somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ আমার বিয়ে

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

#রওনক_হাসান_নূর


আমি যখন প্রথম বার দেশে গিয়েছি বিয়ে করার জন্য, কত মেয়ে যে দেখতে হয়েছে আমাকে তার কোন হিসেব নেই। সকাল বেলায় ঘটক এসে আমাকে ঘুম থেকে উঠায় । হাতে কয়েক টা ছবি নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে থাকে। সাথে থাকে পাত্রির বায়োডাটা। কত সুন্দর ভাবে ছবি গুলা এডিট করে নিয়ে এসেছে ঘটক। আমি দেখি আর হাসি।

তার পর ঘটক বলছে , মামা ছবি দেখা আর বাস্তবে দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। আমার বিশ্বাস আপনি এদের যে কাউকে দেখলেই যেকোন একজনকে পছন্দ হবেই। এতো সুন্দর করে ঘটক মেয়ের বর্ণনা দিচ্ছে, একটা প্রেমিকও তার মনের মানুষ সম্পর্কে গুছিয়ে এতো সুন্দর করে বলতে পারবে না। উনার কথা শুনি আর আমি মনে মনে হাসি। বুঝতে বাকি ছিলো না, উনি যে চাপাবাজি করছেন। কিন্তু আম্মা খুব মনোযোগ দিয়ে উনার কথা শুনছে।তার পর ঘটক বললেন আপনারা কখন যাবেন সময় ঠিক করে আমাকে জানাবেন। এই বলে ঘটক চলে গেলেন। তার পর আম্মা আমাকে বলে কখন যাবি টাইম টা বলে দিতি উনাকে। আমি বললাম আম্মা এই সব ঘটক দিয়ে মেয়ে দেখবো না। আর যদি যেতে চাও তোমরা যাও আমি যাবো না। আম্মা একটু রাগান্বিত হয়ে আচ্ছা ঠিক আছে বলে উঠে গেলেন। আম্মার রাগ দেখে আমিও যাওয়ার জন্য সম্মতি দিলাম।

পরের দিন সকালে মেয়ে দেখতে যাবো, ঘটক এসে বসে আছে... রেডি হয়ে বের হলাম কয়েক গ্রাম পরে মেয়েদের গ্রাম। যেতে যেতে ঘটকের চাপাবাজি চলছে, আমরা পাত্রির বাড়ীতে চলে এসেছি , আমাদের কে নাস্তা দেওয়া হলো, একটু পর পর পর্দার আড়ালে উকি দিয়ে আমাকে দেখার চেষ্টা করছে কেউ কেউ। আমার কেমন যেন লাগছিল তখন। আসলে কখনো এভাবে মেয়ে দেখা হয়নি। একটা মেয়ে কে আমার সামনে আনা হবে, আমি দেখবো । বিষয় টা কেমন কেমন যেন লাগছে। আবার সবার সামনে মেয়েটার সাথে আমার কথা বলতে হবে, লজ্জা পাচ্ছিলাম , এতো গুলা মানুষের সামনে বসে প্রশ্ন করবো ! কি নাম তোমার ? কিসে পড়ো ? আরো কতকি !

