somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজের চোখে নারী এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবস /

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অন্যবারের মতোন এবারো বেশ ঘটা করে পালিত হবে বিশ্ব নারী দিবস।নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই সেই নিউইউর্কের পথ অনুসরন করে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল নারী দিবস। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ সালে খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে।
এখন কথা হচ্ছে যাদের নিয়ে ঘিরে এতো জাঁকজমক আয়োজন আদতে তাদের অবস্থান কোথায় এদেশে ,চিত্র অনেক পালটে গেছে বাংলাদেশের।এখন ঘর থেকে অনেক নারী বাইরে বেরিয়ে এসেছে,গার্মেন্টস থেকে আরম্ভ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করছে নারী. কর্মজীবি নারীদের উপর জরিপ চালানো হচ্ছে,তাদের কর্ম দক্ষতা ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু যে সব নারীরা কেবল সংসারের কথা ভেবে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও বাইরের কাজ ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে গৃহস্থালি কাজে সময় দিচ্ছেন তাদের বিষয়ে জরিপ দেখা যাক।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) যৌথ গবেষণা 'জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদান নিরূপণ: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত' এ তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের নারীরা বছরে গৃহস্থালির কাজ করে ১০ লাখ ৩১ হাজার ৯৪১ কোটি টাকার, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের দেশজ মোট উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ।এর কোন শতাংশই নারী উন্ন্যনের কাজে ব্যবহার হয় না।
সূত্র ঃ Click This Link
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ভিএডব্লিউ) সার্ভে ২০১১ শীর্ষক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, যেসব নারী আয় করেন; তাদের প্রায় ২৪ শতাংশেরই নিজের আয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা দেখিয়েছে, গ্রামের তুলনায় শহুরে নারীদের নিজেদের আয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ কিছুটা বেশি আছে।
ওই জরিপে আরও দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ নারীরই উপার্জনের স্বাধীনতা নেই। মাত্র ১৫ শতাংশ নারী নিজের ইচ্ছায় উপার্জনের স্বাধীনতা পান। আবার যারা নারীকে উপার্জন করতে দেন, তাদের মধ্যে ৯৩.১৯ শতাংশ স্ত্রীর উপার্জন করার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেন না।
২০১৫ সালের জরিপে দেখা যায় ,কৃষিতে নারীর অবদান পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি ।কিন্তু তাদের অধিকার সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি,সংসারেও তাদের এমন কোন অবস্থান নেই যদিও সংসার চালানোর আয় তাদের উপার্জন থেকেই আসে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮১ শতাংশ নারী গৃহসহ কৃষিকাজে সরাসরি অবদান রাখছেন। কিন্তু তাদের শ্রমকে শ্রমশক্তি হিসেবে গণ্য করা হয় না। কারণ তাদের এ কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না।
কৃষিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে দরিদ্র ভূমিহীন এবং উপজাতি নারীদের বেশি সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়। উপজাতি নারীরা ফসল লাগানো, পরিচর্যা এবং ফসল কাটার মৌসুমে দল বেঁধে মাঠে কাজ করেন।
“কৃষিকাজে সম্পৃক্ত নারী একই সঙ্গে ঘরের কাজ ও কৃষিকাজ সম্পাদন করেন। তারপরও এ দেশে কৃষিক্ষেত্রে নারীর অবদান অদৃশ্য ও অস্বীকৃত রয়ে গেছে,” জানান বাগেরহাটের ফকিরহাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিরিন আক্তার।
