আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। একটানা বজ্রপাতে আকাশটা কাঁদছে।
নরম,মিহি,মেহেদি দেয়া হাতটা আমার হাত এর উপর রাখলে তুমি। পুরো ঘরটা অন্ধকার। মাঝে আলোর ঝলকানিতে এক পলকের জন্য দেখছি তোমাকে। মনে হচ্ছে স্বর্গের অপ্সরী আকাশ কাঁপিয়ে এই মাটির পৃথিবীতে নেমে এসেছে।
আমাদের প্রথম রাত্রি। একটু আগেও তুমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলে। আমি দূরে বসে সান্ত্বনার সব কয়টা ভাষা আয়ত্তের চেষ্টা করছিলাম। আমি কোনদিনও বুঝবো না মেয়ে হয়ে জন্মে নিজের প্রিয় ঘরটা ছেড়ে অন্যের বাড়ি থাকার কষ্ট টা।
হয়ত তোমার কষ্টে আকাশটা এতক্ষণ চেপে রেখেছিলো নিজের কষ্ট টা। কেমন জানি একটা থমথমে ভাব ছিলো তার গায়ে। একদল মাতাল বুনো হাওয়া অবাধ্য হতে চাচ্ছিল। ছুটে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছিল।
হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে পুরো ঘর আলোকিত। চোখের ভাষায় আমি বুঝেছিলাম আমার প্রয়োজনীয়তা। কাছে আসতে না আসতেই প্রকৃতি আয়োজন করে আমাদের এক করে দিলো। বিকট এক বজ্রের শব্দে যখন তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে আমি ঠিক ঠিক শুনতে পাচ্ছিলাম তোমার বুকের ধুকপুকানিটা। মনে হচ্ছিল একটা বুকের মাঝে দুইটা হৃদয়ের বসবাস।
আমি সাহিত্যিক নই। তাদের মত করে বলতেও পারি না,ফুটিয়ে তোলতে পারি না, আঁকতে পারি না একটা বৃষ্টিমুখর রাতের সৌন্দর্য। আমার কাছে সৌন্দর্যের অন্য নাম কোমলতা। তোমার সাথে কাটানো প্রথম রাতেই বুঝে গিয়েছিলাম হৃদস্পন্দনের ধুকপুকানিটাতে তুমি ভাগ বসাবে।
কাল ঈদ। আমাদের ২৫তম ঈদ। বরাবর তুমি বলতে আমি নাকি দিন তারিখ মনে রাখি না। আমি ঠিকই মনে রাখতাম। তোমার সাথে অভিনয়ের ছলে তোমার কপট রাগ দেখে নিতাম। ভালো লাগতো আমার। বলবো না এই জিনিসটা আনন্দ দিতো। একটা অস্বস্তিবোধ কাজ করতো। কিন্তু পাশাপাশি একরাশ মুগ্ধতাও জমা থাকতো।
তুমি ঘুমিয়ে গেছ একটু আগেই। ডায়েরী লেখার অভ্যাসটা আমার অনেক পুরনো। সে নিয়ে এই পঁচিশ বছরের জীবনে কোনদিনও তোমার কোন অভিযোগ দেখি নি। বাতি নিভিয়ে তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যেতে। আমি টেবিল ল্যাম্পের আলো জ্বেলে তোমায় দেখে নিতাম। তোমায় নিয়ে লিখতে যেয়ে আমার কোনদিনও মনে হয় নি আমি শব্দ সংকটে ভুগছি।
তুমি ভাবতে বোকা আমি বোধ হয় কোনদিনও তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে পারবো না। আমি ডায়েরীটা আজ ইচ্ছা করেই আধখোলা রেখেছি। একদিন জানতে চেয়েছিলে কি এত লিখে যাই আমি। বলি নি সেদিন কিছুই। কাল সকালে ঘুম থেকে উঠেই টেবিলের পাশে চিরকুট টা পেয়ে ডায়েরীতে হাত দিবে তুমি। ডায়েরীর পাতাগুলো ছুঁয়ে দেখবে। আমি ঘুমের ভান করে থাকবো। তুমি নোনা জলে ছুঁয়ে যাবে অক্ষর গুলো।
একটা ডায়েরী যেন একটা জীবনের প্রতিচ্ছবি। শেষ পাতায় এসে আমাকে আচ্ছা মত বকে দিবে আমার এই ছেলে মানুষী দেখে। ঠিক পরক্ষণেই তোমার মন ভরে যাবে পরম ভালবাসায়। তুমি ডায়েরীটা ছেড়ে আমায় ছুঁয়ে দিতে চাইবে। আমি....
-ডায়েরীতে যা বলতে পারিনি তা শোনতে চাও??
-আরো কিছু পাগলামি বাকি রেখেছ তুমি??
-ভালবাসি। কোনদিন মুখ ফোটে বলি নি। বলার প্রয়োজন মনে করিনি। কিন্তু একটা আফসোস থেকে যেতো জানো??
-কেন? মুখে ভালবাসি না বললে বুঝবো না বুঝি??
-ঠিক তা না। আমাদের প্রথম রাতে তোমার বুকের ধুকপুকানিটা আমি আজও ভুলতে পারিনি। জানো?
-আমিও পারি নি যে। গল্পটা তুমি বললে তোমার গল্প হিসেবে। কিন্তু আমারও যে একটা গল্প আছে। সে গল্পে তুমি মানে আত্মবিশ্বাস,তুমি মানে ভালবাসা,তুমি মানে আমার অস্তিত্ব। ভালবাসি ওই বুকের শব্দটা। ভালবাসি তোমার রাত জাগার অভ্যেস টা। ভালবাসি তোমার পাগলামিটা। এসব কিছুতেই আমার ভালবাসা,এসব কিছুইতেই তুমি ......
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৬