somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রঙ্গীন ঘুড়ি
উড়তে ভালো লাগে,মেঘের সাথে লুকোচুরি ভাল লাগে। ভাল লাগে এক আকাশ তারা কে সাক্ষী রেখে নাবিকের মত পথ খুঁজে নিতে। চোখ বন্ধ করে একটা নীল সমুদ্র আকঁতে ভাল লাগে। আর ভাল লাগে "তুমি" তে হারিয়ে যেতে ।

"স্বপ্নঘুম কিংবা একটি রহস্য রাত "

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




-একটা রাতের আড্ডা গল্প হলে কেমন হয়??
-আচ্ছা কি নিয়ে আড্ডা দেয়া যায়??

আমরা চার রুমমেট একে অন্যের দিকে বেশ কিছুক্ষণ মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম। সবসময়ের বলির পাঠা আমাকে দিয়েই শুরু। আড্ডার বিষয় দেয়া হলো নিজেদের জীবনের এমন একটি সত্যি বলা যা আর কেউ জানে না।

(শুরু)


"আমার জন্মটা হয়েছিল ময়মনসিংহের একটা ছোট প্রাইভেট হাসপাতালে। জন্মের সময় আমার নি:শ্বাস নাকি বন্ধ ছিলো বেশ অনেকক্ষণ। ডাক্তার ইনকিউবেটরে রেখেও কোন আশার আলো দেখছিলেন না। ব্যাপারটা কাকতালীয় কিনা জানি না। হঠাৎ আমার ছোট বুকটা নাকি কেঁপে উঠেছিল।

গল্পের শুরু এখান থেকেই। আমি কেন জানি আগে থেকেই সব ফিল করতে পারতাম। ধরা যাক, আমি একটা জায়গায় বসে আছি। জায়গাটায় আমি আগে কোনদিনও আসি নি। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হত জায়গাটা আমার অনেক পরিচিত। আমার এই সিক্রেটটা আর কেউ জানে না। আমি হবুহু জায়গাটা কল্পনা করে বলে দিতে পারতাম। সূক্ষ্ণ থেকে সূক্ষ্ণতম জিনিসও বাদ পড়তো না।


একদিন আমি দেখলাম শামীম বসে আছে একটা ঝরণার পাশে। মনে আছে শামীমের কথা?? শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ চারদিকে। মাথার উপর দিয়ে ওর একঝাঁক পাখি উড়ে গেল। আমি অনুভব করতে পারলাম খুব ভয়ঙ্কর কিছু হতে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা ঝুপ করে পানিতে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনলাম কল্পনায়।

তারপরের কাহিনী তো তোমরা জানই... কিছুদিন পর শামীমকে আর কোথাও খোঁজে পাওয়া যায় নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শামীমকে খৈয়া ছড়া ঝরণার কাছে দেখা গিয়েছিল।"

আমার শরীরটা খারাপ লাগছিল কেন জানি। আমি আসর ছেড়ে আমার রুমে চলে আসলাম।

(দুই)


"আমি একজনকে খুন করেছি। এটাই আমার গল্প। এটাই আমার সিক্রেট।"
আকাশ চোখ মুখ শক্ত করে কত সহজে বলে ফেললো কথাটা । উৎপল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আকাশের দিকে। আকাশ বলতে লাগলো।


" আমি জানি না আমার কি হয় মাঝে মাঝে। রক্তের নেশা জাগে মাথার ভিতর। অহনার সাথে আমার সম্পর্কের কথা তো তোরা জানিস ই। আমার প্রিয় মানুষকে নিয়ে কেউ হাসি ঠাট্টা করুক আমি তা একদমই মানতে পারি না। গত বছর শীতে আমি আর অহনা লেকের পাশের রোডটা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম সন্ধ্যার দিকে। পিছন থেকে একটা শিষের আওয়াজ আসলো।
আমি পিছনে ফিরে দেখি দুইটা ছেলে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। বাজে ইঙ্গিত ছিল হাসি তে। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম।

আমি পাত্তা দিলাম না প্রথমবার। দ্বিতীয় বার আবার একই মানুষগুলো শিষ দিচ্ছিল। এবার অহনাকে নিয়ে খুব খারাপ একটা কথা বলেছে। বলেছে "ওই যে দেখ, বেশ্যা যায় কাস্টমার নিয়ে। " আমার মাথায় রক্ত চেপে গেল। ওদের সাথে হাতাহাতির এক পর্যায়ে ওদের হাতে থাকা ছোট পকেট চাকুটা আমার হাতে চলে আসে। দিগ্বিদিক জ্ঞাণ হারিয়ে আমি কখন একজনের বুকের বামপাশে ছুড়ি বসিয়ে দিয়েছি মনে নেই।


