somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নগরনামা

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুপুর হয়েছে খুব বেশী সময় আগে নয়, বাইরের আবহাওয়া দেখে কে বুঝবে? আকাশ বেয়ে বৃষ্টি সেই যে ঘন্টা দুয়েক ধরে পড়ছে তো পড়ছেই। অবিরাম। ঈশ্বরেরও তাকে থামাবার সাধ্য নেই। স্বস্তির বিষয় হলো কাঁচঘেরা কফিশপে এই একঘেঁয়ে বৃষ্টির ছাঁচ কনামাত্র শরীরে আসেনা।

এদিকে আলাপ বেশ জমে উঠেছে। চারদিন পরেই কানাডায় পড়তে চলে যাবে, সেই আনন্দ মেখে নিয়ে বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা, মন্দ কি? সেখানে গিয়ে সবার আগে কি কিনবে রোমেলের এই প্রশ্নের জবাবে সে তাই স্বভাববিরুদ্ধ সপ্রতিভ, “ম্যাকবুক, এইটা আবার জিগানো লাগে?”

অর্ক বৈশিষ্ট্যগতভাবেই ফিচেল, “যা শালা, বিশ্বাস কর আমি অন্যকিছু ভাবছিলাম। এমন কিছু যেটা পয়সা দিয়া কিনার পরে রোবটও শরীরের নিচের অংশে কিছু ফিল করে, সেইখানে তুই তো”

হো হো সমবেত হাসি শুরু হলে অর্কের দিকে চোঁখ পাকিয়ে তাকানো ছাড়া তাইফের আর কি করার থাকে? মাস তিনেক হলো প্রেমিকার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ হয়েছে। তাও কি বিশ্রীভাবে, এই হারামজাদারা সবাই জানে তাও এরকম বদমাইশী করবেই করবে। বদ একেকটা।
নীরা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বিনা কারণেই ঘাড়টা ডানদিকে একটু বাঁকিয়ে অভয়বাণী দিয়ে দিলো, “চিন্তা করিসনা তাই,(তাইফের সংক্ষিপ্ত নাম), তুই দেখিস ছয় মাসের মধ্যেই সেখানে সুইট একটা মেয়ে পেয়ে যাবি। আমার দোয়া।”

অর্ক পুনরায় ফর্মে, “শুনছিলাম শকুনের দোয়ায় গরু মরেনা। এখন আরো নতুন অনেক কিছু আসছে প্রবাদ-বাগধারায় নতুন এড করার লাইগা।”

তাদের কেউই সেই কথায় ভ্রুক্ষেপ না করলে তাইফ ঝটপট প্রশ্ন করে “নীরা, এতোক্ষণ হইলো আমরা আড্ডা দিতেছি তোর হাজবেন্ড দেখি একবারও কল করেনাই। বিষয়টা কি রে?”

নীরা তৎক্ষণাৎ সাত রাজার ধন পেয়ে গেছে এই গর্বে গর্বিনী, “আমার হাজবেন্ড খুবই ভালো রে। আমি কোথাও বের হইলে বারবার ফোন দিয়ে আমাকে অস্থির করে ফেলেনা। খালি আমারে একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে যে আমি সেইফলী পৌঁছাইছি কিনা। এছাড়া তার এইসব নিয়ে আর কোনই মাথাব্যথা নাই। আমার জন্য বিষয়টা এতো আরামের, কি বলবো? তুই কানাডায় গেলে বিয়ের জন্য এরকম মেয়ে খুঁজিস রে। আন্ডারস্ট্যান্ডিং নেচারের। যে তুই কোথাও বের হইলেই বারবার ফোন দিয়ে তোরে ডিস্টার্ব করবেনা। একেবারে আমার হাজবেন্ডের মতো। তোর বউ যদি এরকম না হয় তাইলে যন্ত্রণায় মারা যাবি।”

