somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রঙ্গীন ঘুড়ি
উড়তে ভালো লাগে,মেঘের সাথে লুকোচুরি ভাল লাগে। ভাল লাগে এক আকাশ তারা কে সাক্ষী রেখে নাবিকের মত পথ খুঁজে নিতে। চোখ বন্ধ করে একটা নীল সমুদ্র আকঁতে ভাল লাগে। আর ভাল লাগে "তুমি" তে হারিয়ে যেতে ।

"মেঘবালিকার জন্য ভালবাসা"

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




-----------------------

" মেঘবালিকা,আমায় তুমি নিবে তোমার সাথে?
জলের ফোটায় ভাসব দু'জন গহীন সমুদ্দুরে। "

জানালার গ্লাসে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। আমার হচ্ছে এই এক সমস্যা। মাথায় এ দু'টো লাইন ঘুরঘুর করছে তো করছেই। কিছুতেই বের করতে পারছি না। বাসে করে ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছিলাম।

তখন কেবল দিন কালো হয়ে আসছিল। বাসে উঠা মাত্রই বৃষ্টি। একেবারে ঝুম বৃষ্টি যাকে বলে। জানালার ঝাপসা কাঁচে বৃষ্টি দেখছিলাম। কিছু কিছু জিনিস দেখলে চোখে শান্তি শান্তি ভাব আসে। এই যেমন আজকের বৃষ্টি টা।

ফার্মগেটের মোড়ে আমার মেঘবালিকার সাথে দেখা। ও হুড়মুড় করে আধ ভেজা অবস্থায় বাসে উঠে গেল। বসলো আমার ঠিক পাশের সারিতেই।

ওকে দেখার পর থেকেই কেন জানি মাথায় ওই দুইটা লাইনই বারবার ঘুরছে "মেঘবালিকা,আমায় তুমি.... "

আড়চোখে ওকে দেখে নিয়েছি। চোখে চোখ পড়ে গেলে বিব্রতকর অবস্থা হতে পারে। কি দরকার?? থাকুক না এভাবেই। ওকে কেমন জানি অস্থির অস্থির মনে হচ্ছে। মনে হয় জরুরী কোন কাজ আছে।

আচ্ছা এই বৃষ্টির দিনে কি কাজ থাকতে পারে?? মেয়েটা ছাতা আনতেও ভুলে গেছে। আমার ছাতাটা কি ওর হাতে দিবো?? বাস থেকে নেমে আবার ভিজে যাবে যে। কেন জানি খুব মায়া লাগছিল এই অচেনা অজানা মানুষটার জন্য।

ধূর! এসব কি ভাবছি আমি?চিনি না জানি না এমন একজনকে নিয়ে কি উদ্ভট চিন্তা আমার। আমার মাথাটা নিশ্চয় গেছে। আমি আবার বৃষ্টি দেখায় মন দিলাম। ঝাপসা কাঁচে দেখলাম একটা ছেলে একটা মেয়ে মেইন রোড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে খালি পায়ে। আনমনে কাঁচে ওদের ঘিরে একটা লাভ সাইন একে দিলাম। তার উপর বৃষ্টির ছাঁট এসে পড়ে। ওরা ভিজে যায়,ভিজে যায় আমার আঁকা সেই ভালবাসার বৃত্ত আর ভিজে যাই আমি।

মেঘবালিকা আবার আমার সমস্ত চিন্তায় ভর করে বসলো। আমি যেন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম মেঘবালিকা আমার দিকে তাকিয়ে চোখের উপরের চুলটুকু সরিয়ে জিজ্ঞেস করছে -

-কি মশাই, কি ভাবছেন এত? হুম?

