somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রঙ্গীন ঘুড়ি
উড়তে ভালো লাগে,মেঘের সাথে লুকোচুরি ভাল লাগে। ভাল লাগে এক আকাশ তারা কে সাক্ষী রেখে নাবিকের মত পথ খুঁজে নিতে। চোখ বন্ধ করে একটা নীল সমুদ্র আকঁতে ভাল লাগে। আর ভাল লাগে "তুমি" তে হারিয়ে যেতে ।

"গল্প হলেও সত্যি "

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কয়েকদিন ধরেই পুরোনো সমস্যাটা আবার দেখা দিয়েছে। ছোটবেলায় দুই তিনবার হয়েছিল। আম্মা তখন পাগলা মসজিদের বড় হুজুরের পানি পড়া খাইয়েছিলেন। তারপর আর মনে করতে পারি নি।

এখন আমার বয়স কত হবে?? এই ২১ কি ২২.. আবার ফিরে এসেছে। গতরাতেও হয়েছে। আব্বা ধমক দিলেন। তারপর বুঝালেন এ কিছু না। আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেও ভিতরে ভিতরে ভয় পাচ্ছিলাম। আম্মা বুঝতে পেরেছিলেন হয়ত। বাকিরাত কেটেছে আম্মার কোলে মাথা রেখে।

আজ ও খুব ভয় লাগছে। আম্মাকে বলেছি আমার সাথে থাকতে। বেশ কয়েকদিন আব্বার প্রেশার টা কমে গেছে। আম্মা অভয় দিয়ে বললেন কিছু হবে না। আব্বার সাথে থাকা উচিত এই সময়ে।

ঘড়ির কাটায় একটু পর ১২ টা বাজবে। বড় শহরে এই রাত কিছুই না। কিন্তু ছোট মফস্বলে এই রাত অনেক। ঘরের দক্ষিণ কোণায় চারকোণা দেয়াল ঘড়ি। ঘন্টা লাগানো একটু সেকেলে।

আমি আনমনে শুয়ে গান শুনছিলাম লো ভলিউমে। ঘড়ি কাটায় এখন ঠিক বারটা। ঢঙ ঢঙ ঢঙ.....

একটু আনমনে থাকলেও আমি গুণছিলাম মনে মনে। তিনবার ঢঙ ঢঙ করে বন্ধ হয়ে গেল সাউন্ড। একটু অবাক হলাম। ১২ টা দেখাচ্ছে। এমন তো হয় না কোনদিন। আমি পাত্তা দিলাম না এটা ভেবে যে হয়ত গানের তালে আমি তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি সব।

আম্মা লাইট নিভিয়ে ডিম লাইট জ্বালিয়ে চলে গেলেন। ডিম লাইটের নীলচে আলোয় আলোকিত আমার ঘর। এই পরিবেশ নতুন না আমার জন্য। আমি চাই নি কিন্তু তাও গতরাতের ঘটনাগুলো মনে পড়ে গেল।

আমার ঘরে আমার একটা বড় ছবি টাঙানো ছিল। আব্বা শখ করে ছেলের একটা বড় ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ছবিটা ছিল ডিম লাইটের বিপরীতে। একটু অন্ধকারে.... আমি যেপাশে মাথা দিয়েছি ঠিক তার বিপরীতে।

আমি গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেছি কখন আমার মনে নেই। হঠাৎ আম্মার চিৎকারে ঘুম ভাঙলো আমার। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না এই মূহুর্তে কোথায় আছি আমি। ঘরের নীল আলোর বদলে লাল একটা হালকা আলো। আমার ছবির বদলে একটা ছোট বাচ্চার ছবি দেয়া। ঘরটা পরিচিত....

আম্মার চিৎকার শুনে আমি চলে গেলাম সেদিকে। যেয়ে দেখি একটা ছোট ছেলে বয়স পাঁচ কি ছয় হবে। বাচ্চাটা মারাত্মক রকম ব্যাথা পেয়েছে মাথায়। অনেক ব্লিডিং হচ্ছে। আমি কোনরকমে কাপড় দিয়ে বেঁধে কোলে করে হাসপাতালের পথে বের হলাম। আম্মা পিছন পিছন আসছেন। আমি বারবার না করা সত্বেও তিনি আসছেন।

বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে মাত্র স্ট্রেচার এ উঠানো হল। আর বাঁচানো গেল না। আমি বেশ ভয়ে পেয়ে গেলাম। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে আম্মাকে জিজ্ঞাস করলাম বাচ্চাটা কে?? আর ব্যাথাই বা কিভাবে পেল। আম্মা বললেন উনি নিজেও জানেন না। হঠাৎ একটা অস্ফুট শব্দ শুনে ঘরে এসে দেখেন বাচ্চাটা পড়ে আছে মেঝেতে। কই থেকে আসলো,কিভাবে আসলো কেউ জানে না।

