somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোগের নাম আত্মপ্রেম//

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জীবনে বহু রোগের নাম শুনেছি ; যেমন মানব প্রেম,প্রকৃতি প্রেম ,জীবে প্রেম,কিন্তু আত্মপ্রেম বলে যে আদৌ কোন রোগ থাকতে পারে তা আমার মস্তিষ্কে কোন দিন আসেনি।আমি জানতাম সবাই নিজেকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু এই অধিক ভালোবাসাটাওযে এক সময় রোগে পরিনত হয় তা জানতে পারলাম একদিন।
সেদিন অনলাইন এক্টিভিটিসদের নিয়ে বিশাল এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে।দেশের নানান অঞ্চল থেকে ব্লগারদের আগমন ঘটেছিল,একত্রিত হয়েছিল সেলিব্রিটি অনলাইন এক্টিভিটিস্টরা।উদ্দেশ্য একটাই –অনলাইনে যারা লিখছি তাদের কিছু ধরা বাঁধা নিয়ম শেখানো, কি লেখা উচিত আর কি না।সহজ ভাষায় বলতে গেলে দেশের নাম করা জজ ব্যারিস্টাররা এসেছেন পানি দিয়ে ৫৭ ধারা গুলিয়ে খাওয়ানোর জন্যে।আমি ভাবলাম এইতো সুযোগ আমার খালাতো বোনটাকে এই চান্সে কিছু শেখানো যাবে।মেয়েটা কলেজের গন্ডিও পার হয়নি ,কিন্তু সারাদিন ফেইস বুকের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকে।ক্ষানিক হাসে,আবার ক্ষানিক বাদে বিরহের স্ট্যাটাস দেয়।আর ঘন্টায় ঘন্টায় প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন অনেকটা ডাল দিয়ে ভাত খাবার মতোন অবস্থা।
যেমন ভাবনা তেমন কর্ম করে ফেললাম।খালতোর হাতে নোটবুক আর কলম ধরিয়ে দিয়ে পাশের ডেক্স টেনে বসলাম।তখন আইনের প্রয়োগ আর লেখার সীমাবদ্ধতা নিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ন আলোচনা আরম্ভ হয়ে গেছে,এর মধ্যে দর্শক শারি থেকে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে,মঞ্চ থেকে উড়ে আসছে ভাড়ি ভাড়ি উত্তর।এর মাঝেই আমার মোবাইলে নোটিফিকেশন এলো-জুহি হ্যাজ আপডেট এ স্ট্যাটাস।আমি স্ট্যাটাস অপেন করলাম,দেখি খালতো অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু লিখেছে নিশ্চই।স্ক্রীনে টাচ করতেই গোটা গোটা অক্ষরে লেখা তাকিয়ে রইলো,পুরো ইংলিশে না।ভেঙ্গে ভেঙ্গে-fling bore…
আহা মেয়েটা সেই কোন সকালে বাশি পেটে বের হয়েছে ,খারাপ তো লাগবেই।আমি ফিসফিস করে কানের কাছে গেলাম-টেনশন নিস না। একটু পরেই লাঞ্চ দিবে,বিরানী আছে।
কিন্তু বিরানীর আশ্বাস দিয়েও কোন লাভ হলো না,তার বাঁকা মুখ বাঁকাই রয়ে গেল।একটা বাজতেই ব্রেকের ঘন্টা বাজলো,মনোরম খাবারের গন্ধ ভেসে আসছে ডাইনিং থেকে।আমি মুখে পানি দিয়েই খাবারের ইশারায় পা বাড়ালাম।সেই সাথে খুঁজতে থাকলাম আমর খালাতোকে।।কিন্তু আশে পাশে না দেখে খুব চিন্তিত হয়ে বড় লনের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে খানিক দূরেই দেখলাম-খালাতোর মুখ ভরা হাসি,দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এই অনুষ্ঠানের সব চেয়ে বড় দুইজন আলোচক যাদের নাম আমি নিজেও ভালো করে জানতাম না।