সম্মোহিত আমি মনে মনে কথা বলে যাচ্ছি -

-এইতো কিছু না। আপনি দেখি ভিজে গেছেন।
-ছাতাটা ভুলে ফেলে এসেছি। কি যে করি না আমি !
-আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর !
-কবি সাহেব আবার এত কিছু লক্ষ্য ও করেন দেখি।
-কবিদের তো রোমান্টিক হতে হয়। আমি না হয় আমার রোমান্সের প্রথম পরীক্ষাটা আপনার উপরেই করলাম।
-এ যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি আমার জন্য।
-জানেন, এই মূহুর্তে আপনাকে নিয়ে দু'টো লাইন মাথায় ঘুরছে অনবরত। কিছুতেই বের হচ্ছে না।
-আমাকে নিয়ে? আমি তো এমন কেউ না যাকে নিয়ে কবি কবিতা লিখতে পারে কিংবা ভাবতে পারে ।
-এত কিছু বুঝি না। বৃষ্টি আপনার কেমন লাগে?
-এমনিতে বেশ ভালো। কিন্তু এই যে দেখুন মাঝে মাঝে কাজের সময় হুটহাট ভিজিয়ে দেয় ! ওই দু'টো লাইন শুনাবেন বলেছিলেন। কই শুনি !

- " মেঘবালিকা, আমায় তুমি নিবে তোমার সাথে?
জলের ফোঁটায় ভাসবো দু'জন গহীন সমুদ্দুরে! "

-হা হা হা ।
-হাসলেন যে !
-এই ফার্মগেটের ব্যস্ত,ময়লা রাস্তায় আপনি সমুদ্দুর খোঁজে নিলেন !
-হা হা হা। ভাবতে দোষ কোথায়?? তা আপনি যাবেন কোথায়?
-যাবো আঁগারগাও।আমার বাসাটা সেখানেই। ছোট একটা ফ্ল্যাট বাড়ি। একটা ছোট বারান্দা ।
-আর কেউ থাকে না?
-থাকে। আমি আর আয়ান। ও আচ্ছা আয়ানের কথা বলতে ভুলেই গেছি। আয়ান আমার ছেলে। এখনো স্কুলে ভর্তি হয় নি সামনের বছর ভর্তি করাবো। যা দুষ্টু হয়েছে। ছোট বাসায় আমাকে সারাদিন দৌড়ানো লাগে ওর পিছনে।
-কিছু মনে করবেন না। আপনি আর আয়ান? আয়ানের আব্বু?
-ও আসলে কিছু দিন আগেই......

চোখের ভাষায় আমি যেন বুঝে নিলাম বাকিটুকু। বুঝতে বাকি থাকলো না পৃথিবী কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে।

বাসের হেলপারের কর্কষ ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়লো আমার। ঘোর কাটতেই পাশে তাকিয়ে দেখি পাশের সারির ওই সিটটায় অন্য এক ভদ্রলোক বসে আছেন। মেঘবালিকা নেমে গেছে হয়ত।

মেঘবালিকার জন্য কেন জানি আমার খুব বেশি খারাপ লাগছিল। তখনো ঝুম বৃষ্টি পড়ছিল। আমার চোখের কোণায় ও কিছু অযাচিত দু:খ মেঘের জলের মত জমা হচ্ছিল। হাতের উল্টোপিঠটা দিয়ে এমন ভাবে একটু মুছে নিলাম যেন কেউ বুঝতে না পারে।

কি জানি ! মেঘবালিকা হয়ত এতক্ষণে ভিজে একাকার হয়ে আঁগারগাও কিংবা ঢাকার যেকোন প্রান্তে চারকোণা ছোট্ট ফ্ল্যাটটায় গিয়ে পোঁছেছে। তাকে দেখা মাত্রই ছোট্ট আয়ান বাবুটা হয়ত ছুটে এসে জড়িয়ে ধরেছে। মেঘবালিকার চোখে মুখে সারাদিনের ক্লান্তির ছাপ হয়ত মুছে গেছে।

ভাবতে ভালই লাগছে দু'টো হাসি মুখকে। পরের স্টপেজে আমাকে নামতে হবে। জানালার কাঁচটায় ফোঁটা ফোঁটা মেঘের জল জমে আছে এখনো। আমি হাতের তর্জনী দিয়ে বড় করে একটা ভালবাসার বৃত্ত এঁকে দিলাম ।

তার ঠিক মাঝখানটায় লিখে দিলাম "মেঘবালিকার জন্য" ।

ভালো থাকুক আমার মেঘবালিকা শহরের কোন একপ্রান্তে। ভালো থাকুক বৃত্ত আঁকা আমার কাল্পনিক ভালবাসা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৪১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×