তাঁর মতে, কৃষিকাজে সম্পৃক্ত নারী কৃষক মজুরি প্রাপ্তিতে কোনও কোনও ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের নামমাত্র মজুরি দেওয়া হয়। অবশ্য সরকারি সব কাজে নারী ও পুরুষের মজুরী সমান।এখানে বৈষম্য সৃষ্টির সুযোগ নেই।
সূত্রঃ Click This Link
বৈদেশিক মুদ্রার একটি অন্যতম অংশ আসে দেশের গার্মেন্টস শিল্প থেকে ।আর এখানে একটি বিরাট অংশ নারী কর্মজীবি ,এই সব নারীদের সাথে আলাদা করে কথা বললে বোঝা যায় কেবল কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কিভাবে ভাব বিনিময় করতে হয়।যদিও এ নিয়ে কোন জরিপ কোন এন জি ও করেনি,করলে হয়তো কেঁচো খুড়তে গেলে আস্ত একটা সাপ বের হয়ে আসবে।আমি সাপ বের করার ক্ষমতা রাখিনা,তাই স্বয়ং গার্মেন্টস ধসে পড়লেও নারীদের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয় না তার উপর আলোকপাত করছি।
শ্রম আইনের ৭৯ ধারায় বলা আছে, নারীদের কোনো বিপজ্জনক কাজে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। ৯৩ ও ৯৫ ধারায় বলা হয়েছে-নারী শ্রমিক ৪০ জনের বেশি আছে এমন কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের পরিচর্যার জন্য আলাদা কক্ষ ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিশুর সংখ্যা ২৫ এর বেশি হলে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
এই কথা গুলো আমার কাছে সত্যি রূপকথার গল্প মনে হয়।শুনেছিলাম মেয়েদের জন্য এস এস সি অব্দি বিনা মূল্যে লেখা পরার ব্যবস্থা করেছেন সরকার।কিন্তু বাস্তবে ,গৃহে শিশু নারী কর্মী নিয়োগ কম হলেও গার্মেন্সে ১২ বছরের মেয়েকে ১৬ বানিয়ে ঠিকই গাধার খাটুনি খাটানো হচ্ছে।দরিদ্র পরিবারের শিশু নারী তাদের জন্য আশির্বাদ এক রকমই ,বাবা মায়ের আরো দুই চারটা সন্তান পালনের দায়িত্ব তার উপর পরে ।কিছুটা ঝাড়া হাত পা হলে সে নিজেও মায়ের আঁচল ধরে কাজে নেমে পড়ে।এভাবে নারী কেবল ঘরে নিগ্রহ হয় না,নিগ্রহ হয় কর্মক্ষেত্রে ,রাস্তায় -এক কথায় সব জায়গায়।
এই সমাজে নারীর সন্মান বিক্রী হয়ে যায় চোখের নিমিষে।কোন ঘটনার আড়ালে যদি কোন নারী থাকে তাহলে সেই খবরটি হয় খুবই মজাদার আর চমতকৃত।যতোটা ইচ্ছে সেটাকে ঘুরিয়ে রসালো করে পরিবেশনের করার মধ্যেই মিডিয়ার আগ্রহের কমতি থাকেনা।এই অধিক আগ্রহের কারণে প্রকৃত ঘটনা আড়ালে থাকে অথবা অতিরঞ্জিত হলে সমাজে নেতি বাচক প্রভাব পড়ে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুই ভাই বোনের মৃত্যূ-এই খবরটিকে নিয়ে নানা ভাবে খেলেছেন আমাদের পত্রিকাওয়ালা ।ফরেনসিক রিপোর্টে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে জানিয়ে ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘আলামতে নাকে-মুখে ও গলায় চাপ দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। এছাড়া আমরা যে ধরনের আলামত পেয়েছি তার ভিত্তিতে বলা যায়, একজনের পক্ষে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা দুষ্কর। বিশেষ করে, চৌদ্দ বছরের একটি মেয়েকে চেতনানাশক না খাইয়ে অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় না থাকলে এক জনের পক্ষে শ্বাসরোধে হত্যা করাটা কঠিন।’
সূত্রঃ http://www.bdmorning.com/desh/85328
ঘটনার প্রেক্ষাপটে র‍্যাবের সন্দেহ হলে বাবা-মা ও খালাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মা মাহফুজা মেয়ে ইশরাত জাহান অরণী (১৪) এবং ছেলে আলভী আমানকে (৬) হত্যার কথা স্বীকার করেন। এসময় পরকীয়া, মানসিক অস্থিরতা ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের কারণে তাদের হত্যা করেন বলে জানান তিনি।
সূত্রঃ http://www.bdmorning.com/desh/85078
সন্তানদের লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে তাদের হত্যা করেছেন বলে র‍্যাবকে জানিয়েছেন মা মাহফুজা মালেক। তবে মাহফুজার এমন দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর দাবিকে অনেকেই ভিত্তিহীন বলে মনে করছেন।
