somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পল সেলানের কবিতা

১৩ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কবি পরিচিতি
পল সেলান ছিলেন জর্মন ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদের মধ্যে অন্যতম। বলা হয়ে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রধান ইউরোপীয় কবি তিনি। জন্মেছিলেন ১৯২০ সালের ২৩শে নভেম্বর জার্মান অধিকৃত রোমানিয়ার বুকোভোনিয়ার এক ইহুদি পরিবারে। যুদ্ধের সময় বুকোভোনিয়া নাৎসি বাহিনীর দ্বারা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। যদিও সেই গণহত্যায় তাঁর মা-বাবা দু’জনকেই হত্যা করা হয়েছিল, তিনি কোনোভাবে পালিয়ে আসতে পেরেছিলেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি প্যারিসে কাটান। প্যারিসে বসেই তিনি তাঁর আশ্চর্য্য কবিতাগুলো লিখতে থাকেন। অনুবাদ করেন রিমবাউন্ড, শেক্সপিয়র, এমিলি ডিকসন, ব্লক আর ম্যান্ডেলস্টাম সহ আরো অনেককে। ১৯৫২ সালে জার্মানিতে তাঁর প্রথম কবিতার বই প্রকাশের পর খুব দ্রুত খ্যাতি ছড়িয়ে পরে চারদিকে।

যদিও তিনি ইংরেজি, ফরাসি, রোমানিয় সহ পৃথিবীর অন্য অনেক ভাষাই জানতেন, কিন্তু কবিতা লিখতেন জর্মন ভাষায়। তিনি তাঁর মায়ের হত্যাকারীদের ভাষায় লিখে গেছেন। যেখানে নাৎসিদের কোনো অস্তিত্ব থাকতে পারে না। তিনি এক নতুন জর্মন লিখেছেন। আশ্চর্য্য তাঁর ভাষা, অদ্ভুত তাঁর শব্দবন্ধন। তিনি কবিতা লিখেছেন তাঁর অভিজ্ঞতার আলোয়, ব্যতিক্রমী ভাষাগত ঔজ্জ্বল্য আর তীব্রতায়। তাঁর কবিতা মন্ত্রমুগ্ধ আর রহস্যময়। শুধু অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞানই নয়, তাঁর কবিতায় আছে গভীর জীবনবোধ।

সেলান বলেছিলেন, যুদ্ধের পর একমাত্র ভাষাই ছিল তাঁর কাছে অকৃত্রিম। যুদ্ধের বছরগুলোর ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আর তাঁর পিতামাতার মৃত্যু বারবার ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর কবিতায়। শেষ দিকে এই ভার আর সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। আর, মাত্র ৪৯ বছর বয়সে প্যারিসের শ্যেন নদীর ব্রীজ থেকে লাফিয়ে পানিতে ডুবে আত্মহত্যা করেন। দিনটি ছিল ১৯৭০ সালের ২০শে এপ্রিল।

বাংলায় সেলান অনুবাদ করা খুব কঠিন (প্রায় অসম্ভব বলা চলে)। কিছুদিন আগে কবি আইলিয়া কামিনস্কির একটি সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম। তিনি বলছিলেন, কবিতার অনুবাদ পুরোপুরি কখনোই সম্ভব নয়। আমরা কেবল চেষ্টা করে যেতে পারি কাছাকাছি পৌঁছানোর। এইখানে সেই চেষ্টাটাই করতে চেয়েছি।

কবিতা
জর্মন থেকে বাংলা অনুবাদ : ঋতো আহমেদ

কূপ-খননকারী

বাতাসে কূপ-খননকারী:

কেউ একজন বেহালা বাজাবে, নীচের দিকে, সুরিখানায়,
কেউ ভাববে যথেষ্ট হয়েছে,
কেউ আবার ক্রস-পায়ে দরজায় ঝুলে থাকবে, পুষ্পলতার পাশে।

বছরটি
তেমন গর্জায় না,
ছুটে যায় পেছনে নভেম্বরে, ডিসেম্বরে,
বদলে দেয় নিজস্ব ক্ষতের মাটি,
উন্মুক্ত হয় তোমার কাছে, নতুন
কবর-
কূপ,
বারোমুখী।