হুট করে ঘোমটা পরা একটি পিচ্ছি মেয়েকে আমার সামনের সোফায় এনে বসানো হলো। আমি থ খেয়ে আছি ! কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না ! এই মেয়েকে আমি বিয়ে করবো? এই মেয়ের বয়স তো ১৪-১৫ এর বেশী হবে না ! ঘটক হেঁসে হেঁসে বলছে, ঠিক মত খায় না তো... তাই এমন শুকনা , বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে মামা ! মনে মনে ঘটককে গালি দিচ্ছি আমি। কত সুন্দর করে বানিয়ে কত কথা বলেছে। কিন্তু কিছুই মিল নেই । এভাবে অনেক মেয়ে দেখেছে সবাই মিলে,
আমার জন্য প্রায় ৪৭ টা মেয়ে দেখা হইছে। ছয় মাসের ছুটিতে গিয়েছিলাম, বিয়ে হয়তো করা হবে না আমার, ছুটি শেষ হলে চলে যেতে হবে। এভাবে মেয়ে দেখতে দেখতে প্রায় তিন মাস গত হলো,কিন্তু মেয়ে কারো পছন্দ হয় না। সবাই মেয়ে দেখে , কাকাদের এক রকম চাহিদা , কাকিদের একরকম , বড় মামার একরকম , ছোট মামার এক রকম.. আম্মার আরেক রকম , এই ভাবে মেয়ে দেখতে দেখতে তিন মাস গত হলো কিন্তু পাত্রি মিলছে না। কাকা বলে এলাকায় বিয়ে করানো যাবে না, ছোট কাকা বলে ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ভাল হওয়া চাই , নানু বলে মেয়ে নামাজী কালামি হতে হবে, কোরআন পড়তে পারে কিনা দেখতে হবে। কাজিন রা বলে ভাইয়ের বউ গ্রাম বাছা হতে হবে। আমাদের প্রথম ভাবী , আম্মা বলে ছোট সংসার দেখে বিয়ে করাবো। মামিরা বলে মেয়ে শিক্ষিত উচা লম্বা হতে হবে। আমাদের সমাজে এই সমস্যা টা একটু বেশী , বিয়ে করবে একজন কিন্তু পাত্রপাত্রী দেখবে দশজন। অন্য দিকে দূরসম্পর্কের এক আন্টি মনে মনে মন কলা খেয়ে বসে আছেন উনার মেয়েকে আমার কাছে বিয়ে দেবে।

আরেক আন্টি তার মেয়েকে বিয়ে দিতে চায়। মেয়ে ক্লাস টেনে পড়ে। একদিন সেই আন্টি এক অবাক কান্ড করে বসলো। চট্রগ্রাম থাকে। আমি অন্য একটা মেয়ে দেখতে চট্রগ্রাম আসি। উঠেছি এক খালার বাসায়। , এখনো মেয়ে দেখতে যাইনি , আমি চট্রগ্রাম আসার খবর শুনে আন্টি খালার বাসায় চলে আসে , আসার সময় অনেক কিছু নিয়ে এসেছে। আমরা তো দেখে অবাক , আধুনিক আন্টি , মেয়ে এবং মা দুজন একসাথে দাঁড়ালে মনে হবে দুজন বোন। মেয়েটার বয়স ১৪-১৫ই হবে তবে অনেক সুন্দরী এবং খুব মিষ্টি করে হাসে। আমার দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে। বুঝা যাচ্ছে মেয়েটার বয়স থেকেও মেয়েটা আরো ৪ বছরের ছোট। বয়সের ছোট থেকে স্বভাব তাকে আরো একটু ছোট বানিয়ে রেখেছে। খালা এসে তাদের হাতের বেগ গুলা নিচ্ছেন, আর বলছেন , কিরে ফারহানা কত বার আমাদের বাসায় আসলি, এতো কিছু তো কখনো আনতে দেখিনি। আর ভাগ্নার জন্য দেখি পুরাই জামাই আদর। , উনি হেসে হেসে বলে , আমাদের একমাত্র ভাগ্না বলে কথা ! কত বছর পর আসছে ছেলেটা ,ওর জন্য আনবো না তো কার জন্য আনবো ?