সুত্রঃ http://www.bdmorning.com/desh/85401
যদিও এটা অন লাইন পত্রিকা,কিন্তু এর পাঠক সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।কিন্তু তাদের অস্থিরতা দেখে ,আর নীচে একই খবরের এতো গুলো লিঙ্ক দেখে মনে হচ্ছে এই একটি নিউজ দিয়েই এই মাসটা ভালোই চলে যাবে।
এবার কিছু পরিচিত পত্রিকার লিঙ্কে যাই –
র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে বলেছেন, মাহফুজা মালেক জেসমিনের পারিবারিক কলহ, মানসিক বৈকল্য, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক, অর্থ-সম্পত্তির লোভ প্রভৃতিই এ হত্যাকা-ের প্রধান কারণ।
সূত্রঃ Click This Link
এমন মা কি কখনও হতে পারে ,মা তার সন্তানের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেন,তার নজিরও রয়েছে অনেক।কিন্তু এবার এক পাষন্ড মা সবাইকে করেছে হতবাক।বনশ্রীর দুই সন্তানকে তার মা নিজ হাতে খুন করেন।
সূত্রঃ Click This Link
বনশ্রীতে দুই শিশু হত্যাকারী মায়ের ডাক্টারি পরীক্ষা করে তার মানসিক অবস্থা যাচাই করে রাষ্ট্রকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, রাষ্ট্রের ব্যর্থতার কারণেই দেশে শিশু হত্যা ও নির্যাতন বাড়ছে। অবিলম্বে রাষ্ট্র সঠিক পদক্ষেপ না দিলে দেশে দুর্যোগ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
সূত্রঃ Click This Link
এভাবেই প্রতিনিয়ত একটি খবরের উপর আমরা আরো অনেক খবর পাচ্ছি।আমি ভেবে অবাক হই যে এই মামলার এখনো বিচারই আরম্ভ হয়নি ,তাহলে এতো জোর দিয়ে কিভাবে বলা যায় মা মাহফুজাই একাই তার বাচ্চাদের খুন করেছে।এটা বলার দায়িত্ব কি আমাদের ?তার উপর সংবাদ গুলো বলিষ্ঠ ভাবে টিভিতে প্রচার করা হয়েছে মায়ের বিরুদ্ধে মামলা হবার আগেই।এই সংবাদ কতোটা মানসিক চাপে ফেলেছে মেয়েদের ,কেউ কষ্ট করে বাচ্চাদের স্কুলে একবার দুই এক ঘন্টা মায়েদের সাথে বসে আলাপ করলেই বুঝতে পারবেন।সিরাজগঞ্জে মায়ের হাতে শিশু খুন নিয়ে এতোটা বাড়তি আলাপ হয়নি যতোটা না বনশ্রীর বিষয় নিয়ে হয়েছে।কারন কি বনশ্রীর মা শিক্ষিত বলে ?নাকি মধ্যবিত্ত ঘরের বলে ?কিন্তু শিক্ষিত অশিক্ষিত কোন মায়ের পক্ষেইতো স্বাভাবিক অবস্থায় এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব না।
এই বিষয়ে টরেন্টো থেকে নতুন দেশের প্রধান সম্পাদক যা বলেছেন তার কিছু অংশ শেয়ার দিলাম –
পশ্চিমা দেশগুলোতে খুনখারাবী বাংলাদেশের চেয়ে কম হয় না। আমেরিকায় তো বাংলাদেশের চেয়েও বীভৎস ঘটনা ঘটে। কিন্তু সেই সব ঘটনার ‘রগরগে’ বিবরণ মিডিয়া প্রচার করে না। আইন শৃংখলা রক্ষী বাহিনী ‘মৌলিক’ তথ্যের বাইরে বাড়তি কোনো তথ্যই তারা প্রচার করে না। তারা জানে- তাদের দায়িত্ব অপরাধীকে চিহ্নিত করা, অপরাধ সংঘটনের সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা যাতে অপরাধীর শাস্তি হয়। ঘটনার প্রচারণা আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর কাজ নয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রচারণা যতোটা হয় অপরাধ শনাক্ত করা কিংবা সাক্ষী প্রমাণ নিশ্চিত করার কাজ ততোটা হয় না। আর মিডিয়াও পুলিশের বক্তব্যকেই এমনকি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে কল্পকাহিনী ছড়াতেই বেশি পছন্দ করে।বনশ্রীর হত্যাকাণ্ডেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। র‌্যাব এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তড়িঘড়ি করে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে যে বক্তব্য দিয়েছেন- পশ্চিমা কোনো দেশে হলে তিনি চাকরি তো হারাতেনই, এতোক্ষণ মিলিয়ন ডলার মামলার মুখোমুখি হতেন। বাংলাদেশে হয়তো এগুলোই স্বাভাবিক ঘটনা, এগুলোই নিয়ম। কিন্তু আমরা কি ভিন্ন কিছু ভাববো না? নতুন চিন্তা করবো না?
