২১ আগস্ট। দেশের ইতিহাসের একটি কালো দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক।
এ ঘটনার বিচার হয়নি এখনো। দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে জানা গেছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ওই দিন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। কিন্তু গ্রেনেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় অল্পের জন্য বেঁচে যান শেখ হাসিনা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের তদন্তে ঘটনার পেছনের শক্তি কারা, তা উদ্ঘাটিত না হওয়ায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার মামলার অধিকতর তদন্ত দাবি করা হয়। আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত চলছে।
তদন্ত চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে বলে তদন্ত কর্মকর্তার সর্বশেষ একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
আগামী কিছুদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হতে পারে। কিন্তু এবারের তদন্তেও এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এখনো পর্যন্ত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।
তিনি কি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন?
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ওই বিশিষ্ট ব্যক্তি রয়েছেন ধারাছোঁয়ার বাইরে। এর কারণ কী তা স্পষ্ট নয়। জানা গেছে, সিআইডি কয়েকবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের চিন্তাভাবনা করেও সরকারের সবুজ সংকেত না পেয়ে পিছিয়ে যায়।
গত ১৯ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এক গুরুত্বপূর্ণ প্রেস ব্রিফিং করেন। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের চমকে দিয়ে তিনি যে তথ্যটি উপস্থাপন করেন, তা নিঃসন্দেহে চাঞ্চল্যকর। তিনি সরাসরি বলেন, ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সঙ্গে একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবেই নন, ন্যাশনাল কমিটি ফর ইন্টেলিজেন্স কো-অর্ডিনেশনের (এনসিআইসি) সমন্বয়ক হিসেবেও তিনি বক্তব্য পেশ করেন এবং বলেন, 'দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর জন্য র্যাবকে বিলুপ্ত করার চক্রান্ত চলছে। এ চক্রান্তের সঙ্গে একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক জড়িত। ওই পত্রিকায় ৪০ দিনে র্যাবের বিরুদ্ধে ৪৮টি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। পত্রিকাটির সম্পাদকের কর্মকাণ্ডে অনেকেরই প্রশ্ন্ন, তিনি কি পার্ট অব জঙ্গি? দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে তাঁর কী লাভ? র্যাবের সফলতায় তিনি কি মনঃক্ষুণ্ন? আগেরও কিছু ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্রব রয়েছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় অভিযুক্ত এক জঙ্গি তাদের সঙ্গে ওই সম্পাদকের বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছে। সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স তাঁকে চক্রান্তকারী হিসেবেই শনাক্ত করে। এসব কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের প্রতি সংবেদনশীলতার কারণে প্রধানমন্ত্রী এখনো তা চান না।'
গত বছরের ১০ মে প্রকাশিত সেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর জবানবন্দির বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, তাঁর ভাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার হোতা জঙ্গি নেতা তাজউদ্দিনের সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তাঁদের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। গোয়েন্দারা যে তাজউদ্দিনকে খুঁজছেন, সেটা মতিউর রহমান তাঁকে আগাম জানিয়ে দিয়ে সতর্ক করেছিলেন। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে এসব তথ্য লেখা হয়েছিল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক উপমন্ত্রী পিন্টুর একটি জবানবন্দির ভিত্তিতে।
তারিক আহমেদ সিদ্দিক যেহেতু একাধারে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা এবং এনসিআইসির সমন্বয়ক, কাজেই তাঁর মুখ থেকে যখন এ অভিযোগ আসছে, তাই ধরে নিতে আর কোনো দ্বিধা নেই যে, এ অভিযোগের ভিত্তি অনেক দৃঢ়। তিনি নিশ্চিত হয়েই অভিযোগ তুলেছেন এবং তাঁর বক্তব্য সরকারেরই বক্তব্য।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা এবং এনসিআইসির সমন্বয়ক মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের এই বক্তব্য দেশের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বক্তব্য অবশ্যই সরকারি বক্তব্য। তিনি তাঁর বাসায় বা অনুষ্ঠানে এ বক্তব্য দেননি। এটাকে ব্যক্তিগত বক্তব্য হিসেবে মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকারের এমন স্বীকারোক্তির পরও ওই পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ না করে পুলিশ এমন একটি বর্বর গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিট দিতে যাচ্ছে কেন? তাহলে এই চার্জশিটও কি ত্রুটিপূর্ণ থেকে যাবে? এ প্রশ্নটি এখন সংশ্লিষ্ট সবার।
সরকারের এমন বক্তব্যের পরও ওই সম্পাদক ধারাছোঁয়ার বাইরে কেন? তাঁর পেছনে কোন শক্তি রয়েছে যে, তথ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এ প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা যে পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সংশ্লিষ্টতা ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছেন, দেশের মানুষ মনে করে, যথেষ্ট তথ্য-প্রমানসহ তিনি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এমন একটি সংবাদ সম্মেলনের পরও অভিযুক্ত ওই সম্পাদক ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন_এটা মানতে পারছে না দেশের সচেতন মানুষ।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, একটি মহল ওই সম্পাদককে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে।
আইনের মূল বক্তব্য হচ্ছে_আইন তাঁর নিজস্ব গতিতে চলবে। বর্তমান সরকার আমলে লিমনের ওপর র্যাবের গুলিবর্ষণের ঘটনা একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। র্যাবকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে। র্যাবের বিরুদ্ধে সুশীল সমাজসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার। কিন্তু র্যাবের পক্ষে সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊধ্বর্তন মহল র্যাবকে রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কিন্তু ওই সম্পাদকের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ থাকার পরও তাঁকে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা নেই। এক সাবেক উপমন্ত্রীর ভাইয়ের সঙ্গে এই সম্পাদকের সখ্য সর্বজনবিদিত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্য আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাবেক উপমন্ত্রীর এই ভাই হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সরবরাহ করেন। এ ছাড়া হামলার বিষয়ে আগে থেকেই ওই সম্পাদককে অবহিত করেন সাবেক উপমন্ত্রীর ভাই। সাবেক উপমন্ত্রীর ভাইয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দেন আলোচিত সম্পাদকের অধীন এক রিপোর্টার। আওয়ামী লীগের গত মেয়াদে এই রিপোর্টার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলে আলোচিত সম্পাদক তাঁকে পুঁজি করে বাণিজ্য করেন। এ রিপোর্টারেরও ২১ আগস্ট গেনেড হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনিও হামলার বিষয়টি আগেই জানতেন বলে জানা গেছে। এখন সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আলোচিত সম্পাদক, সাবেক উপমন্ত্রীর ভাই ও সেই রিপোর্টারকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে কি বলা যাবে_আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে?
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী ওই সম্পাদকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা হলো_এক. তাঁর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দুই. তাঁর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিন. তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে র্যাবকে বিলুপ্ত করার চক্রান্তকারী। এসব অভিযোগ অবশ্যই মারাত্মক। ২১ আগস্ট হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় যাঁর বিরুদ্ধে, তিনি কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন? দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চক্রান্তে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে। আর জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, তাঁকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সোপর্দ করা যায়। তাহলে কেন আইনের হাতে ওই সম্পাদককে সোপর্দ করা হচ্ছে না? প্রথম শ্রেণীর একটি পত্রিকার সম্পাদক বলেই কি তিনি আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গেলেন। তাহলে কি বলতে হয়, আইনের নিজস্ব কোনো গতি নেই!
আলোচিত ব্লগ
জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?
অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।

১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।