আমি ঘামতে শুরু করলাম। আনমনে এটা সেটা ভাবতে ভাবতে আম্মার সাথে বাড়ি ফিরছিলাম। রাস্তার মাঝখানে এসে পড়েছিলাম কিনা মনে নেই। কিন্তু পিছন থেকে একটা ট্রাক এসে আমার মাথায় আঘাত করলো। ঘটনার আকস্মিকতায় মা আমি দুইজনই চুপ। কি হচ্ছে কেউ যেন বুঝতে পারছি না। মুহুর্তে মা আমার মাথায় হাত চেপে আর্তনাদ শুরু করলেন। আমি স্পষ্ট দেখতে পারছিলাম আমার বয়সী একটা ছেলে আমার মাথা কাপড় দিয়ে বেঁধে আমাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে যাচ্ছে। আমি দেখতে পারছিলাম একটু আগে মারা যাওয়া ছোট ছেলেটার মুখটা। এভাবেই আমি ছুটে ছিলাম। লাল স্ট্রেচারটায় তোলা মাত্রই বাচ্চাটা মারা যায়। আমি যেন আমাকেই দেখতে পাচ্ছি সেখানে। মনে হচ্ছে ওই লাল স্ট্রেচারটাই মৃত্যুদূত। আমি প্রাণপণে বলতে চাচ্ছি আমাকে যেন ওই লাল স্ট্রেচারে উঠানো না হয়।

আমার হাত পা ছোড়াছুড়ি দেখে ছেলেটা আরো বেগে দৌড়ে হাসপাতালে ঢুকলো। পাগলের মত কিছু খুঁজছিল। হয়ত স্ট্রেচার খুঁজছিল। আমার হাত পা ছোড়াছুড়ি আরো বেড়ে গেল। আমি বুঝলাম এবার আমার সত্যিই কিছু করার নেই। পালোয়ানের মত ওয়ার্ড বয়টা অভিশপ্ত লাল স্ট্রেচারটা নিয়ে দৌড়ে আমার দিকে আসছে। আমি শেষবারের মত মা কে দেখে নিলাম। ছেলেটা আমাকে লাল স্ট্রেচারটায় তুলে দিয়ে এক রহস্যের হাসি দিলো। আমি সেদিকেই তাকিয়ে আছি একমনে। তারপর সব অন্ধকার.....

ঘড়ির কাটার ঢঙ ঢঙ শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে গেছে একদম। ঘড়ির কাটায় রাত তিনটা বেজে পাঁচ মিনিট এখন। আম্মাকে এত রাতে ডাকা ঠিক হবে? আব্বার এমনিতেই প্রেশারটা কমে গেছে। না থাক... বাকি রাত শুয়ে বসেই কাটিয়ে দিলাম।

শেষরাতের দিকে চোখ লেগে এসেছিল। আম্মার ডাক শুনে ঘুম ভাঙল যখন তখন ঘড়িতে দশটা বাজে। আম্মা ডেকে বললেন আব্বাকে নিয়ে একটু ডা. কাকার চেম্বারে যেতে। শরীরটা নাকি ভাল লাগছে না। আমি ঘুম ঘুম চোখ নিয়েই আম্মাকে বললাম এখন কাকাকে চেম্বারে পাবো না। কাকা হাসপাতালে এখন।

আম্মা বললেন সেখানেই যেন যাই। আমি উঠে রাতের অদ্ভুত স্বপ্নটার কথা ভাবছিলাম। থাক..এই মূহুর্তে আম্মাকে এইগুলা বলা টা ঠিক হবে না। এমনিতেই আব্বাকে নিয়ে টেনশনে আছেন।

আমি হালকা নাস্তা করে আব্বাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। আমার শুধু রাতের কথা মনে পড়ছিল। এটা কিভাবে সম্ভব?? আমি ভাবতে পারছিলাম না। আব্বাকে কাকার রুমে পাঠিয়ে আমি বসেছিলাম বাইরে। কেন জানি আমার চোখটা আটকে গেল ওই লাল স্ট্রেচারটাতে। এক কোণে পড়ে আছে...
কি জানি আমার অবচেতন মন হয়ত সব সাজিয়ে নিয়েছে নিজের মত করে। কি জানি সবটা শুধুই স্বপ্ন ছিলো। স্বপ্ন এতটা বাস্তব হয় কিভাবে???
আব্বা বেরিয়ে এলেন। আমি আব্বাকে নিয়ে ওষুধ কিনে ফিরছিলাম। হঠাৎ শোরগোল শুনে ফিরে তাকালাম। দেখলাম একটা নিথর দেহ নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে একদল মানুষ।

দূরে স্ট্রেচার টানার শব্দ শোনা যাচ্ছে.......
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×