সূত্র ঃ Click This Link
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ হত্যার ব্যাপারে মা-ই যে সন্তান হত্যা করেছে এ ব্যাপারে যতটা তত্পর অন্য ঘটনাগুলোর ব্যাপারে তাদের এ তত্পরতা দেখি না। র‌্যাবের সূত্র ধরে গণমাধ্যমে এই সংবাদে হত্যাকারী সম্পর্কে ফলাও প্রচার এবং তথাকথিত হত্যাকারীর ছবি প্রকাশ কতটা যুক্তিযুক্ত তা-ও প্রশ্নসাপেক্ষ। মামলা হওয়ার আগেই বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদ, স্বীকারোক্তি এবং সংবাদ সম্মেলন করে প্রচার করার আইনগত ভিত্তি নিয়ে অনেক আইনবিদই ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। মা র‌্যাব বা পুলিশের সামনে কী বলেছেন তার আইনগত ভিত্তি নেই। মামলা হওয়ার আগে এটি ফৌজদারি কার্যবিধি ও অভিযুক্ত ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। সংবিধান অনুযায়ী কাউকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। র‌্যাব এও বলেছে, স্বীকারোক্তির সময় সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন হত্যাকারী মা। তবে সাংবাদিকদের র‌্যাবের দেওয়া তথ্যই প্রকাশ করতে হয়েছে। তাদের সে তথ্য যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই।
সূত্র ঃ Click This Link
বনশ্রীর ঘটনা নিয়ে অতি উৎসাহী গন-মাধ্যম অথবা র‍্যাব নিয়ে যথারীতি অনেক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।কিন্তু সবার চোখের অন্তরালে যে বিষয়গুলো এখনো রয়ে যায় তা হচ্ছে বাংলাদেশসহ আরো কিছু মুসলিম বিশ্বে নারীদের জীবনব্যবস্থা।একজন মেয়ে পৃথিবীতে আগমনের সাথে সাথেই তাকে এবং তার চারপাশের পুরুষ বন্ধুদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়-এইটা নারী।এরজন্য এই এই বিষয় গুলো একেবারেই নিষিদ্ধ।আগে এই বিধি নিষেধ আরোপ করা হতো সমাজের সীমাবদ্ধতার কারণে আর এখন করা হচ্ছে নিরাপত্তার অভাবে।এর মধ্যেই বেড়ে ওঠা অনেক নারী হঠাত যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিয়ে বাড়ির বাইরে থাকা আরম্ভ করে তাদের মধ্যে স্বাধীন চেতা মনোভাব এতোটাই তীব্র হয়ে যায় যে পাখীকে যে দিন শেষে নিড়ে ফিরতে হয় তাই মনে থাকে না।আবার কারো পায়ের শেকল এতোটাই শক্ত থাকে তাদের ধাক্কা দিলেও চার দেওয়ালের বাইরে এক পাও রাখেনা।এই চার দেওয়ালে থাকা পাখীগুলো একটা মাস্টার্সের সার্টিফিকেট নিয়ে সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের একখানা সিট নষ্ট করে পুনরায় সংসার নামক খাঁচায় আবদ্ধ হয়।কোন মন্ত্র বলে সে জেনে গেছে ভালো পড়াশোনা করলে ভালো একটা বর জোটে।
সেই ভালো বরের সাথে ক্রমাগত একিরকম জীবনে সে একদিন হাপিয়ে ওঠে।সকালে বরের নাস্তা,অফিসের জন্যে তৈরি করে দেওয়া,বাচ্চাদের নাস্তা-টিফিন,শ্বশুর শ্বাশুরীর সেবা যত্ন করতে করতে অধিকাংশ মেয়েই সংসারের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে।।পরিবারের সবার পছন্দের খাবার তৈরি করতে করতে এক সময় ভুলেই যায় মোড়ের দোকানে তার জন্য পছন্দের ফুচকা রেডি হচ্ছে।বিনোদন বলতে কেবল বাচ্চাদের হোম টিচার এলে টেলিভিশনের ভলিউম কমিয়ে স্টারপ্লাস বা জলসা।চাহিদা তাদের মাসে একটাই শাড়ী অথবা বাচ্চাদের স্কুল ছুটি হলে কোথাও বেড়িয়ে পড়া।বাচ্চাদের হোম ওয়ার্কের মধ্যে ক্রমাগত খুঁজে ফিরে ফেলে আসা অতীত কৈশর।নিজের শরীরের যে বাড়তি ভালো লাগা আছে তা সে চার বাচ্চার মা হলেও বোঝেনা।অর্গাজম সম্পর্কে স্বয়ং ডাক্তার নারীরই ধারনা নেই।কাউকে সেক্স এডুকেশন নিয়ে কিছু বলতে চাইলে এমন চোখে তাকায় যেন এর চাইতে গর্হিত অপরাধ আর কেউ করে না।