তাইফ মনোযোগ দিয়ে বিবাহিতা বান্ধবীর গুরুত্বপূর্ণ উপদেশগুলো শোনে। ভুল কিছুই বলেনাই। সবই ঠিক আছে। গতো তিন মাস ধরে এই প্রথম তার মনে হচ্ছে যে পাঁচ বছর সে কয়েদখানাতে ছিলো। উঠতে কৈফিয়ত, বসতে কৈফিয়ত, কোথাও বের হলে কৈফিয়ত, বাইরে থেকে বাড়ি ফিরলে কৈফিয়ত। যাক বাবা, আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যেই করে। ভবিষ্যতে যখনই বিয়ে করবে এইসব হিসাব মাথায় রেখেই বিয়ে করবে। আন্ডারস্ট্যান্ডিং নেচারের কাউকে না মনে হলে বিয়েই করবেনা। কি আছে জীবনে? ভাবনায় চূড়ান্ত মগ্ন হতে গিয়ে শার্টের বুকপকেটে থাকা মোবাইল কফিশপে উপস্থিত সকলকে সচকিত করে তীব্র শব্দে মাটিতে ছিটকে পড়ে। বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো তাইফের। অতঃপর নিজের কাছেই লজ্জিত হলো। তিন মাস ধরে যার থেকে মুক্তি পেয়ে নির্ভার নির্ভার লাগে তার দেওয়া পুরনো উপহার মাটিতে পড়ে গেলে কি আসে যায়?

প্রায় মিনিট পনেরোর মতো হল তারা কফির অর্ডার দিয়েছে। পাঁচজনের জন্য পাঁচটা কফি, তিনজন ক্যাপাচিনো আর দুইজন এক্সপ্রেসো। অর্ডার আসলে নিয়ে আসবার জন্য নীরা আর রোমেল উঠে দাঁড়ায়। তাদের দুইজনের টেবিল বাইরের দিকে, অনায়াসেই উঠে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে যাওয়া যায়।

কফিশপের দরজা দিয়ে ছয় ফুট দেখতে লম্বা নীল রঙের উজ্জ্বল শার্ট পরা স্বাস্থ্যবান এক পুরুষের অবয়ব নীরা আর রোমেলের মুখোমুখি হয়ে পরের মুহূর্তেই তাদের অতিক্রম করে নির্বিকারভাবে। রোমেলের সাথে বসে থাকা অন্য বন্ধুদের চোখাচোখি হলে প্রত্যেকেই যথাসম্ভব প্রতিক্রিয়াহীন থাকবার চেষ্টা করে। কোন প্রকারের প্রতিক্রিয়া দেখানোটাই এই সময়ে রিস্কি।

কফিতে চুমুক দেওয়া শুরু হলে নীরাই নতুন করে আবারো আড্ডা শুরু করে, “অর্ক একটু সর তো দেখি, কার্ডে সবাই মিলে তাইফকে কিছু লিখে দেই। প্রথমে আমি লিখবো।”

নিজের লেখা শেষ হয়ে অন্যরা কার্ডে লিখতে শুরু করলে আড়চোঁখে নীরা পেছনের দিকে তাকায়। নীল শার্ট পরিহিত দীর্ঘাঙ্গী পুরুষ একাই বসে আছে। বারবার মোবাইলটা বের করে কানের কাছে নিয়ে ধরছে। নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ডকে ফোন দিচ্ছে। তিন বছর আগে অদিতির কাছে শুনেছিলো পরে যে প্রেমিকা হয়েছিলো তার সাথে নাকি লাটসাহেবের সেই রকম কঠিণ প্রেম। দশ মিনিট দেরী করলেই তিনবার করে ফোন দেয়। তার আগের সাড়ে ছয় বছরে তার সাথে এরকম কিছু কখনো করেছিলো? বাবুর প্রশ্নই উঠেনা। নীরা নিজেই ফোন দিয়ে দিয়ে অস্থির হয়ে যেতো। আর এখন? তারই চোঁখের সামনে.........নীরাকে সচকিত করে তার মোবাইল ভাইব্রেট করতে শুরু করে। কলদাতার নাম ভেসে আসে ‘হাবি’। ধুর, এখন ধরতে ভালো লাগতেছেনা। পনেরো কি বিশ মিনিট মিনিট পরে নীরা নিজেই কলব্যাক করে গাড়িটা পাঠিয়ে দিতে বলবে। কফিটাও তখন খেতে খেতে শেষ হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×