somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রঙ্গীন ঘুড়ি
উড়তে ভালো লাগে,মেঘের সাথে লুকোচুরি ভাল লাগে। ভাল লাগে এক আকাশ তারা কে সাক্ষী রেখে নাবিকের মত পথ খুঁজে নিতে। চোখ বন্ধ করে একটা নীল সমুদ্র আকঁতে ভাল লাগে। আর ভাল লাগে "তুমি" তে হারিয়ে যেতে ।

"আগন্তুক কিংবা লাল পার্সেলের গল্প"

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আজ নীরার মন খারাপ।

অন্ধকারে বসে আছে সে । অনেকদিন পর কেন জানি লোড শেডিং টা তার অনেক ভাল লাগছে। আগে ছোটবেলায় নাখালপাড়া থাকার সময় প্রায় রাতেই লোড শেডিং এ ছাদে বাসার পিচ্চিগুলোকে নিয়ে গানের আসর বসতো। তখন শহুরে যান্ত্রিকতার কেবল সূচনাপর্ব। এতটা জটিল ছিল না সবকিছু।

অভি আজও দেরি করে ফিরবে। আজকাল অভি কেন জানি রাত করে ফেরে। আগে এত লেইট হতো না। ইদানিং বেশি হচ্ছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে ভাঙা রেডিও এর মত এক স্বরে বর্ণনা দিয়ে যায় অফিসের কি সব কাজের !

এই চার দেয়ালের বন্দী ঘর নীরার মোটেই ভাল লাগে না। সে একটু শান্তি চায়। কিছু মূহুর্ত চায় প্রিয় মানুষের। বাস্তবতা মানুষকে কতটা বদলে দেয় !

এই তো দেড় বছর আগের অভি আর আজকের অভির মধ্যে কতটা ফারাক! একদিন দেখা না করলে তার সে কি অভিমান। একদিন এর অভিমান, ফলাফল দুইদিন কথা বন্ধ,ফোন বন্ধ। এত বুঝিয়েও নীরা বুঝাতে পারতো না অভিকে যে সে একটা মেয়ে। তাকে অনেক কিছু মেইনটেইন করতে হয়।

লোড শেডিং থাকায় দরজায় আচমকা টোকা পড়লো। ভাবনায় ছেদ পড়লো নীরার। "এই সময়ে তো ওর আসার কথা না। তবে কে?"

একটু ভয় পেয়ে গেল সে। দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছে অন্যপাশে কে হতে পারে !

পাশের বাসার ভাবীর পিচ্চি মেয়েটা না তো? নাহ.. ও তো একটা টোকা দিয়ে থেমে যাওয়ার মত পিচ্চি না।তবে কে?

নীরার ভয় লাগছে। একে তো ফ্ল্যাটে সে একা। কারেন্ট নাই। দুইদিন আগেও পেপারে সে পড়েছে বনানীর একটা ফ্ল্যাটে ছদ্মবেশে মানুষ ঢুকে দিনে দুপুরে ডাকাতি করে পালিয়ে গেছে।

আবার টোকা পড়লো দরজায়। এবার নীরা সাহস করে জিজ্ঞাস করলো

-কে??

ওপাশ থেকে কোন উত্তর এলো না। ভয়টা আরো গভীর হলো। অভিকে ফোন দেয়া উচিত।

আবারও দরজায় টোকা।

-কে?? অভি??
-না। আপু একটু দরকার ছিল। দরজাটা খুলুন।

এবার আর বুঝতে বাকি নেই যে এটা অভি না অন্য কেউ। এতদিনের পরিচিত কণ্ঠস্বর! অন্ধকারে পাগলের মত নীরা ফোনটা খুঁজে যাচ্ছে। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।

দরজায় ক্রমাগত টোকা পড়ছে। এবার ভয় টা অনেক বেশি চেপে বসলো!

-একটু দরকার ছিলো। একটা পার্সেল ছিলো। প্লিজ দরজাটা খুলুন।
নীরার মনে হচ্ছে লোকটা মিথ্যে বলছে। তাকে ফাঁদে ফালানোর চেষ্টা করছে।

-না আমি খুলবো না। আপনি কে বলুন আগে।
-আমি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে এসেছি। আপনার নামে একটা পার্সেল ছিলো।
-আপনি মিথ্যা বলছেন।

দরজার ওপাশ থেকে নীরা ক্রমাগত বলে যাচ্ছে।

-আচ্ছা, এটা ১৮/১৩২ বি, নাখালপাড়া না?
-জ্বী
-আপনি মিসেস নীরা চৌধুরী?? আপনার স্বামী অভি চৌধুরী??
-জ্বী।
-আচ্ছা দরজা খুলতে হবে না। আমি পার্সেলটা আপনার দরজার সামনে রেখে দিয়ে যাচ্ছি। আপনি দরজা খুলে নিয়ে নিবেন। কেমন? আমি যাচ্ছি।

নীরা চুপ করে আছে।

এভাবে প্রায় আরো পনের মিনিট চলে গেল। কারেন্ট চলে এসেছে। ঘড়িতে রাত সাড়ে আটটা বাজে। নীরা আস্তে করে দরজা খুলে দেখলো দরজার সামনে সত্যি সত্যি একটা পার্সেল পড়ে আছে।

লাল রঙের র‍্যাপার দিয়ে মোড়া ! উপরে বড় বড় করে নীরার নাম,অভির নাম, নীরাদের বাসার ঠিকানা দেয়া । প্রেরকের জায়গায় শুধু লিখা জামসেদ, ঢাকা !

