টেড হিউজ (১৯৩০—১৯৯৮) এর কবিতা
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি#
ইংরেজি ভাষার অন্যতম কবি টেড হিউজ ১৭ই আগস্ট ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম এডওয়ার্ড জেমস টেড হিউজ। তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার ও শিশুতোষ লেখক ছিলেন। সমালোচকদের অভিমত, তিনি তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা কবি ছিলেন ও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা লেখক ছিলেন তিনি। মৃত্যুর পূর্ব-পর্যন্ত পয়েট লরেটের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হচ্ছে—
দি হাওক ইন দ্য রেইন (১৯৫৭)
ক্রো (১৯৭০)
রিমেইনস অব এলমেট(১৯৭৯)
মুরটাউন ডাইরী (১৯৭৯)
উল্ফওয়াচিং(১৯৮৯)
রেইন-চার্ম ফ দ্য ডাচী (১৯৯২)
টেইলস ফ্রম অভিদ (১৯৯৭)
বার্থডে লেটার্স (১৯৯৮), ইত্যাদি।
তিনি ব্যক্তি জীবনে ১৯৫৬ সালে আমেরিকান কবি সিলভিয়া প্লাথ-কে বিয়ে করেন। কিন্তু প্লাথ ১৯৬৩ সালে আত্মহত্যা করেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে ক্যারল অর্চার্ড কে বিয়ে করেন। মাঝে ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত আসিয়া ওয়েভিল-এর সাথে লিভ-টুগেদারে ছিলেন। তাঁর তিন ছেলে মেয়ে। ২৮ শে অক্টোবর ১৯৯৮ সালে এই কবির মৃত্যু হয়।
তাঁর মুরটাউন ডাইরী (১৯৭৯) কাব্যগ্রন্থ থেকে তিনটি কবিতা বাংলায় ভাষান্তর করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
“মুরটাউন ডাইরী” থেকে টেড হিউজের তিনটি কবিতা
ভাষান্তর : ঋতো আহমেদ
১৯৭০ সালে হিউজ ও তাঁর স্ত্রী ক্যারল ইংল্যান্ডের ডেভনে একটি ফার্ম কেনেন। তারপর শশুরের সাথে পার্টনারশিপে ফার্মটি চালিয়েছিলেন তিনি। বইটিও উৎসর্গ করেন শশুর জ্যাক অর্চার্ড-এর নামে। সেই সময়ে লিখিত কবিতাগুলো এই বইয়ে স্থান পেয়েছে।
মুরটাউন ডাইরী আসলে দৃষ্টি খোলে ভাষার আড়ালে লুকিয়ে থাকা সেই সব প্রাণীদের দিকে। এখানে হিউজ কবিতাগুলো এমনভাবে লিখেছেন যেন কাঁচি চালিয়ে সমস্ত বাহুল্য ছেঁটে ফেলেছেন—পড়তে গেলেই মনে হয় এক পিন-পতন নৈঃশব্দ্যের গহীন থেকে উঠে আসছে একেকটি শব্দ। বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একেবারে আলাদা এক জগৎ। কবিতাগুলোয় এক ধরনের গতি, ঔজ্জ্বল্য, ত্বরা এবং বাচনীয়তা লক্ষ্যনীয়।
আসুন পড়ি—
অসহায় পাখিরা
কাদার নোংরা ঝোপ। ওদের খুলির
ভেতর নীল আবছা আঁধার চেপে ধরে
নক্ষত্রের বিদ্যুৎবাহী তার। সারা রাত
পাশের আধ-ভেজা ডালে, ডালপালার মতোই বিস্তৃত সব নখ,
ওরা স্বপ্ন দ্যাখে, স্বর্গে পালকহীন হয়ে গেছে,
আর দ্যাখে বুভুক্ষু সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। সন্ত্রস্ত হয়, নিচে,
উড়ে যায় মাঠের দিকে। সারাদিন
ঘুমাতে চেষ্টা করে ভালো
চোখের আড়াল করতে চায় না ঘাস। আতঙ্ক
পাহাড় থেকে পাহাড়ে তাড়িয়ে বেড়ায় ওদের। নিরাপত্তা খুঁজে ফেরে ওরা
সবখানে, যেন তা লুকিয়ে আছে
সমস্ত পাথরের আবদ্ধ সব
মুখে।
(১০ ডিসেম্বর ১৯৭৩)
বরফের ধোঁয়া, যেন ফুটছে মাঠপ্রান্তর
বাছুর কাঁদছে।
চাড়ি ঘনীভূত হচ্ছে।
মুরগী ভুলে গেছে তার কণ্যাদের।
মুক্ত অপ্রত্যাশিত শিয়াল মাঝমাঠ অতিক্রম করে যাচ্ছে।
আর এ বিষয়ে কোনো আগ্রহই নেই গাছের ডালপালাদের।
আস্তরে ডুবে যাচ্ছে ফার্মটির ছাদ, যেন দেখাচ্ছে তিমির মতো।
ভেড়া হয়ে যাচ্ছে ম্লান বিনীত। এর মধ্যেই
প্রথম চেঁচিয়ে উঠলো পেঁচা, বন্দীর শর্ত ভঙ্গের মতো, তুষার কণার
ঘন শুভ্রতায়।
(৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫)
অর্ফ (ক্ষুরা)
কারন তার নাকে মুখে ছিল পঁচা ঘা
মাসের পর মাস, কোনো চিকিৎসাই কাজে লাগে নি,
এবং তার চার পা-য়েও ছিল একই রকম ঘা,
কোনোভাবে শুধু দাঁড়াতে পারতো, এর বেশি না,
অসুস্থতা তার বেড়ে-ওঠাকে বদলে দিয়ে অবলীলায়
অসুস্থতাকেই বাড়িয়ে দিচ্ছিলো
যখন তার মুখোশ ভেদ করে শ্বাস প্রশ্বাসের ঘরঘর আওয়াজ হচ্ছিলো
যখন কোনো পদার্থে-ই যেন থামছিলো না
বাছুরটিকে গুলি করি তখন।
সে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল আর আমি গুলি করি।
দুই কানের মাঝ বরাবর করি।
মাটিতে পড়ে যায় সে।
শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আপনাআপনি স্থির হয়ে যায় ধীরে
আর রক্ত বেরিয়ে আসে, নিঃশেষ।
কিন্তু ওর আত্মা যা আমার তত্ত্বাবধানে ছিল
উঠে আসে, যেখানে পড়ে ছিল তার শরীর, সেখান থেকে উঠে এসে দাঁড়ায় আমার সামনে
মুক্তি চায়,
নির্বাপিত হওয়ার অনুমতি চায়,
অনুমতি চায় অন্তত, একটু অপেক্ষার,
যতক্ষণ না আমার মাথার ভেতর
তেজষ্ক্রিয় এক স্থান
যেখান থেকে পতিত উল্কা সরিয়ে নেয় ওর শরীর।
(৩রা জুলাই ১৯৭৬)
ছবি সূত্র : ইন্টারনেট। ২য় ছবিতে সিলভিয়া ও টেড। ৩য় ছবিতে টেড আসিয়া আর তাদের মেয়ে। ৪র্থ ছবিতে ক্যারল এবং টেড।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪১