরও ইসরায়েল তা মানে না।
ফিলিস্তিনিদের যুক্তি, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবেও যদি জাতিসংঘের সদস্য পদ পাওয়া যায়, তবে পরবর্তী সময়ে তা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় তাদের এগিয়ে রাখবে। সে ক্ষেত্রে জেরুজালেমের স্বরূপ নির্ধারণ, বসতিসংক্রান্ত বিরোধ, সীমানা নির্ধারণ, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার, পানির অধিকার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতো মূল বিষয়গুলোতে তারা সমানতালে দরকষাকষি করতে পারবে। যদিও ইসরায়েল বলছে, গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়ে ফিলিস্তিনিরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এখন মর্যাদা বাড়ানোর আবেদন নিয়ে তাদের জাতিসংঘে যাওয়া মানে কথার বরখেলাপ করা।

কেন এখন জাতিসংঘে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা?

শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার কারণেই মূলত ফিলিস্তিনিরা জাতিসংঘের পথ ধরেছে। সর্বশেষ আলোচনা কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। শিগগিরই যে এ আলোচনা আবার শুরু হবে, এরও কোনো ইঙ্গিত নেই। ফিলিস্তিনি নেতারা বলছেন, একটি রাষ্ট্র পরিচালনার মতো সক্ষমতা রয়েছে তাঁদের। রাষ্ট্র চালানোর মতো প্রয়োজনীয় সব প্রতিষ্ঠানই গড়ে তোলা হয়েছে। জনসমর্থনও তাঁদের সঙ্গে আছে। এখন তাঁরা প্রস্তুত। বিশ্বব্যাংকও একই কথা বলেছে। যদিও পশ্চিম তীর ও গাজার অর্থনীতি ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে কতটা সহায়তা করতে পারবে, তা নিয়ে তাঁদের সংশয় আছে।

পক্ষে কারা, বিপক্ষে কারা?

২০১১ সালে পূর্ণাঙ্গ সদস্য পদের প্রস্তাব উত্থাপনের সময় অধিকৃত অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। এবার ততটা প্রতিক্রিয়া নেই সেখানে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ আন্দোলন (পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণকারী দল) স্বাভাবিকভাবেই নতুন প্রস্তাবে সমর্থন দিচ্ছে। পিএলওর জোটসঙ্গী অন্য দলগুলোও সম্মতি দিয়েছে।
গাজার নিয়ন্ত্রণকারী দল হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা শুরুতে এ প্রস্তাবের সমালোচনা করেছিলেন। তবে সর্বশেষ গাজায় ইসরায়েলের আট দিনের হামলার পর হামাসের নেতা খালেদ মেশাল আব্বাসের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। কট্টরপন্থী সংগঠন ইসলামিক জিহাদও মৌখিকভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২২ দেশের জোট আরব লীগেরও সমর্থন রয়েছে।
তবে ইসরায়েল এ প্রস্তাবের ঘোরবিরোধী। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দেওয়া শুল্ক, আয়কর ও রাজস্ব স্থগিতের পাশাপাশি প্রস্তাব পাস হলে আব্বাসকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রও ২০ কোটি ডলারের সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

সূত্র: বিবিসি ও কালের কন্ঠ
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১৮
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×