হরতাল প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার কিংবা প্রতিবাদের ভাষা। কিন্তু সে প্রতিবাদ যদি মানুষের মঙ্গলের জন্য না হয়ে অধিকার খর্বের হয় কিংবা ভোগান্তির কারন হয়, সেক্ষেত্রে এটাকে কতটুকু গণতান্ত্রিক বলা চলে প্রশ্নসাপেক্ষ। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে যে কোন বিবেকবান নাগরিকেরই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কথা, এমনকি সরকারপন্থী লোকরাও । কারন হিসেবে, দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় উর্ধগতি, বিরক্তিকর লোড শেডিং, আইন শৃংখলার অবনতি বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের অন্তর্ধান।
সর্বশেষ গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার দাবীতে প্রথম দফায় তিন দিন পরবর্তীতে দুই দিন হরতাল পালন করলো বিরোধী দল। কিন্তু ইলিয়াস আলীকে পাওয়াতো গেলই না বরং হরতালকে কেন্দ্র করে মানুষের জান মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে, বিশেষ করে হরতালিয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গাড়ি পোড়ানো, গরীব ড্রাইভারকে পুড়িয়ে মারা এবং সাধারণ মানূষের অবর্ণনীয় ভোগান্তি লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে সরকার প্রকৃত সমস্যার সমাধানে আন্তরিক না হয়ে, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্ব জ্ঞানহীন বক্তব্য ও আচরনের মধ্য দিয়ে সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, ইলিয়াস আলীকে যদি সরকারের কোন সংস্থা অথবা বিএনপি লুকিয়ে রাখে সরকারে উচিত তাকে খুজে বের করে প্রকৃত সত্যকে জনগণের সামনে পরিস্কার করা। কারন, একজন নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের বা রাষ্ট্রের, তাই সরকারের এজেন্সি গুলোকেই নিশ্চিত করতে হবে ইলিয়াস আলী কোথায়? আমি বলবো এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সরকার সম্পূর্ন ব্যর্থ। বরং বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের উপর অত্যাচার, নিপিড়ন, মামলা এবং গ্রেফতারের মাধ্যমে পরিস্থিতি আরো জটিল ও বিরোধী দলের আন্দোলনকে আরো উস্কে দেয়া হয়েছে যা দেশের জন্য বা দেশের মানুষের জন্য অনেক বেশী ভোগান্তির হতে পারে।
একদিনের হরতালে দেশের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে আর দেশের নাগরিকদের যে ভোগান্তি হচ্ছে তার হিসেব অর্থে দেয়া সম্ভব নয়। আন্দোলন প্রতিটি নাগরিক বা রাজনৈতিক দল তার অধিকার আদায়ের জন্য করতে পারে। কিন্তু, সে আন্দোলনের ভাষা যদি মানুষকে কষ্ট দেয়, তাহলে এই আন্দোলন কার জন্য? একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ইলিয়াস আলীর মত লোক গুম হওয়া যেমন আমাদের কাম্য নয়, তেমনি একজন ইলিয়াস আলীর জন্য পনের কোটি মানুষকে কষ্ট দেয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
আসুন, আমরা এই হরতালের বিকল্প খুঁজি। মানুষ আর হরতাল চায় না, মানুষ আন্দোলনের অন্য ভাষা চায় যা হতে পারে স্মারক লিপি পেশ, গণঅনশন, গণস্বাক্ষরতা, অবস্থান ধর্মঘট, রোডমার্চ ইত্যাদি যা উন্নত বিশ্বে প্রচলিত। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার যদি আন্তরিক হয় তবে দেশের মানুষ এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। বর্তমান সংসদে সরকারের দুই তৃতীয়াংশ সদস্য সংখ্যা রয়েছে ফলে সরকার যদি ইচ্ছে করে তাহলে একটি হরতাল বিরোধী আইন পাশের মাধ্যমে এদেশের পনের কোটি মানুষকে হরতালের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে। আমরা এ সরকারের আমলে অনেক গণবিরোধী আইন পাশ করতে দেখেছি, এবার হরতাল বিরোধী আইন পাশ করুন। দেশের মানুষ আপনাদের বাহবা দিবে। অবশ্য আমরা এ ও জানি, আজকে আওয়ামী লীগ হরতালের বিরুদ্ধে সোচ্চার, হরতালে মানুষের জান-মালের ক্ষতি এড়াতে পুলিশ বাহিনীর সাথে তাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ বাহিনীকে মাঠে নামিয়ে হরতাল কারীদের জান-মালের ক্ষতি করছে। অথচ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এ আওয়ামী লীগই হরতালের রাজনীতিতে চ্যাম্পিয়ন।
তার পরও আমাদের আশা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন, হরতাল বিরোধী একটি আইন পাশের মাধ্যমে এদেশের মানুষকে হরতালের যন্ত্রনা ও ভোগান্তির হাত থেকে রেহাই দিন। হতে পারে এই একটি আইনই আপনাকে পৌছে দেবে আপনার পরবর্তী লক্ষ্যে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১২ বিকাল ৩:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