তারপর অনেকদিন ফেরারী ছিলাম। সবার সাথে যোগাযোগ অফ ছিলো। আব্বা,আম্মা, আতিয়া। সবার সাথেই কথা বন্ধ ছিলো। গত বছরের শেষের দিকে উনাদের কাছে ফিরে যেয়ে ক্ষমা চাই আমি। "

(তিন)


এবার রাকিন তুই বল। রাকিন খানিকটা চুপ থেকে বলা শুরু করল-

"আমার গল্পটা একটু অন্যরকম। আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি অনেকদিন থেকে। ভালবাসি বলতে কোনদিন মুখ ফোটে বলতে পারি নি। আমি জানি না কবে পারবো। আমি প্রায় প্রতিদিন ওর জন্য দাঁড়িয়ে থাকি ওর কলেজের সামনে শুধু এক নজর দেখার জন্য। "

আকাশ এতক্ষণ চুপ ছিলো। ওর খুব মাথাটা ধরেছে। ও চলে গেল ওর রুমে । রাকিন আর উৎপল তাকিয়ে ছিলো যাওয়ার পথে। কেমন জানি অস্বাভাবিক লাগছে আকাশকে । চোখগুলো লাল হয়ে গেছে।
রাত তিনটা চারটা লাগাত রাকিন আর উৎপলের আড্ডা চললো। লাইট নিভিয়ে যে যার রুমে চলে যাওয়ার আগে একটা ভদ্রতার হাসি দিলো।

(চার)


-আকাশ, কি হয়েছে তোমার??
-তুই আমার বোনকে ভালবাসিস?
-আরে না। আমি তো নিশিতা কে...
-দেখ রাকিন,মিথ্যা বলবি না। আমি মিথ্যা একদম পছন্দ করি না।
-আকাশ তুই থাম।

-না থামবো না। কি ভেবেছিস তুই??
-তোর ভয়ে আমার ছোট বোনটা কলেজ যাওয়া থামিয়ে দিয়েছে।
-মানে??
-মানে কি বুঝ না?? ধোঁয়া তুলসী পাতা??
- আকাশ, থাম তো। বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ,আমি তোর বোনকে ভালবাসি।
-তোর জন্য আমার ছোট বোনটা কলেজে যাওয়া অফ করে দিয়েছে। যেখানে যায় তুই তাকিয়ে থাকিস। পেয়েছিস কি তুই??
- হ্যাঁ,তাকিয়ে থাকি। কি করবি তুই??
- রাকিন,ভাল হবে না কিন্তু।


একটা অস্ফুট শব্দ শুনে উৎপল ছুটে আসলো। রক্তমাখা হাতে আকাশকে দেখে চমকে গেল সে।
-একি করলি তুই আকাশ??
-খবরদার সাউন্ড করবি না উৎপল। একদম কোন সাউন্ড না।
-রাকিনকে মেরে ফেললি?? এটা কেমনে সম্ভব?
-একবার আমার দিকে তাকা উৎপল। চল,আমরা লাশটা কোথাও ফেলে দিয়ে আসি।
-কি বলছিস তুই??আমি পারবো না। আমি সবাইকে বলে দিবো তুই রাকিন কে খুন করেছিস।
-খবরদার। একদম চুপ। জানে মেরে ফেলবো একদম। চুপ।
-আমি শাদকে ডাকতে যাচ্ছি। এখনই। তোকে পুলিশে দেয়া উচিত। এখনই....

(পাঁচ)


আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। আমি কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম এটা শুধুই একটা স্বপ্ন ছিলো। আমি ঘেমে ভিজে গেছি একদম। মাথার কাছে পানি রাখা ছিলো।এখনো আমি নিজেকে শান্ত করতে পারছি না। এটা কি দেখলাম আমি?? এ কি করে সম্ভব??


আমি ড্রয়িং রুমে যেয়ে দেখলাম রাকিন,আকাশ,উৎপল বসে আড্ডা দিচ্ছে।
উৎপলকে একটু কেমন জানি লাগছে । আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম উৎপল বলছে -
এবার রাকিন বল। রাকিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলা শুরু করল-

" আমার গল্পটা একটু অন্যরকম। আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি অনেকদিন থেকে....... "

আমার ভয় লাগছে। সত্যিই খুব ভয় লাগছে....
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৫৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×