বন্ধু ফ্রান্সে নতুন এসেছে, আইফেল টাওয়ার দেখেনি।তো তাকে নিয়ে চলে গেলাম টাওয়ার দেখতে।সেইন নদীর ওপারে টাওয়ারের উল্টোদিকে 'ট্রকাডিরো' থেকে টাওয়ারকে সাথে নিয়ে সবচেয়ে ভালো ছবি তোলা যায় সেজন্য সেখানে গেলাম ছবি তুলতে।
টাওয়ারের সাথে অনেক ছবি অলরেডি তোলা আছে এবং গরম(বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বোধহয় আজই) এই দুই কারনে বন্ধুকে 'সেল্ফি নিতে থাক' বলে একটি দেয়ালের ছায়ায় বসে আছি।
হঠাৎ দেখলাম আমার সামনে এক ভদ্রলোক মাথা নিচু করে এক অদ্ভুত ভঙিতে এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছেন।স্যুট কোট পরা এক যুবক যদি এটিএম শামসুজ্জামানের মুরগি চোর কারেক্টারের মতো আচরণ করে তাহলে তো তার উপর নজর পড়বেই।
অদূরে দাড়ানো তিনজন পুলিশের একজনকে ভদ্রলোকের দিকে চেয়ে হালকা হাসতে দেখলাম। স্যূট কোট পড়া ভদ্রলোকটির হাতে ফুল এবং তার সাথে বেতের ঝুরি হাতে এক বন্ধুকে দেখে বুঝলাম ভদ্রলোক কাওকে সারপ্রাইজ দিতে চলেছেন। এবং অনুমান করলাম তিনি কাওকে প্রপোজ করতে চলেছেন।
এটা অনুধাবন করার সাথে সাথেই পুরো পরিবেশটা রোমান্টিক হয়ে উঠলো❤। আরো অনেকেই আমার মতো বিষয়টা ধরতে পেরেছে এবং মুচকি হাসছে।অদূরে এক কপোতীকে তার কপোতের দিকে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইতে দেখলাম,জবাবে ছেলেটা ছ্যাবলার মতো হাসলো।
তো সেই স্যুট কোট ছেলেটি আড়াল খোজতে খোজতে একেবারে আমার পাশে এসে দাড়ালো, পেছনে বেতের ঝুড়ি হাতে তার বন্ধু, ঝুরির ভেতর শ্যাম্পেইনের অস্থিত্ব দেখতে পাচ্ছি.অনেকগুলো চকলেট আর র্যাপিং পেপারে মোড়ানো দুয়েকটা বক্স জাতীয় কিছুও আছে।
তো ছেলেটার বন্ধু কাকে যেন কল দিয়ে ফরাসি'তে জিজ্ঞেস করলো "তোমরা কোথায়?... আমরা পজিশন নিয়ে আছি... তাড়াতাড়ি চলে এসো"।
ধারণা করলাম ফোনের অপরপ্রান্তে যে আছে সে হয়তো মেয়েটার সাথে আছে এবং মেয়েটাকে নিয়ে এদিকে আসছে।
একে-তো গরম তার উপর এক্সাইটমেন্ট এদিকে আবার কোট টাই পড়ে আছে, এজন্য ছেলেটার গাল বেয়ে ঘাম ঝরঝর করে পরছে।আমিও সমান এক্সাইটেড, কখন আসবে মাহেন্দ্রক্ষণ।
আমাদেরকে আর বেশী সময় অপেক্ষা করতে হলোনা,সিড়ি বেয়ে উঠতে থাকা দুই তরুণীর দিকে ছেলেটা আর তার বন্ধুকে চেয়ে থাকতে দেখে বুঝলাম এদের একজনকেই আজ প্রপোজ করা হবে,দুজনের মধ্যে কে হতে পারে তা বুঝা সহজ হলো ব্লন্ড চুলের মেয়েটাকে দুষ্টু হাসি হাসতে দেখে, বুঝলাম আজকের এই নাটকের নায়িকা সে নয়, নায়িকা হচ্ছে তার পাশের মেয়েটা৷ সোনালী চুলের মাঝে সূর্যের আলো পরায় যাকে এক জ্বলন্ত সূর্যের মতো লাগছে,চোখে কালো চশমা পড়া সে বেচারি জানেই না কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটতে যাচ্ছে তার জীবনের অন্যতম স্বরণীয় ঘটনা। এই ভূখণ্ডের মেয়েরা যে কত স্বপ্ন বুনে এই মূহুর্ত নিয়ে।
তো সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে যেখানে ছবি তুলার জন্য বেশী ভীড় হয় সেই দিকে মেয়ে দু'টি এগোচ্ছিলো, ব্লন্ড মেয়েটা কৌশলে চশমা কন্যার পাশ থেকে সরে আসলো, একইসাথে স্যুট টাই ছেলেটাও একবার বন্ধুর দিকে চেয়ে পরক্ষণেই চশমা কন্যার দিকে অগ্রসর হলো।
মনেহয় ব্লন্ড মেয়েটাকে পাশে দেখতে না পেয়ে খুজতে গিয়েই চশমা কন্যা তার পেছন ফিরে একবার তাকালো,কিন্তু সেখানে ব্লন্ড মেয়েটা নাই, তার জায়গায় স্যুট টাই ছেলেটা দাড়িয়ে।ছেলেটাকে দেখেই মেয়েটা মেয়েদের স্বভাবসুলভ মুখ হা করে দুই গালে হাত দেয়া কার্যটি সম্পাদন করলো যা মেয়েরা অবাক হলে পরে করে, সারপ্রাইজের যে এখানেই শেষ নয় তা বুঝাতে ছেলেটি তার এক হাটু মাটিতে রেখে পকেট থেকে আংটি বের করে মেয়েটির দিকে বাড়িয়ে ধরলো।
আশপাশের আমরা যারা পুরো ব্যপারটি খেয়াল করছিলাম সবাই সমস্বরে 'দি উই' (Dis Oui) অর্থাৎ Say Yes বলতে লাগলাম।মেয়েটা তখনও সারপ্রাইজের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি, দর্শকদের মুহুর্মুহু Say yes... Say yes শুনেই মনেহয় বাস্তবে ফিরে এলো, এবং হ্যা সূচক মাথা নাড়লো,ছেলেটি আংটি মেয়েটির হাতে পড়িয়ে প্রপোজের বাকি রিচুয়াল গুলো পুরো করলো, মানে উঠে দাড়ালো...একটু চুমাচুমি করলো।সবাই হাততালি দিয়ে এই মধুর মূহুর্তটাকে স্বাগত জানালাম।
ততক্ষণে মেয়েটা চশমা খুলে ফেলায় তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে দেখলাম,বুঝলাম এ কান্না আনন্দের, তৃপ্তির, বহুল আকাংকিত কোনকিছু পাওয়ার৷ ছেলেটা পকেট থেকে রুমাল বের করে পানি মুছে দিলো। আহা! কি রোমান্টিক দৃশ্য।
ততক্ষণে বন্ধুর ফটোসেশান শেষ। এসে বললো চল যাই৷ আমিও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম "হ্যা চল"৷ সিংগেলদের এইধরনের রোমান্টিক দৃশ্য খুব বেশী দেখতে নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৪৮