এভাবেই আরো কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর একদিন মোহনার মা মোহনাকে ফোন করে বলেন, ঢাকায় বিডিআর বিদ্রোহ হচ্ছে। অনেক আর্মি অফিসার মারা গেছে। মোহনার ছোট ভাই অমিত হাসানকে অনেক বার ফোন করেছে কিন্তু হাসান ফোন ধরে না। এই খবর শোনার পর মোহনার বুকের ভেতরে কে যেন হাতুরি পেটাতে থাকে। সব কিছু ভুলে যেয়ে হাসানকে কল করে সে। কিন্তু হাসান ফোন ধরে না। কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না মোহনা। হাসানকে না পেয়ে হাসানের ছোট বোন তুলি কে ফোন করল। তুলি বলল, হাসান ভালো আছে, ডিউটি করছে। একথা শোনার পর মোহনা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল, এতক্ষন তার দম যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। হাসানের সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করতে লাগল সে। একসময় হাসান ফোন ধরল। খুব সাধারন কিছু কথা হল বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে। মোহনা হাসানকে সাবধানে থাকতে বললো। হাসান ডিউটি করছে সারা রাত। একফোটা ঘুম নাই চোখে। সারা রাত জেগে লাশ দেখছে। হাসানের জন্য মোহনার খুব মায়া লাগলো। আর কিছু না, শুধু বন্ধু ভেবে মোহনা সবকিছু ভুলে হাসানকে মেনটাল সাপোর্ট দিতে চাইল। কিন্তু হাসান মোহনাকে প্রতি নিয়ত এড়িয়ে চলছে। মোহনা কল করলে হাসান ফোন ধরে না, ফোন ধরলেও ভালো ভাবে কথা বলে না। মোহনাকে কেউ কখনো এভাবে অপমান করে নি। নিজেকে খুব ছোট মনে হল তার। এর পরও মোহনা হাসানের সাথে কথা বলতে চাইল, হাসানকে আবার ফোন করলো কিন্তু হাসান ফোন না ধরে এস এম এস দিল " চেকপোষ্টে আছি আর মোবাইলেও চার্য নাই, পরে কথা বলি?"
মোহনা রিপ্লাই করলো, :" ঠিক আছে, কতখন তুমি ওখানে থাকবা?"
হাসান লিখলো," রাত ৩ টা পর্যন্ত"
মোহনা রিপ্লাই করলো, "আমি রাত ৩ টার পর তোমাকে কল দিব"।
এর পর সারা রাত মোহনা অপেক্ষা করলো রাত ৩ টা বাজার। শুধু একটি বার হাসানের সাথে কথা বলার জন্য। ৩ টা বাজলো, মোহনা হাসানকে কল দিল, কিন্তু এবারও হাসান কল না ধরে এস এম এস দিল, "Dont call plz".
চরম অপমানে মোহনার নিজেকে কেটে ছিড়ে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করলো। নিজেকে নিজেই বললো, "ছিঃ মোহনা, তুই এতো নীচ!! তোর লজ্জা বলে কিছু নাই? তোকে এভাবে নর্দমায় ছুড়ে ফেলল একজন আর তুই তার জন্য সারা রাত জেগে থাকিস, তার জন্য চোখের জল ফেলতে ফেলতে নিজেকে মরুভূমি বানিয়ে দিলি!! ছিঃ"
গত ৩ মাসের সব কিছু মোহনার চোখের সামনে ভেসে উঠে। ধীরে ধীরে মোহনা অনুভব করতে থাকে, গত ৩ মাসে মোহনা এক মূহুর্তের জন্য নিজের কথা না ভেবে শুধু হাসানের সুখের কথা ভেবেছে। কিন্তু এর মাঝে মোহনা একটুও বুঝতে পারে নি, সে নিজে নিজের কত বড় ক্ষতি করে ফেলেছে। কার কাছে চাইবে মোহনা এই ক্ষতি পূরন? ডুকরে কেদে উঠে সে। সিদ্ধান্ত নেয়, অনেক হয়েছে, আর নয় হাসানের কাছে ছোট হওয়া। এবার সত্যই সব শেষ। মোহনা হাসানকে এস এম এস লিখলো, " তুমি আমার অনকে বড় ক্ষতি করে দিলে হাসান। কিন্তু এর জন্য আমার কনো আফসোস নেই। তোমার জন্য আগে আমার মধ্যে একটা অপরাধ বোধ কাজ করতো, এখন আর কোনো অপরাধ বোধ নেই। এটা কখনো জানতে চেওনা, আমি কেন নিজেকে অপরাধী মনে করতাম আর এখন কেন করছি না। তুমি অনেক ভাল থেকো।"
এর পর হাসান রিপ্লাই করলো, hope I could make you feel you are not guilty. best wishes for you and your love"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ২:৩৯