খালা বলে বুঝি ফারহানা সবই আমরা বুঝি , আমি ড্রয়িং রুমে বসা। উনাদের কথা শুনে একটু লজ্জা পাচ্ছিলাম। আমার পাশের সোফায় এসে এক লাপে বসে পড়ে আন্টির সেই সুন্দরী মেয়ে "রুহি" ।মেয়েটার এই ভাবে ঝাপ করে এসে পাশে বসাতে আমি একটু ইতস্ত বোধ করছিলাম। রুহি একগাল হাসি দিয়ে বলে ভাইয়া কেমন আছেন ? আমি বললাম ভাল ! তুমি কেমন আছো এইতো ভাল। মেয়েটা কথা বলার আগেই হাসে, হাসার সময় মেয়েটার চোখ গুলো ছোট হয়ে যায়। এখনো ছেলে মানুষ ! তার পরে মেয়েটা যাহা বলল আমি সেকথা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না! মেয়েটা বলে, ভাইয়া তুমি কি জানো তোমার সাথে আমার বিয়া! এই কথা বলে আবার এক গাল হাসি! হাসি থামিয়ে আবার বলে , ভাই তুমি আমারে বিয়া করবা ? আবার হেসে উঠে। আমি তো থ খেয়ে বসে আছি হাসমু না কাদমু বুঝতেছি না! যাক তার পর মেয়ে টা রুম থেকে চলে যায় , আমার সেই আধুনিক খালা রুমে প্রবেশ করেই বলে কি বাবা একা বসে আছো কেন ? আসো তোমার সাথে গল্প করি ! কি খবর তোমার ? কত দিনের ছুটি আসছো ? এই তো আন্টি ছয় মাস , শুনলাম বিয়ে সাদি করবা মেয়ে দেখছো? জি আন্টি সবাই দেখতেছে , আচ্ছা শুনো আন্টি দের বাসায় আগামিকাল তোমার দাওয়াত আসবে কিন্তু ! না আসলে সত্যি অনেক রাগ করবো। যে মেয়েটা দেখতে যাওয়ার কথা ছিল সে দিন আর যাওয়া হয়নি।

পরের দিন তাদের বাসায় যাই , বাসায় ডুকেই বুঝতে বাকি ছিলো না নতুন মেহেমান আসবে, খুব সুন্দর করে বাসা গোছানো হয়েছে । যাক এসে বসলাম একটু পর খাওয়া দাওয়া করলাম , শাশুড়ি যেমন জামাইকে খাওয়ায় , ঠিক তেমনি জামাই আদর করে আমাকে খাওয়ানো হচ্ছে। একটু পর আন্টি বলছে বাবা আরেকটু নাও ! রান্না কেমন হইছে ? আমি তো আর তোমার মায়ের মত এতো ভাল রাঁধতে পারি না। আরে নাহ আন্টি খুব ভাল হইছে। , খাওয়া দাওয়ার পর সোফায় বসে রেস্ট নিচ্ছিলাম , রুহি হুট করে এসে কানে কানে বলে , ভাই আমি কিন্তু শুধু কাপড়চোপড় ধুতে জানি। রান্না বান্না কিন্তু পারি না । আমি মেয়েটার পাগলামি দেখে সত্যি না হেসে পারিনি সেদিন।

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙতেই মোবাইলে একটা ছবি আসে, সাথে একটা টেক্সট আমি ঘুম ভাঙ্গা চোখে সেই ছবিটা দেখে দৃষ্টি সরাতে পারছিলাম না। মনে মনে শুধু এটাই ভেবে ছিলাম , একটা মানুষ এতো সুন্দর হয় কেমন করে! অনেকক্ষণ ছবি টা দেখছি , আমার সেই সকালের ঘুম ভাঙ্গা চোখে , ছবি টা আমার মনে ধরে যায়। সহজ সরল চোখের চাউনি থেকে সত্যি আমি তখন দৃষ্টি সরাতে পারিনি। মনে হচ্ছে এতোদিন ধরে আমার কল্পনার মধ্যে ভেসে বেড়ানো সেই অদৃশ্য মানবী আজ ধরা দিয়েছে।

ছবিটার নীচে একটা ছোট লিখা ছিল , ভাইয়া আপনি বাড়ী চলে আসেন আপনার জন্য মেয়ে ঠিক করে ফেলেছি। সেই সকালে বাড়ী চলে আসি পরের দিন মেয়েটাকে দেখতে যাই। কথাবার্তা মোটা মুটি বলা হয়েগেছে, আমি দেখতে গেলেই আংটি পরাবো এবং দু দিন পর বিয়ে... বিয়ের আগের এই দুইটি দিন আমার জীবনের দীর্ঘতম রাত ছিল।

সৃষ্টি কর্তার হিসেবে কোন ভুল নাই, তিনি আমাদের মনের মত মানুষ টাকেই আমাদের জন্য লিখে রেখেছেন। অযথা ভুল মানুষ গুলার পিছনে ছুটে শুধু নিজের কষ্ট ই বাড়ে। অপেক্ষা করলে সময় ঠিকই একদিন আপনার কল্পনার মানুষটির কাছে আপনাকে নিয়ে যাবে।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৪০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×