ঢাকা থেকে ঢাকাতেই পার্সেল আসলো ! নীরা একটু অবাক হল। পার্সেলটা খোলার জন্য মন আকুপাকু করছে তার। একবার মনে হচ্ছে অভি আসলে একসাথে বসে দুইজন খুলবে পার্সেলটা। আবার এতক্ষণ অপেক্ষা করতেও মন চাচ্ছে না তার।

সাত পাঁচ ভেবে অবশেষে নীরা খুলেই ফেললো পার্সেলটা। এত বড় পার্সেলের ভিতরে একটা ছোট চিরকুট শুধু আর কার্টুন ভর্তি শুকনো পেপার দলা করে ঢুকানো।

চিরকুটে লেখা -

" ছাদের দক্ষিণ প্রান্তে একটা কাঠের বক্স "

নীরা বুঝে পাচ্ছে না কি হচ্ছে তার সাথে। ফোনটা খুঁজে বের করে অভিকে কল দিচ্ছে সে। অভি বারবার কল কেটে দিয়ে টেক্সট পাঠাচ্ছে - "I am busy.Will call you after meeting".

নীরার একাএকা ছাদে যেতে ভয় লাগছে। পাশের বাসার পিচ্চি দু'টো কে কি নিয়ে যাবে সে? থাক। যদি কোন বিপদ হয়।

নীরা আর অপেক্ষা করতে পারছে না। সাহস করেই ছাদে উঠে আসলো ! ঠিক দক্ষিণ কোণায় কি জানি একটা জিনিস সত্যিই দেখা যাচ্ছে ! বক্স নয় তো?? আরো কাছে যেয়ে দেখতে পেল সত্যিই একটা ছোট বক্স। নীরার রাশেদের কথা মনে পড়ে গেল কেন জানি হঠাৎ। আচ্ছা সব রাশেদের কাজ নয় তো !

ভার্সিটি তে রাশেদ নামের একটা ছেলে ওর জন্য পাগল ছিল। নানা রকম উদ্ভট সব পাগলামি করতো ! ঠিকানা পেল কই সে?

বক্সটা খুলে আবার একটা চিরকুট পেল সে ! অন্ধকারে পড়া যাচ্ছে না চিরকুট টা। একটু আলোর নিচে এসে নীরা দেখলো সেখানে লিখা-

"জানালার কাছে,বিছানার পাশে "
শুধু এটুকুই।

নীরার আর বুঝতে বাকি রইলো না কিছুই। তাড়াতাড়ি নিচে এসে বেডরুম জানালার পাশে ডেক্সে একটা খাম পেল সে । খামের ভিতর আগামীকালের দু'টো কক্সবাজার যাওয়ার টিকেট !!

রাত সাড়ে দশটা ঘড়িতে। দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ। নীরা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। অভিকে আজ ইচ্ছামত বকা দিবে এতটা ভয় দেখানোর জন্য। কিন্তু অভি অন্যদিনের মত খেয়াল ই করছে না নীরা কে ঠিকমত।
খাবার দিতে দিতে নীরা জিজ্ঞাস করলো -
-আচ্ছা মানুষকে ভয় দেখানো কি ঠিক?
-না তো। কেন?
-কিছু না। কাল অফিস ছুটি আগে বলনি কেন?
-কই কাল অফিস ছুটি? কাল আরো বেশি রাত হতে পারে ফিরতে। নতুন ক্লায়েন্টের সাথে জরুরী মিটিং আছে !
-ওহ তাই না??
-হুম। কি হয়েছে বলতো??
নীরা হাসি মুখে বলে -
-তা মিস্টার, এতই যখন জরুরী মিটিং তো কক্সবাজার যাওয়ার কি দরকার??
-কি বলছ এসব? কিসের কক্সবাজার, কিসের কি? বলেছি তো নেক্সট উইন্টার ভ্যাকেশনে তোমাকে নিয়ে যাব।আর বকবক করো না তো ! খুব মাথা ধরেছে। খেয়ে ঘুমিয়ে যাব ।
নীরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না সব জেনেও ও কেন এমন করছে?
রাত ১ টা। নীরা দাঁড়িয়ে আছে জানালার গ্রিল ধরে। অভি ঘুমিয়ে পড়েছে একটু আগেই। ছেলেটা কেন এমন করছে এই চিন্তায় তার ঘুমই আসছে না।
রুম থেকে চিরকুট দু'টো আবার নিয়ে আসলো সে। জানালার পাশে দু'টা টিকেট কিভাবে আসলো ! সে ছাড়া আর কেউ তো বাসায় ছিল না !!
তবে কি এ পার্সেল অন্যকেউ পাঠিয়েছে? কে এই জামসেদ?এই জামসেদই সেই ভার্সিটির রাশেদ ছেলেটা নয় তো???
রাত বাড়ছে.....
অনেক ভয়ের এক রাত,অনেক কৌতুহলের এক রাত,অনেক অজানা উত্তর খোঁজে ফেরার এক রাত।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×