স্বামী পরকীয়া করলে এই সমস্ত নারী প্রথমে গোয়েন্দাগিরি করে,তারপর ঝগড়া করে, কান্নাকাটি করে বাপের বাড়ি ফিরে যায়।সবশেষে, ভাই ভাবীর কাছ থেকে বিতাড়িত হয়ে পুনরায় স্বামীর বাড়ি ফিরে আসে।নারী জানেনা কোনটা তার আসল বাড়ি,কি করলে ফিরে পাবে নিরাপদ জীবন।নারী জানতেই চায় না চার দেওয়ালের বাইরেও আলাদা একটা জগত আছে,একটু সচেতন হলেই নিজেকে অনেক খানি ভালো রাখা সম্ভব।কিন্তু অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় বিচলিত নারী যেন ভয়ংকর একটা গুহায় প্রতিনিয়ত ডুবতে থাকে ,সে খবর কেউ রাখে না।
বাংলাদেশে নারীদের গৃহস্থালির কাজের অর্থমূল্য হিসাব করা হয় না। এটা করা গেলে অর্থনীতিতে নারীর অবদান আড়ালে থেকে যেত না। উপরন্তু, জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অনেক বেশি হতো। দেশের এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশেও একই অবস্থা বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক গবেষণায় বলা হয়েছে। সময় ব্যবহারের দিক থেকেও পুরুষদের চেয়ে নারীরা এগিয়ে রয়েছেন। বিবিএসের সময় ব্যবহার জরিপে দেখা গেছে, কর্মজীবী একজন পুরুষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থের বিনিময়ে ছয় ঘণ্টা ৫৪ মিনিট কাজ করেন। আর নারীরা পাঁচ ঘণ্টা ১২ মিনিট কাজ করেন। তবে কর্মজীবী নারীরা বাসায় এসে পুরুষের চেয়ে তিন গুণ বেশি সময় কাজ করেন, যার শ্রমমূল্য নির্ধারণ করা হয় না। এ ক্ষেত্রে পুরুষ এক ঘণ্টা ২৪ মিনিট আর নারীরা তিন ঘণ্টা ৩৬ মিনিট ব্যয় করেন। সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ যথেষ্ট বেড়েছে। ২০০৬ সালে হিসাব করা শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ২৯ শতাংশ, ২০১০ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। তবু নারীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি স্বীকৃত হচ্ছে না। তাঁদের বড় অংশই কাজ করেন পারিবারিক মণ্ডলে, মজুরি পান না।
সূত্রঃ http://www.positive-bangladesh.com/event/2236
২০১৬ সালের ৮ মার্চ ,এই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আবার নতুন করে জরিপ হবে।প্রমানিত হবে মেয়েরা দিন দিন ঘরের বাইরে কাজ করতে শুরু করেছে।পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে পথ চলছে ,কিন্তু সেই পথ নারীদের জন্য কতোটা মসৃণ ,কতোটা আশংকামুক্ত সেটাই এখন ভাববার বিষয়।নারী মুক্তি কখনো রাস্তায় শ্লোগান দিয়ে পাওয়া যায় না,তাকে অর্থনৈনিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হয় ।প্রতিষ্ঠা করতে হয় নিজের অধিকার,আর সেটা নিজেকে ভালো না রেখে বা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো না থেকে সম্ভব না।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫৪
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×