উল্লিখিত বছর

বছরটি উল্লিখিত
তার ভ্রমাত্মক রুটির
কঠিন ছাঁচাবরণ নিয়ে।

পান করো
আমার মুখ থেকে।


অস্পষ্টতা

এই পৃথিবীর
অস্পষ্টতা। সব কিছুই দুইবার।

শক্ত ঘড়িটি বিভক্ত সময়ের
ন্যায্যতা প্রতিপাদন করে,
কর্কশভাবে। আর

তুমি, আপন
গভীরতম অংশে অটুট থেকে,
বেরিয়ে আসো নিজের থেকে
চিরতরে।


বিভ্রান্ত অন্যসময়

বিভ্রান্ত অন্যসময়। আর অমরতা
সমস্ত কিনারা ঘিরে জাগায় হল্লা, রক্তকালো।

কাদা-মোড়া
দোআঁশ তোমার আটকে ফ্যালে
আমার বিশ্বাসকে। আর

দুটি আঙুল, এক হাত থেকে অনেক দূরে,
বিলুয়া ব্রতের দিকে বয়ে নেয় ওদের
পথ।


শুনেছি কুড়ালটি ফুলেছে

শুনেছি কুড়ালটি ফুলেছে,
শুনেছি জায়গাটির নামকরণ করা যায় না,

শুনেছি তার দিকে তাকানো রুটি
ফাঁসিতে ঝোলানো মানুষটিকেও চাঙা করে তোলে,
যা তার স্ত্রী বানিয়েছিলেন তার জন্য,

শুনেছি তারা বলছেন জীবনই
আমাদের একমাত্র শরণ।


মেঠোইঁদুরের স্বরে

মেঠোইঁদুরের মতো
আমার কাছে চিঁ-চিঁ শব্দ করো তুমি,

একটি ধারালো
ক্লিপ,
কামড়ে পথ করে নাও শার্ট ভেদ করে আমার চামড়ায়,

এক টুকরো কাপড়,
আমার মুখের উপর দিয়ে টেনে নাও
মাঝপথে তোমকে উদ্দেশ্য করে বলা
আমার কথাগুলো, ছায়া,
তোমারই ওজন বাড়াতে।


হৃদয়ে তোলপাড় করা বিশ্ব

হৃদয়ে তোলপাড় করা বিশ্ব
যেখানে
অতিথি হয়ে থাকবো আমি, যেন দেয়াল
থেকে নামিয়ে দেয়া এক নাম
চুষে নেয়া এক ক্ষত।


জানুয়ারি কেটেছে

জানুয়ারি কেটেছে
কাটা-আচ্ছাদিত পাথরের
খাঁজে। (মাতাল হও
আর এর নাম দাও
প্যারিস।)

বরফে-সিল-হওয়া আমার কাঁধ;
নীরব
ধ্বংসস্তূপের পেঁচা এখানে আসন গেড়েছে; আর
আমার পায়ের আঙ্গুলের মধ্যে চিঠি;
নিশ্চয়তা।


শিঙা

জ্বলজ্বলে ফাঁকের
গভীরে
শিঙা
যেন বাতির উচ্চতায়
সময় বিবরে:

নিজের কথা শোনো
তোমারই মুখে।


সে সমস্ত ঘুমেরা

সে সমস্ত ঘুমেরা আকৃতি পায়, স্বচ্ছ,
যা তুমি অনুমান করেছিলে
ছায়ার ভাষায়,

সেই দিকে
যেখানে প্রবাহিত করি আমার রক্ত,

সেই রেখাচিত্রগুলো, যাদের
আশ্রয় দেব
আমার জ্ঞান
চেরা-ধমনীতে—,

আমার দুঃখ, আমি দেখতে পাচ্ছি,
চলে যাচ্ছে তোমার কাছে।

সূত্র: নির্বাচিত কবিতা/পল সেলান/বাংলা অনুবাদ: ঋতো আহমেদ।
ছবি সূত্র: ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:১৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×