এখানে এসেই প্রথম পরিচয়।ওমনি আমার হাতের স্মার্ট ফোন আওয়াজ করে উঠলো-জুঁহি হ্যাজ আপডেট এ ফটো।উৎফুল্ল হয়ে আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি।একি সেই হাসি মাখা মুখ যা আমার বোনের মুখ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল খানিক আগেও।স্পষ্ট ইংরেজীতে লেখা –feeling great with……
যাদের নাম লিখেছে তাদের বয়স কম করে হলেও ৬০ বছর।একটি ১৯ বছরের মেয়ের পক্ষে এদের কাজের অবদান সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া সম্ভব নয়,কারন এরা বেশীর ভাগ সময়ই দেশের বাইরে থাকেন।এমন বড় মানুষের সাথে আমার নিজেরো পরিচয় নেই।তাহলে তাদের পেয়ে কেন গ্রেটফুল হতে হবে,তাদের নিয়ে মুখে বিগ সাইজের হাসি দিয়ে কেন প্রোফাইল পিক বানাতে হবে-তাই বুঝতে পারছিনা।নাকি সেলিব্রেটিদের সাথে সেলফি তোলাই মহৎ একটা কর্মের মধ্যে পড়ে।
আমার খালতো সারা সেমিনারে কাজের কাজ একটাই করেছে।ধারা ফাড়া সে কিছুই বোঝেনি,সমানে সেলফি তুলে গেছে,কখোন একা,কখনো বান্ধবীদের নিয়ে,আবার কখনো সেলিব্রেটিদের কাছে দাঁড়িয়ে।আর বড় বড় অক্ষরে লিখে দিয়েছে-flng gr8 at krrishibid….
আত্মপ্রেমের এই রোগীকে ইংরেজীতে বলা হয়- নার্সিসিস্টিক
কিন্তু কিছু ঘটনা দেখে বোঝার উপায়ি নেই এটা আত্মপ্রেম নাকি আত্মঘাত।কিছুদিন আগে টর্নেডোর সামনে
দাঁড়িয়ে এক লোক সেলফি করছিল।ভাবটা এমন –“মরলে মরুম,তবু সেলফি ছাড়ুম না।“
আবার একটা মেয়েকে দেখলাম শেজদারত অবস্থায় হাত বাড়িয়ে সেলফী নিচ্ছে।এই ছবি সে সৃষ্টি কর্তাকে পাঠায়নি,কারন উনি সব দেখতে পান।তাই বন্ধুদের দেখানোর জন্যে নিজের টাইমলাইনে পাবলিক করে দিয়েছে।
দাদার মৃত দেহের পাশে হাসি মুখে নাতির সেলফি –good bye grandpa…-এই ঘটনাতো অনেক পুরোন।গরু –ছাগলের গলা ধরে সেলফি না দিলে এখন কোরবানীই হয় না। ঈদের দিন পুরো ফেইসবুক জুড়ে কেবল রক্তা-রক্তি চিত্র,তার পাশে হাসি মুখের সেলফি।টানা তিন দিন ফেইসবুক খুলিনি ভয়ে।এই কিছুদিন আগেও বিষধর সাপের সাথে সেলফি তুলতে গিয়ে তার কামড় খেয়ে একজনকে হাসপাতালের বিল গুনতে হয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
আমরা ভুলেই যাই ,নিজের অপরাধ জগতের কোন কিছুই আমরা অনলাইনে দিতে পছন্দ করিনা।যা দেই সবটাই ভালো বা পবিত্র ধরে নিয়ে দেই যা অন্যের জন্যে মোটেও সুখকর নয়।আর যদি সত্যি কথাই আমরা প্রকাশ করতে চাইতাম তাহলে হাইজাকাররা কবেই স্ট্যাটাস দিয়ে সেলফি দিত-feeling great, just hacked a laptop.
আমি সেই সব স্ট্যাটাস সমৃদ্ধ সেলফির জন্যে অপেক্ষা করি প্রতিদিন।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৩
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×